অজানা প্রাণঘাতী এক রোগ ‘টাইপ ৫ ডায়াবেটিস’, বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত শিশুরা

ডায়াবেটিস একটি গুরুতর ও দুরারোগ্য একটি নীরব ঘাতক রোগ। বর্তমানে ডায়াবেটিসের প্রভাব এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে। বয়স বেশি হোক বা কম, রক্তে শর্করা এক বার বাড়তে শুরু করলে, তা আটকানো সহজ নয়। তবে টাইপ ১, ২ এবং ৩ ডায়াবিটিসের নামই এত দিন জানা ছিল। এখন হঠাৎ করেই টাইপ ৫ ডায়াবিটিস নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফাউন্ডেশন’ (আইডিএফ) গত কয়েক দিন ধরেই এই রোগটি নিয়ে সতর্ক করছে। তারা জানিয়েছে, নতুন রকমের ডায়াবেটিসে নাকি শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে এখনও অবধি ২ থেকে ৩ কোটি শিশুর মধ্যে এই ধরনের ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
ডায়াবেটিস বলতে যা ধারণা ছিল এত দিন, এই রোগটি তার থেকে আলাদা। সহজ করে বললে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস হল অটোইমিউন ডিজ়অর্ডার। মূলত জিনগত সমস্যার জন্য হয়। অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে যখন মানুষের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়, সে অবস্থাকে টাইপ ১ ডায়াবেটিস বলা হয়।
আর টাইপ ২ হয় খাদ্যাভ্যাস বা ওজন সংক্রান্ত কারণে। এ ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, কিন্তু শরীর ইনসুলিন গ্রহণে বাধা দেয়। অর্থাৎ ইনসুলিন হরমোনকে পুরোপুরি ব্রাত্য করে দেয় শরীর, তখন গ্লুকোজ জারিত হতে পারে না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে।
টাইপ ৩ ডায়াবিটিসে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। অ্যালঝাইমার্সের রোগীদের এই ধরনের ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়।
এটা গেল চেনা ডায়াবিটিসের কারণ। আর টাইপ ৫-এর ক্ষেত্রে এ সব কিছুই হয় না। এটি মূলত হয় অপুষ্টির কারণে। অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, সঠিক পুষ্টির অভাবে শরীরে ইনসুলিন তৈরিই হতে পারে না। তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে। আইডিএফ-এর গবেষকেরা জানাচ্ছেন, টাইপ ৫ ডায়াবিটিস হঠাৎ করে হয় না। অর্থাৎ অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া শুরু করলেন মানেই যে এই ডায়াবিটিস হবে, তা নয়। বছরের পর বছর ধরে অপুষ্টির শিকার হলে, তখন এই রোগ হবে। ভারত, আফ্রিকার মতো দেশে টাইপ ৫ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি বলেই জানিয়েছেন গবেষকেরা। সচেতনতার অভাবে এই রোগটি ধরাই পড়েনি এত দিন।
১৯৫৫ সালে জামাইকায় রোগটি প্রথম ধরা পড়ে। আইডিএফ-এর প্রেসিডেন্ট পিটার শোয়ার্জ জানিয়েছেন, জামাইকায় যখন রোগটি ধরা পড়ে, তখন মনে করা হয়েছিল, এটি অপুষ্টিজনিত কোনও অসুখ। এটিও যে ডায়াবেটিসের একটি রূপ, তা বুঝতেই পারেননি চিকিৎসকেরা। ১৯৮৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) অপুষ্টিজনিত ডায়াবেটিসকে 'বিরল রোগ' হিসেবে চিহ্নিত করে, কিন্তু তথ্যের অভাবে রোগটি তাদের তালিকা থেকে বাদ যায় ১৯৯০ সালে। এর পরে ২০২২ সালে ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক নিহাল টমাস রোগটির ব্যাপারে তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছিলেন। তিনি জানান, অপুষ্টিজনিত কারণেও ডায়াবিটিস হয়। কিন্তু তথ্যের অভাবে সেটি নিয়ে আর চর্চা হয়নি। বর্তমানে নিউ ইয়র্কের অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিনের চিকিৎসক মেরেডিথ হকিংস রোগটি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, টাইপ ৫ ডায়াবেটিস নতুন রোগ নয়। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বর্তমান সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কেবল রোগটিকে সঠিক ভাবে শনাক্ত করা প্রয়োজন।
টাইপ ৫ ডায়াবেটিসের উপসর্গও অনেকটা একই রকম। ওজন কমে যাবে বা বেড়ে যাওয়া, বারে বারে প্রস্রাব পাওয়া, অতিরিক্ত জল পিপাসা, রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করা, হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে। পাশাপা, দৃষ্টিশক্তি কমবে, স্নায়বিক রোগও দেখা দিতে থাকবে। টাইপ ৫ ডায়াবেটিসের কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়নি। যেহেতু রোগটি সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য ছিল না, তাই এটির তেমন কোনও চিকিৎসা নেই এখনও অবধি। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, টাইপ ৫ ডায়াবেটিস প্রাণঘাতী হতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/১৯ এপ্রিল/আরজেড)

মন্তব্য করুন