সুখের দেশে ভ্রমণ শেষে

মৌলি আজাদ
  প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৪৯
অ- অ+

বাঙালির জীবনে তো আর হ্যাঁপা কম নয়। ঘরে বাইরের নানা ঝামেলা, হাপিত্যেস, হতাশা, যানজট এসব তো আমাদের জীবনের সাথে একদম জড়িয়ে গেছে। ছাড়ার নামটা কভু এরা নেয় না। আর সেই সাথে উপরে ওঠার দৌড় প্রতিযোগিতায় সেই কবে থেকেই তো আমরা নাম লিখিয়ে রেখেছি। সবার কথা আর কি বলছি? আমি কি আর এসবের বাইরে? একদম না। এসবের মধ্যে জড়িয়ে আমার তো একেবারে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। তাই এ বছরের শুরুতেই ঠিক করে রেখেছিলাম সব জঞ্জালের নাগপাশ ছাড়িয়ে কিছুটা স্বস্তির জন্যে যেভাবেই হোক দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসব।

কিন্তু কোন দেশে? খুব বেশি চিন্তা করতে হলো না অবশ্য। কারণ এ অন্তর্জালের যুগে সবকিছুই যে হাতের মুঠোতে একেবারে। আর সে সাথে যোগ হয়েছে পত্রিকায় দেয়া বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানির নানা দেশের নয়নাভিরাম ছবিসহ নানা বিজ্ঞাপন। ট্যুর কোম্পানির সমন্ধে আগে থেকেই ভাল অভিজ্ঞতা ছিল আমার। তাই এবারও দ্বারস্ত হলাম স্বনামধন্য একটি ট্যুর কোম্পানিতে। মনে মনে ভেবে নিলাম রোজার ঈদের ছুটিই হবে ঘোরার জন্য উপযুক্ত সময়।

ট্যুর কোম্পানি বিভিন্ন দেশের প্যাকেজ ট্যুর আমাকে দেখাল। কিন্তু কোন দেশে যাব তাতে আমার দ্বিধা দেখে কোম্পানির সিইও বললেন, “আসলে আপনি কি দেখতে চান বা কিভাবে আপনার ছুটিটা কাটাতে চান?” আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল: “আসলে আমি শান্তিতে কয়েকটা দিন কাটাতে চাই।” তিনিও উত্তর দিতে দেরি করলেন না। বললেন: “তাহলে আপনার জন্যে ভ্রমণের বেস্ট প্লেস হল ভুটান।” আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, ভুটান (আসলে ভুটান সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণাই ছিল না।)! তিনি বললেন: “জি। তবে ভুটান যেতে হলে আপনাকে আজই টিকেট বুকিং দিতে হবে?” আমি বললাম: “ঈদের তো আরো দুই মাস বাকি? তবে এত আগে কেন?” তিনি বললেন: “ভুটানে ড্রুক এয়ারলাইনসই (উৎঁশ অরৎষরহবং) শুধু যায়। আর ঈদের সময় এত ট্যুরিস্ট যায় যে, সিট পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হয়ে পড়ে।”

আর কথা বাড়ালাম না। টিকেট বুকিং দিয়ে দিলাম। দিন ঠিক হলো ঈদের পরের দিন আমি ভুটানে যাব। সেই সাথে যথারীতি পরিবার তো থাকছেই।

পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেকেই ভুটানে প্লেনের ল্যান্ডিং নিয়ে নানা ভীতিকর তথ্য আমাকে দিয়েছিলেন। তাই মিথ্যা বলব না, ল্যান্ডিংয়ের আগে আগে বুকটা একরকম দুরু দুরু করছিল। কিন্তু পাইলট এতটাই দক্ষতার সাথে ল্যান্ডিং করলেন, তাই কখন যে আকাশ থেকে মর্ত্যে নেমেছি বুঝতেই পারলাম না।

প্লেন থেকে নামামাত্র চোখে পড়ল ছোট ছিমছাম পরিষ্কার একটা এয়ারপোর্ট। এর চারদিক ঘিরে আছে সবুজ পাহাড় আর নীল মেঘ। মেঘ আর পাহাড় এয়ারপোর্টকে এত নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করে আছে- যাতে ভুটান এয়ারপোর্ট হয়ে উঠেছে অনেক দামি এয়ারপোর্টের চেয়ে বেশি দৃষ্টিনন্দন। এসির বাতাস নয়, প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাস শরীরে মিষ্টি ছোঁয়া দিয়ে আমাদের বলে গেল- “স্বাগত ভুটানে”।

নির্বিঘেœ একে একে সবাই পোর্ট এন্ট্রি ভিসা নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এলাম (ভুটান বিমানবন্দরে চেকিংয়ের বাড়াবাড়ি নেই বললেই চলে)। গাইড আগে থেকেই গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। তাই ছুটে চললাম পারো বিমানবন্দর (ভুটানে একটিই বিমানবন্দর, যা তাদের রাজধানীতে নয়) থেকে রাজধানী থিম্পুর উদ্দেশে।

