ত্রাণের জন্য হাহাকার, নৌকা দেখলেই ছুটছে বানভাসিরা

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৭, ১৮:২০

বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষের। চরাঞ্চলগুলোতে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। নৌকা বা নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য ছুটে আসছে বানভাসি মানুজন।

কুড়িগ্রাম জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের বানভাসি মানুষজন ১০ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন।

জেলার সাত উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক বানভাসি পরিবার ঘরের ভেতর উঁচু মাচা বেঁধে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। পাঠদান বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ১৯৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের আরমান আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম ঢাকাটাইমসকে জানান, সকাল থেকে এখনো রান্না করা হয়নি। ঘরে চাউল নেই। তিনি জানান, তার স্বামী বাকিতে চাল কিনতে বাজারে গেছেন। চাল না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে।

নৌকা দেখে কলার ভেলায় শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ছুটে আসা একই চরের আরেক বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘১০ দিন ধরে পানিবন্দি আছি। স্বামী কাজে যেতে পারে না, কোথাও কাজ নাই। আপনাদের নৌকা দেখে মনে হলো ত্রাণের নৌকা এসেছে। এসে দেখি আপনারা ত্রাণ নিয়া আসেন নাই। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়া ভেলার উপর দিন পার করছি।’

এই বালাডোবা চরের শুধু সাহেদা ও আনোয়ারা বেগম নয় এ অবস্থা এখন এ চরের আকলিমা, মাজেদা, জেসমিন, রাশিদাসহ দুই শতাধিক পরিবারের। সাংবাদিকের নৌকা চরের কাছে ভিড়তেই ত্রাণের আশায় কলা গাছের ভেলা ও গলা পানি ভেঙে ছুটে আসতে থাকে বানভাসিরা। পরে নৌকায় কোনো সাহায্য নেই দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। বন্যা দুর্গতরা অভিযোগ করেন এই চরে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পৌঁছায়নি।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে চার হাজারেরও বেশি পরিবার প্রায় ১০ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। এ পর্যন্ত যে বরাদ্দ পেয়েছি তা সাড়ে ৮০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও দেড়শ প্যাকেট শুকনো খাবার দেড়শ পরিবারকে দিতেই শেষ হয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের ১২টি চরের সবগুলোতেই দেয়া সম্ভব হয়নি। নতুন করে বরাদ্দ পেলে দেয়া হবে।

এ অবস্থা শুধু বালাডোবা চরেরই নয় ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার সকল চর ও দ্বীপচরের। কোথাও কোথাও ত্রাণের ১০ কেজি চাল ও শুকনো খাবারের একটি প্যাকেট জুটলেও পরিবারে পাঁচ থেকে ১০ জন সদস্যের জন্য তা কোনো কাজেই আসছে না।

এদিকে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য কমলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধরলার পানি হ্রাস পেয়ে সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান ঢাকাটাইমসকে জানান, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৪০০ মেট্রিকটন চাল ও ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও চার হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

স্থানী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :