রূপপুরে আর্সেনিকের ভয়াবহতা বাড়ছেই

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা
| আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৭, ০৯:৪৬ | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০১৭, ০৮:২৯

আর্সেনিক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর গ্রামে। বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগের শেষ নেই এ এলাকার মানুষের। উপজেলার ১০টি গ্রামে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। মাঝে মধ্যেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন আর্সেনিকে আক্রান্তরা। সরকারি ও বেসরকারি তথ্য মতে, গত ২০ বছরে এ অঞ্চলে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৫০ জনের। জনস্বাস্থ্য দপ্তর জানায়, আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা যেখানে ৫০ পিপি। সেখানে এসব গ্রামের নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে ৩০০ পিপি। পাবনার আর্সেনিক পরিস্থিতি নিয়ে শাহীন রহমানের দুই পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রুপপুর নলগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, এই গ্রামে মহামারী আকার ধারণ করেছে আর্সেনিক। এই গ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী নাজমুন্নাহার জানান, গত ২০ বছরে পর্যায়ক্রমে তাদের পরিবারের ১১ জন মারা গেছেন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে। বর্তমানে আক্রান্ত রয়েছেন আরও চার জন। কিন্তু আর্সেনিকের ভয়াবহতা থেকে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। শুধু মতিয়ার রহমানের পরিবারই নয়, আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এ অঞ্চলের দশটি গ্রামের প্রায় দেড়শ জন নারী-পুরুষ।

এলাকাবাসী জানান, গ্রামের বেশিরভাগ নলকূপই আর্সেনিকযুক্ত। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে বিভিন্ন দাতা সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তা অকেজো প্রায় পাঁচ বছর ধরে। তাই বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগের শেষ নেই তাদের।

আক্রান্তরা বলেন, এক সময় বিভিন্ন এনজিও থেকে তাদেরকে ওষুধ দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ওষুধ দেয়া তো দূরের কথা, তাদের খোঁজও কেউ নেয় না।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টির পানি ধরে তারা পান করতেন। কিন্তু পানি ধরার যন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে তারা আর্সেনিকযুক্ত পানিই পান করছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহাবুল ইসলাম জানান, ১৯৯২ সালে এখানে আর্সেনিক ধরা পড়ে। আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা যেখানে ৫০ পিপি, সেখানে এসব গ্রামের নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে ৩০০ পিপি। গ্রামের দুই হাজার ৩৭টি টিউবওয়েলের মধ্যে ৩৪০টি টিউবওয়েলে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক।

আর্সেনিক নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা নিউ এরা ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক মোস্তাক আহমেদ কিরণ ঢাকাটাইমসকে বলেন, তাদের জরিপ অনুযায়ী ২০১৪ সাল পর্যন্ত আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১১৫ জন। চলতি বছর পর্যন্ত সে সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়েছে। নতুন প্রজন্মকে আর্সেনিক থেকে বাঁচানোর তাগিদ তাদের রয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ আসমা খান বলেন, মাটির নিচে থাকা ফ্রি আর্সেনিকে বাতাস প্রবেশ করে আর্সোনাইড হয়ে মানবদেহে আর্সেনিকোসিস দেখা দেয়। আর্সেনিক থেকে রক্ষা পেতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহে সরকারের আরও গভীর নলকূপ স্থাপন করবে এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর।

(ঢাকাটাইমস/৯জুলাই/প্রতিনিধি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :