বিশ্বে পাট গবেষণায় কেবল বাংলাদেশ সফল

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০১৭, ১০:২২ | প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট ২০১৭, ০৮:২৭

পাট দিয়ে তৈরি হয়েছে পলিথিন ব্যাগ। অবিকল বাজারে প্রচলিত পলিইথাইলিন-পলিথিনের মতোই। তবে পাটের পলিব্যাগ টেকসই বেশি। আবার হালকা আর পাতলা এই ব্যাগ ব্যবহারের পর ফেলে দিলে মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। পুড়িয়ে ফেললে ছাইভস্মে পরিণত হবে। পাটের সূক্ষ্ম তন্তুর পলিথিন কীভাবে সম্ভব? তবে অসম্ভবকে সম্ভব করে পরিবেশবান্ধব ‘পাটের পলিথিন’ব্যাগ তৈরি করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা।

এই বিজ্ঞানীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. মুবারক আহমাদ খান। তিনি পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক। বর্তমানে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত।

‘পাটের পলিথিন’ ব্যাগ তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন এই বিজ্ঞানী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।

আপনি তো পাট নিয়ে গবেষণা করছেন?

আমি দীর্ঘদিন ধরে পাট নিয়ে গবেষণা করছি। পাটের সোনালি সুদিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

কী ধরনের চেষ্টা সেটা?

পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। পাট দিয়ে ঢেউটিন, ফার্নিচারসহ বহু কিছু বানানো সম্ভব। সেটি আমি গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছি। এ ছাড়া পাট পলিথিন নিয়েও আমি গবেষণা করছি। দীর্ঘ গবেষণায় এ ক্ষেত্রেও আমরা সফল হয়েছি। পাটের পলিথিন খুব শিগগির আপনারা বাজারে পাবেন।

কবে নাগাদ পাটের পলিথিন বাজারে আসতে পারে?

আমি আশা করছি এক বছরের মধ্যেই পাটের পলিব্যাগ বাজারে বাণিজ্যিকভাবে আসবে। আমরা ছয় মাসের টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছি।

অগ্রগতি কতটুকু?

অগ্রগতি মোটামুটি ভালো। আমরা আরও আগেই এটি আনতে পারতাম। কিন্তু এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই নতুন। এর কোনো মেশিনপত্র বানানো নেই। এ কারণে এটি শুরু করতে দেরি হচ্ছে। আমি বিভিন্ন দেশে যাচ্ছি। একেক দেশ থেকে একেকটি যন্ত্রপাতি আনছি। কয়েক মাসের মধ্যে এগুলোর ট্রায়াল বেসিসে কাজ শুরু হবে।

এ পর্যন্ত আসতে কেমন সময় লেগেছে?

২০০৮ সাল থেকে আমি পাট নিয়ে গবেষণা করি। পাট নিয়ে গবেষকের সংখ্যা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। আমি একটি টিম তৈরি করেছিলাম। কিন্তু তাদের অনেকেই বড় সুযোগ পেয়ে বিদেশে চলে গেছে। আমি লেগে আছি। চেষ্টা করছি পাট নিয়ে কিছু একটা করার। সফলতাও আমাদের আছে। বিশ্বে এই সাফল্য ঈর্ষণীয়। পাট নিয়ে বিশ্বে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু সফলতা আসেনি। পাটের বহুমুখী ব্যবহার করতে আমিই সক্ষম হয়েছি। এটি বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত।

বিশ্বে আর কোথাও পাট নিয়ে সফল গবেষণা হয়নি?

না। কারণ পুরো বিশ্বই পলিথিন নিয়ে সমস্যায় আছে। কেউ এর বিকল্প তৈরি করতে পারেনি। আমি সক্ষম হয়েছি। কিছুদিন আগে জার্মানিতে গিয়েছিলাম। তাদের কাছে বিষয়টি আমি তুলে ধরার পর তারা পাটের পলিথিন নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা বলেছে, এটি আমরা তাদের সাপ্লাই দিতে পারলে সেদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করে দেবে।

তাহলে তো এটি শুরু হলে বিদেশে রপ্তানিও করা যাবে?

অবশ্যই করা যাবে। ইতোমধ্যে ‍দুবাইয়ের একটি আমেরিকান কোম্পানি মাসে আড়াই কোটি পলি ব্যাগ নেয়ার জন্য চুক্তি করতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে একটি গল্প আছে। বলব।

জ্বি বলুন।

আমি আমেরিকার একটি নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছিলাম। সে সময়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফ্যাকাল্টি আমাকে পাট নিয়ে গবেষণার জন্য তাদের দেশের একটি বড় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে বলেছিলেন। আমি প্র্স্তাব গ্রহণ করিনি। ১১ দিনের মাথায় দেশে চলে এসেছি। এসে পরমানু শক্তি কমিশনে যোগ দিয়েছি।

দেশের চাহিদা পুরণ করে কী বিদেশে এই ব্যাগ রপ্তানি করা যাবে?

আমি আশা করছি যাবে। আমরা প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ৩০ লাখ টন পলি ব্যাগ উৎপাদনের টার্গেট ঠিক করেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা টার্গেট বাড়াব।

গবেষণা করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন কখনো?

আমি ২০০৮ সাল থেকে পাট নিয়ে গবেষণা করছি। ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু আমার অনেক প্রডাক্ট পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাণিজ্যিক রূপ পাচ্ছে না।

কেন পাচ্ছে না?

ধরুন আমি পাটের ঢেউটিন বানিয়েছি। ফার্নিচার বানিয়েছি। এগুলো স্টিলের চেয়ে ৮ গুণ বেশি শক্ত। এসব লাইফটাইম গ্যারান্টি আছে। অনেক বড় বড় কোম্পানি এগুলো দেখতে এসেছে। কিন্তু কেউ বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসেনি। কোনো কোম্পানিই ঝুঁকি নিতে চায় না। তারা সবকিছু রেডিমেট চায়। এটা যেহেতু নতুন জিনিস, এটাকে পাইলটিং করতে প্রথমে একটা টাকার অ্যামাউন্ট খরচ করতে হয়। সেটা খরচ করতে কেউ চায় না। এ কারণে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

তবে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাটের বিষয়ে বেশ আগ্রহী। তার উদ্যোগে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। সরকার অর্থ খরচ করছে। আমরা সফল হচ্ছি।

পাটের পলিথিনে খরচ কেমন হবে?

আমি বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীর কাজ গবেষণা করা। খরচ নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবে না। তবে যেহেতু পাটের পলিথিনের ধারণাটিই নতুন, প্রথম দিকে এর খরচ একটু বেশি হতে পারে। পর্যায়ক্রমে এটি সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে পাট হচ্ছে পরিবেশবান্ধব। যখন পলিথিন থাকবে না, তখন দেখবেন ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতাও থাকবে না।

দুই রঙের দৃষ্টিনন্দন পাটের পলিথিন ব্যাগগুলো চার কোণ আকৃতির। বাজারে প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের মতোই হালকা-পাতলা। এটি হবে বিশ্বের বুকে ঐতিহাসিক উদ্যোগ।

এটির ব্যবহার কেমন হবে?

এটি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন পণ্য মোড়কজাতে ব্যবহৃত হবে। বর্তমানে এই ব্যাগ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তৈরি করেছি আমরা। বিদেশ থেকে যন্ত্র আসার পর বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হবে। বর্তমানে প্রচলিত অপচনশীল পলিথিন ব্যাগ নালা-নর্দমায় আটকে থেকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ পলিথিন। কড়া শাস্তির আইন করে এটি নিষিদ্ধ করা হলেও রোধ করা যাচ্ছে না এর উৎপাদন ও ব্যবহার। কারণ বাজারে পলিথিনের কোনো বিকল্প ছিল না। এর বিকল্প হিসেবে পাটের পলিব্যাগ বাজারে এলে বিদায় ঘটবে পলিথিনের।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা: এস. এম. মঞ্জুরুল হক 

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :