বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও পিএইচপি পরিবারের অবদান

বরেণ্য শিক্ষাবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা, শিল্পপতি ও সমাজসেবক আলহাজ সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের একটি কথা আমার সবসময় মনে পড়ে। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘এদেশ শুধু সোনার বাংলা নয়, এদেশ হীরার বাংলাও বটে’। তিনি এদেশের মাটিকে হীরার চেয়েও মূল্যবান মনে করেন। তিনি নিজেই উত্তরবঙ্গের ফসলি জমিতে চাষ করে আলুর বাম্পার ফলনের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে তাঁর এ কথার সত্যতা প্রমাণ করেছেন। তিনি নিবেদিতপ্রাণ একজন দেশগড়ার কর্মী হিসেবে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইউআইটিএস-এ আমি ও আমার বন্ধু অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন গত ২০১০ সালে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর এ বিরাট অবদানকে অত্যন্ত কৃতজ্ঞচিত্তে অনুধাবন করেছি। ইউআইটিএস-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পিএইচপি চেয়ারম্যানের স্বাগত ভাষণে বলেন, বাংলাদেশে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা সংস্কৃতিচর্চার ওপর গুরুত্ব এবং দেশে জ্ঞানের আলো ছড়াতে তাঁর হৃদয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভূত হয়। যেহেতু ‘নলেজ ইজ পাওয়ার’ সেহেতু তিনি জ্ঞান অর্জনের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। দীর্ঘদিন যাবত পিএইচপি পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন আইনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও দেখাশোনাকালে শ্রদ্ধেয় মিজান স্যার যিনি স্নেহবশত আমাকে কখনো কাকু, কখনো বাবা বলে সম্বোধন করেন। তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞ ও অবদান সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়।
সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান (জন্ম ১২ মার্চ ১৯৪৩) একজন বাংলাদেশি শিল্পপতি এবং সমাজসেবক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। মিজানুর রহমান ১৯৪৩ সালের ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের কাঞ্চন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সুফি মুহাম্মদ দায়েম উদ্দিন এবং মাতা রাহাতুন নেসা। স্থানীয় ভারত চন্দ্র বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৩ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তোলারাম কলেজ থেকে বিকম ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজটি সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। পরে তিনি ব্যাংকিং বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।
মিজানুর রহমান কর্মজীবনের শুরুতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে নারায়ণগঞ্জের জালাল জুট ভ্যালি কোম্পানিতে ১০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের (বর্তমান সোনালী ব্যাংক লিমিটেড) চট্টগ্রামের লালদীঘি শাখায় জুনিয়র ক্লার্ক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় ৮০০ টাকা বেতনে তৎকালীন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমান পূবালী ব্যাংক লিমিটেড) বৈদেশিক বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর মিজানুর রহমান ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে পণ্য আমদানি করে দেশীয় বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কাজ শুরু করলেও পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে পুরনো জাহাজের আসবাবপত্র বিক্রি করা হতো। ১৯৮২ সালে রি-রোলিং মিল এবং ১৯৮৪ সালে ‘মংলা ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়ার্কস’ নামে দেশের প্রথম বিলেট তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে ঢাকাতে ‘পিএইচপি রানী মার্কা ঢেউটিন’ নামে একটি ঢেউটিন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আরও বিভিন্ন খাতে বিনোয়োগ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি সকল প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের অধীনে নিয়ে আসেন। বর্তমানে গ্রুপটির অধীনে ২৯টির বেশি কোম্পানি রয়েছে।
মিজানুর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে তাহমিনা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ৭ ছেলে ও ১ মেয়ে। ২০০০ সালে তিনি রোটারি ইন্টারন্যাশনালে যোগদান করেন। ২০১৬ থেকে ২০১৭ মেয়াদে তিনি রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮২ বাংলাদেশের গভর্নর ছিলেন। তিনি রোটারি ইন্টারন্যাশনালের ‘আর্চ ক্লাম্প সোসাইটি মেম্বার’। তিনি এবং তার স্ত্রী রোটারিতে এমমাত্র ‘কাপল আর্চ ক্লাম্প সোসাইটি মেম্বার’। এছাড়াও তিনি দেশ গজলের সংস্কৃতিকে বা সুফিবাদকে উৎসাহিত করতে ভূমিকা পালন করেন।
মিজানুর রহমান শিক্ষা খাত উন্নয়নসহ সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার অবদান রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও ঢাকার কাঞ্চননগর গ্রামে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ) এর যাবতীয় কর্মকাণ্ডে তাঁর ও তাঁর সন্তানদের পৃষ্ঠপোষকতা আন্তরিক সহযোগিতা প্রণিধানযোগ্য। যেকোনো জনহিতকর ও মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের অবদান অতুলনীয়। বিশেষ করে তাঁর সহধর্মিণী তাহমিনা রহমান ও পুত্রগণ যথাক্রমে মহসিন, আলী হোসেন, আনোয়ার প্রমুখের অসাধারণ আন্তরিকতা ও বিনয়ী স্বভাবের প্রতি আকৃষ্ট হই। একজন শিল্পপতি কীভাবে তাঁর প্রতিটি সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন তা ভাবতেই অবাক লাগে। সফল মাতা-পিতা হিসেবে তাদের নাম প্রণিধানযোগ্য। তাঁরা তাদের প্রতিটি সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ ও আদব শিখিয়ে সমাজের জন্য বিরাট এক অবদান রাখেন। তাদের ৭ পুত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা যথাক্রমে- মো. মহসিন বিবিএ, নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন, ইউএসএ; মো. ইকবাল হোসাইন, বিবিএ নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন, ইউএসএ; ইঞ্জিনিয়ার মো. আনোয়ারুল হক বিএসসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার, নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন, ইউএসএ; মো. আলী হোসাইন (সোহাগ), ব্যাচেলার অব ম্যানেজমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়া; মো. আমির হোসাইন, ব্যাচেলার অব বিজনেস কমিউনিকেশান, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়া; মো. জহিরুল ইসলাম, ব্যাচেলার অব ইনফরমেশান টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়া; মো. আক্তার পারভেজ, ব্যাচেলার অব বিজনেস কমিউনিকেশান, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়া।
পিএইচপি পরিবার এদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত অল্প খরচে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের (বৃত্তি)সহ অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছে। তাঁর শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের বার্ষিক আয়ের বিরাট একটি অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি দান করে আসছেন। ২০১৪ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ এবং আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সহায়তাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিএইচপি পরিবারের পক্ষ থেকে নিয়মিত ও এককালীন অনুদান প্রদান করা হয়। চট্টগ্রামের হালিশহর জেলা পুলিশ লাইনসে 'শহীদ এস পি এম শামসুল হক বিদ্যানিকেতন’ নামের বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ নির্মাণ ব্যয় নির্বাহ করা হয় পিএইচপি পরিবারের পক্ষ থেকে; যেখানে শত শত শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে পিএইচপি পরিবারের সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে বাংলাদেশে একটি মানসম্মত আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। পিএইচপি চেয়ারম্যানের আন্তরিক ইচ্ছা ও উদ্যোগে বিপুল অর্থব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউআইইএস ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশান টেকনোলজি অ্যান্ড সাইন্স। ২০০৩-২০১৭ পর্যন্ত পিএইচপি ফ্যামিলি এ প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে। ঢাকায় বারিধারা জে ব্লকে ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি ক্রয় এবং ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে আমি নিজে এবং চট্টগ্রামের বিশিষ্ট মানবাধিকার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এলএলএম ডিগ্রি লাভের সুযোগ পাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক, বিচারকদের মাধ্যমে আইন অনুষদের পাঠদান কার্যক্রম অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং মানসম্মত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিবিএ; এমবিএ ইংরেজির সাহিত্য প্রভৃতি প্রোগ্রাম দক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো দুটি স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য বিলম্ব হচ্ছে। সরকার কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ৫% স্কলারশিপ প্রদানের বিধান থাকলেও ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষ এখানে ১১% পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে, যা দেশের জন্য একটি ভালো দৃষ্টান্ত। পিএইচপি ফ্যামিলির সকল সদস্যের জন্য পাঠদানের খরচ সম্পূর্ণ ফ্রি এবং স্টাফ ও তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য পাঠদান ৫০% ফ্রি। প্রতিবছর এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। এর থেকে বোঝা যায় যে, পিএইচপি পরিবারের বার্ষিক আয়ের একটি বিরাট অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যয় হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইউআইটিএস-এর সাবেক প্রোভিসি বর্তমান অ্যাডভাইজার শ্রদ্ধেয় প্রফেসর সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নব্বই দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার নীতিমালা ও কৌশলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। আমরা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যতিব্যস্ত ছিলাম, তারা ১৯৯০ সালে দাঁড়িয়ে ভাবতে পারিনি বেসরকারি উদ্যোগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত মূল ধারণাই ছিল সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্ভর। ইউজিসির তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি আন্তর্জাতিক ও ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যার ৮৫টি কার্যক্রম পরিচালিত করছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মানববিদ্যার সকল শাখা নিয়ে বাংলাদেশের উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থায় ১৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রাকালে এর উদ্যোক্তাগণ ল্যাটিন আমেরিকান ও আমেরিকান ধাঁচের শিক্ষাপদ্ধতি অবলম্বনে এক ধরনের বাণিজ্য কাম উচ্চশিক্ষার ধারণা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু বিশ শতকের শুরুতে এর আংশিক সফলতার চেহারা দৃশ্যমান হলেও একপর্যায়ে শিক্ষার বাণিজ্যই প্রাধান্য লাভ করতে থাকে। মূলত সমস্যা ছিল অন্যত্র। আর তা হলো, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম সমুন্নত রাখার জন্য যে মানের একাডেমিক ও সাধারণ প্রশাসনের প্রয়োজন পড়ে, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তাগণ অপারগ হয়েছেন। সরকার ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ প্রবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মানের মৌলিক এসব বিষয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সচেতন হতে থাকেন। সরকারের যৌক্তিক ও আন্তরিক উদ্যোগের ফলে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল উদ্যোক্তাই প্রকৃত মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সম্প্রতি অনেকটাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তা জগতের সুপরিচিত নাম পিএইচপি ফ্যামিলি ও এর কর্ণধার আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য সহনীয় খরচে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার মানসে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস' (ইউআইটিএস)। Future will be better than the Past- এই ঐশী বাণীকে ধারণ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। অপরপক্ষে 'নীরবে করো জাতির সেবা' এই স্লোগানে সমৃদ্ধ পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রি একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ অপরদিকে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। এর ফলশ্রুতিতে এই শিল্প পরিবারটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য মূল্যবান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আলোচিত এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইউআইটিএস’। ১৬টি প্রোগ্রামে গত প্রায় ১৫ বছরে ১৬ হাজার গ্র্যাজুয়েট সফলতার সঙ্গে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে দেশ-বিদেশে মর্যাদাপূর্ণ কর্মজীবনে আত্মনিয়োগ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ জন ইউআইটিএস গ্র্যাজুয়েট, আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করছেন। দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক সংকট প্রকট। স্বয়ং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ সংকট বিদ্যমান। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষক অর্ধেকের কম, খণ্ডকালীনই বেশি। সরকারের বিদ্যমান আইনে পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যা যদিও ৭৫ শতাংশ থাকা আবশ্যক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনীহা ও যোগ্য শিক্ষক সংকটের কারণে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই সে মানে উপনীত হতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে ইউআইটিএস একটি ব্যতিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ ভাগ শিক্ষক পূর্ণকালীন এবং দেশ-বিদেশের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এখানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। গুলশান-বারিধারার মতো একটি জায়গায় ষোলো তলা ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর কোথাও কোনো শাখা ক্যাম্পাস নেই। বারিধারার ভাটারায় ১০৪ কাঠা নিজস্ব জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে দুটি ব্লকে বিশাল নয়তলা ভবন। আশা করা যায়, এ বছরের শেষ নাগাদ বেশ কিছু বিভাগ ও প্রশাসনিক শাখা নতুন ভবনে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। ইতোমধ্যে ফার্মেসি, সিভিল ও সমাজকর্ম বিভাগের আংশিক কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান নিজ জীবন, নিজ পরিবার ও নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে মানসম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন, ইউআইটিএস-ও এই কোয়ালিটি দর্শনের বাইরে যেতে দেননি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন মহাসাধক ও লেখাপড়া জানা পণ্ডিত মানুষ। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। তাঁর সাত ছেলে এক মেয়ে দেশে ও বিদেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ইউআইটিএস-এর প্রতিটি নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তিনি যে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন, তা এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে রেকর্ড হয়ে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা গভীর মনোনিবেশ ও আগ্রহ নিয়ে এসব আলোচনা হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করেন। নিজেকে চেনা, নিজের অন্তর্নিহিত মহাশক্তিকে আবিষ্কার করা এবং কঠোর সাধনার পথ বেছে নিয়ে মানুষকে ভালোবাসা এবং অনেক কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা, ধর্মের একনিষ্ঠ ও শান্তিময় চর্চার মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য অক্ষুণ্ণ রাখা তার জীবন দর্শনের মর্মকথা। ছাত্রছাত্রীদেরকে উন্নত মানুষের স্বপ্ন ধারণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সমাবর্তনে যথাক্রমে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আব্দুল কালাম ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মাহাথির বিন মুহাম্মদকে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী তৃতীয় সমাবর্তনেও পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ মনীষীকে আমন্ত্রণ জানাবেন। তিনি মনে করেন, বিল গেটস-এর মতো প্রযুক্তি বিজ্ঞানীরা ইউআইটিএস-এ এসে একদিন সমাবর্তনে বক্তব্য রাখবেন। এই মহামানবদের আমাদের সন্তানদের সামনে এনে তাদের মধ্যে বড় হওয়ার স্বপ্ন জাগিয়ে দেন শ্রদ্ধেয় মিজানুর রহমান। তিনটি অনুষদ ও দশটি বিভাগ নিয়ে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উন্নতমানের ২৭টি ল্যাবরেটরি। ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকগণ সতর্ক ও সচেতন থাকেন যেন থিওরিটিক্যাল ক্লাস শেষ হওয়ার পর পরই শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলো উপভোগ করতে পারেন। প্রায় প্রতি সেমিস্টারের বিভাগভিত্তিক বাস্তব চাহিদা মোতাবেক বই ক্রয় করা হয়।
২০১১ সালে ইউআইটিএস-এ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে UITS Research Centre নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র। এ পর্যন্ত ৯টি জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে এ কেন্দ্র থেকে, যার প্রতিটি প্রবন্ধই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামিদামি শিক্ষক ও গবেষক দ্বারা রিভিউকৃত।
এ ছাড়া এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিতভাবে প্রতি সেমিস্টারে প্রকাশিত হয় ইউআইটিএস-এর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-গবেষকগণের শিক্ষা সহায়ক বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের সচিত্র প্রতিবেদন, আবিষ্কার ও বিভিন্ন মাত্রিক অর্জন। এ কেন্দ্র থেকে জ্ঞান-গবেষণার বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ ও অনুবাদের পরিকল্পনাও রয়েছে কর্তৃপক্ষের। বছর ও সেমিস্টারভিত্তিক আয়োজন করা হয়ে থাকে বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপ। প্রত্যেক চূড়ান্ত বর্ষের ছেলে-মেয়েরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ বিশেষজ্ঞগণের উপস্থিতিতে তাদের টার্ম পেপার ও ইন্টার্নশিপ থিসিস ডিফেন্স করে থাকেন। ইউআইটিএস-এর মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ে ৮টি জাতীয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১২ সালে Basis Soft Expo Android Global Place API implementation using GPS Geolocation এবং ২০১৭ সালে Brackathon II প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
Developing real life endroide application অ্যাপস ডিজাইন করে হযরত
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার
গৌরব অর্জন করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২০১০ সালের আইন ও
বিধি-বিধান প্রতিপালনে ইউআইটিএস শুরু থেকেই অত্যন্ত আন্তরিক ও সচেষ্ট
থেকেছে। এখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে অনুসরণ করা হয় ইউজিসি
নির্দেশিত নীতিমালা। ইতোমধ্যেই সকলের জন্য প্রণীত একটি যৌক্তিক বেতন
কাঠামো ও ট্রাভেল পলিসি প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে প্রেরণ করা
হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ সংবিধি প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রতিষ্ঠার পর
থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গত প্রায় পনের বছরে চারজন নিয়মিত উপাচার্য, দু'জন উপ-
উপাচার্য ও একজন কোষাধ্যক্ষ সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
ইউআইটিএস-এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উপদেষ্টা ও
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.
মো. কায়কোবাদ এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান
করছেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো.
মাযহারুল হক। এ ছাড়া ফার্মেসি বিভাগে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. শীতেশ চন্দ্র বাছার। এ
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকগণকে দেশ-বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, গৃহীত পরিকল্পনায় আগামী সাত বছরের মধ্যে ইউআইটিএস-এর অধিকাংশ শিক্ষক এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখায় অবদান রাখতে
সক্ষম হবেন। বর্তমানে ইউআইটিএস-এ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন
কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত হেকেপ প্রকল্পের ওপর কাজ চলছে। উন্নত ও বিশ্বমানের শিক্ষা
নিশ্চিত করার এ প্রকল্পে ইউজিসি ইতোমধ্যেই বায়ান্ন লক্ষ টাকা ছাড় দিয়েছে এবং
আরো প্রায় দেড় কোটি টাকা এ প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ইউআইটিএস-এ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে University online management
সফটওয়্যার সংযুক্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে এডুসফ্ট কনসালটেন্ট লিমিটেড নামে একটি
আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোলায়মান স্যার আশা করেন, ইউজিসি ও
সরকার প্রদত্ত এই উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প ইউআইটিএস সফলতার সাথে
বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। বোর্ড অব ট্রাস্টি এর
চেয়ারম্যান ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মনে করেন, আগামী বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইউআইটিএস হবে একটি অনুসরণীয় নাম। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সকল প্রকার ড্রাগ, ইভটিজিং, সন্ত্রাস ও নকল মুক্ত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ইউআইটিএস পরীক্ষা পদ্ধতি স্বচ্ছতার জন্য মহানগরী সাংস্কৃতিক ফোরাম কর্তৃক শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার অর্জন করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একদিন বিশ্বমানের উন্নত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবে। গান-গজল, হামদ, নাত, কাওয়ালি, ছেমা প্রভৃতি চর্চার মাধ্যমে আমাদের শতসহস্র বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চিরঞ্জীব শাশ্বত ধারায় ফিরিয়ে আনতে পিএইচপি চেয়ারম্যানের অবদান অতুলনীয়। এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পি এইচ পি পরিবারের পদচারণা ও অবদান প্রশংসনীয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পীর আউলিয়া সুফি সাধকদের নিয়ে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য গান কাব্য পুঁথি প্রভৃতি সংগ্রহ পূর্বক তা গ্রন্থনা করে বিরাট অবদান রাখছেন শ্রদ্ধেয় পি.এইচ.পি চেয়ারম্যান। বিশেষ করে মাইজভান্ডারী গানের রাজা রমেশ শীলের হারিয়ে যাওয়া বিপুল গানের সংকলনের পদক্ষেপ নেন। এছাড়াও আঞ্চলিক গানের রাজা চট্টল গৌরব আব্দুল গফুর হালির স্বরলিপিসহ গীতিকাব্য এবং চাটগাইয়া নাটকসমগ্র প্রকাশ করে দেন। বর্তমানে গফুর হালির নাটক নিয়ে আর্ট ফ্লিমের কাজ চলছে। চাটগাইয়া ভাষার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় ও পুনরুজ্জীবনে পি এইচ পি ফ্যামিলির অবদান অতুলনীয়। পি এইচ পি চেয়ারম্যানের দুই পুত্র যথাক্রমে মহসিন চৌধুরী এবং আনোয়ার চৌধুরী এ ব্যাপারে যুগপৎ ভূমিকা রাখছেন।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা কোরআনের বুলবুলিগুলোকে খুঁজে বের করে তাদেরকে দেশি বিদেশি প্রতিযোগিতায় উপস্থাপনের সুযোগ করে দেন পি এইচ পি কোরআনের আলো নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এতে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কোরআনের আলো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা যাচাইয়ের সুযোগ এবং বিদেশের মাটিতে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করছেন। পিএইচপি চেয়ারম্যান মহোদয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিটি সন্তান শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে আসছেন। মুসলিম সংগীত চর্চার সোনালি ইতিহাস রচনা ও ধর্মান্ধতা মুক্ত নির্দোষ সংস্কৃতি চর্চায় তাদের অবদান অতুলনীয়। ইসলামি তাহাজ্জীব তামাদ্দুন ও সংস্কৃতিকে সম্মুন্নত রাখতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আল মোক্কাদাস অ্যালবাম। ইসলামি ঐতিহ্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক পবিত্র স্থাপনা ও দুর্লভ নিদর্শনাবলীর বর্ণনা সম্বলিত আকর্ষণীয় চিত্র সম্ভারের সমাহারের এই অ্যালবাম। সুফিবাদ ও সুফি চর্চা এর প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ দূরীকরণে তাঁর অবদান অতুলনীয়। কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতি ও এর শিক্ষা নিয়ে পরিচালিত অনুষ্ঠানে মিজান সাহেবের পৃষ্ঠপোষকতা তুলনাবিহীন।
তিনি নিজেও কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ সাধনা, নিয়মিত নফল রোজা, জিকির আসকারের মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন। সবসময় তাঁর মুখে শেখ সাদী (রা.), রুমি প্রমুখ মহামনীষীদের অমিয়বাণী শুনতে পাই। অত্যন্ত বিনয়ী নিরহংকারী মানুষটি বন্যাদুর্গতদের এবং দুস্থ মানুষদের অসহায় পুনর্বাসনেও তার ব্যাপক অবদান রাখছেন।
বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মানবপ্রেমী মানুষ আলহাজ মিজানুর রহমান ও তৎ পরিচালিত পিএইচপি ফ্যামিলির অবদান ব্যাপক ও প্রণিধানযোগ্য।
তিনি বিভিন্ন সময় সম্মাননা পেয়েছিলেন, দ্য ডেইলি স্টার অ্যান্ড ডিএইচএল বেস্ট বিজনেস অ্যাওয়ার্ড (২০০৩), ব্যাংক বীমা অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), ব্যাংক বীমা অর্থনীতি অ্যাওয়ার্ড (২০০৯, ২০১১), বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার অনারারি কনসাল (২০১৮), তিনি বিভিন্ন সময় সম্মাননা পেয়েছিলেন, একুশে পদক (২০২০) মহান পরওয়ারদিগার আল্লাহ্ সুবাহানুতায়ালা তাঁকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে হেফাজত করুন, ইহকাল ও পরকালের সাফল্য এবং কল্যাণাদি দান করুন।
আধুনিক শিল্পোন্নত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর মানুষটির জন্য দেশবাসী সকলের দোয়া ও সমর্থন একান্তভাবে প্রতাশ্যা করি।

মন্তব্য করুন