খালেদার প্রস্তাব চূড়ান্ত নয়: ফখরুল
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া তো বলেননি এটাই চূড়ান্ত। এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা তিনি বলেছেন। এটি নিয়ে আপনারা বসুন। আলোচনা করুন। যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেটা করুন।’
শনিবার রাজধানীতে জিয়া নাগরিক ফোরাম আয়োজিত ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ও জিয়া আমার চেতনা’ শীর্ষক স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে ফখরুল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সকল উপাদান রয়েছে। এই প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই আলোচনা করতে হবে।’
নেতাকর্মীদের প্রতি খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের পক্ষে জনমত গঠনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদেরকে এখন থেকেই এই প্রস্তাবের পক্ষে দেশব্যাপী জনমত গঠন করতে হবে। জনগণের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।’
শুক্রবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে সব দলের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। যতদিন এই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছেন বিএনপি নেত্রী।
খালেদা জিয়ার উত্থাপিত রূপরেখা আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করেছে বলতে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই। বিএনপি নেত্রীর সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, সংবিধান অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করেই গঠন হবে নির্বাচন কমিশন। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াই বলে দিচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কোনো মাথাব্যাথা নেই।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখানের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ তাদের নীল নকশা দিয়েই এগিয়ে যেতে চায়। তারা চায় না দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আবার নীল নকশা দিয়ে যেকোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় তারা।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রস্তাব উত্থাপনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তা দেখেই মনে হচ্ছে এই প্রতিক্রিয়া প্রস্তাব উত্থাপনের আগেই প্রস্তুত করা ছিল। যেমনটা আমরা দেখি বাজেটের সময় প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়- এটা গণবিরোধী ও উচ্চাভিলাসী বাজেট। তেমনই এক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন জনাব ওবায়দুল কাদের।’
রাষ্ট্রীয়ভাবে বিএনপিকে নির্মূল করার চক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনকে সরকার এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখান থেকে ফেরা কঠিন। তারা জঙ্গি সন্দেহে ধরেই তরুণ-যুবকদের মেরে ফেলে। আর বিএনপির যোগসূত্র তৈরি করে। তারা ঘটনার তদন্ত করে না।’
দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে বলে সরকারের দাবিকে অসার আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সরকার বলছে দেশে নাকি অর্থনীতিতে বিপ্লব হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখেন অর্থনীতির ভেতরা বড়ই ফাঁকা। ইউরোপিয়ান কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে গণতন্ত্র সুসংহত করতে পারলেই কেমন ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। সেটা সরকার করছে না। ’
জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ আনোয়ারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/এমএম/ডব্লিউবি)