প্রায় এক ঘণ্টার পথ। মসৃণ রাস্তা কিন্তু বাঁক। ক্রমশ নিচে থেকে উপরে ওঠা। পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার এক পাশ ধরে। পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ভুটানেও আমাদের দেশের মতো পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু পার্থক্য হলো পাহাড় কাটার পরিকল্পনায়। পাহাড় ধস ঠেকানোর জন্য তারা পাহাড়ের চারদিকে আরসিসির তৈরি দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছে।

প্রকৃতির রূপে চোখ জুড়াতে জুড়াতে পৌঁছে গেলাম রাজধানী থিম্পুতে। উঠলাম হোটেল ‘সম্ভব’-এ। এক ঘণ্টা জার্নি হলেও টায়ার্ড হইনি এক ফোঁটাও। রিসেপশন কাউন্টার থেকে রুমের চাবি নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। সুসজ্জিত রুম। দুই পাশে দুটো বড় জানালা। জানালার পর্দাটা সরিয়ে যা দেখলাম তাতে চোখ সরানো দায় যেন। এক জানালার বাইরে দিয়ে দেখা যায় পাহাড় আর তার সাথে গলাগলি হয়ে আছে তুলার মতো সাদা মেঘ। আর অপর জানালায় চোখ পড়তে দেখলাম নদী বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের মানুষ আমি। কোনোদিন নদীর পানির শব্দ শুনিনি কেবল গল্পে পড়েছি। জীবনে এই প্রথম নদীর কুলকুল শব্দ শুনলাম। হোটেল থেকে নিচে বয়ে যাওয়া পানির শব্দ শুনে বিস্মিত হচ্ছিলাম। কিভাবে সম্ভব হচ্ছে ভাবছিলাম। একটু পরেই বুঝলাম এর রহস্য। কারণ ভুটান হলো শুনশান নীরব এক দেশ, যে দেশে গাড়ির হর্ণ বাজানো নিষেধ।

রুমে বসে সময় নষ্ট করতে মন চাইছিল না। সামান্য খাবার খেলাম। ভাত-ডাল-মাংস সবই বাঙালি ঢংয়ে রান্না করা (হয়তো বা প্রচুর বাঙালি ট্যুরিস্ট যায় বলেই হোটেলগুলো বাঙালি রান্নায় হাত পাকিয়ে ফেলেছে)। হোটেল থেকে বেরিয়ে দূষণমুক্ত বাতাসে বেশ কয়েকবার শ্বাস নিলাম। রাস্তা দিয়ে হাঁটা ধরলাম। সাথে আছেন ভুটানিজ গাইড। রাস্তায় এক কণা ময়লাও পেলাম না। রাস্তায় মারুতি সুজুকি গাড়ির লাইন। কোনো গাড়িতে সামান্য আঁচড়ও নেই।

গাইডকে বললাম: “কী করে আশপাশ সবকিছু এত পরিষ্কার রাখছো, ভায়া তোমরা?” গাইড হেসে বললেন: “রাজার আদেশ, ম্যাডাম। আমরা নিজেদের শহর নিজেরাই পরিষ্কার রাখি, অন্য কেউ এসে আমার বাসার সামনের রাস্তা পরিষ্কার করবে সে আশায় আমরা কেউ বসে থাকি না। আর সব গাড়ি নতুনের মতো কেন লাগছে ম্যাডাম- আমাদের দেশে কোনো গাড়িতে যদি সামান্য দাগ থাকে/গাড়ির ভিতর অপরিষ্কার থাকে তবে আর ড্রাইভারের রক্ষা নেই। সাথে সাথে ফাইন।”

থিম্পুর রাস্তায় হাঁটতে

হাঁটতেই রাস্তার বিপরীত দিকে একটি সরকারি স্কুল দেখলাম। স্কুলের সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। একটা বিষয়ে একটু চিন্তিত হলাম। তা হলো- বাচ্চাদের অভিভাবকেরা স্কুলের পাশে গাড়ি পার্ক করে বাচ্চাদের নামিয়ে দিচ্ছে না। বরং স্কুলের বিপরীতে রাস্তায় নামাচ্ছে। বাচ্চারা নিজেরাই রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে। গাইডকে বললাম: “তোমাদের বাচ্চাদের সাহস আছে বটে।” গাইড বললেন: “সাহস নয়, আমাদের দেশের নিয়ম হলো বাচ্চাদের রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ সাহায্য করবে। সেই সাথে বাচ্চাদের রাস্তা পারাপারের সময় যেকোনো গাড়িই থেমে যেতে বাধ্য।” কী আর বলব আমি, শুনলাম শুধু। গাইড বললেন: “হাঁটলেন তো অনেকক্ষণ, চলুন গাড়িতে করে আমাদের সরকারি অফিসগুলো আপনাদের দেখিয়ে আনি।” পুলিশ হেডকোর্য়াটার, রাজস্ব অফিস, সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ভুটান সচিবালয়, ভুটান বিচার বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি অফিসগুলো প্রায় কাছাকাছি দূরত্বের। প্রতিটি অফিসের কাঠামোই প্রায় একই ধরনের। অফিসের জানালাগুলোর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। কারণ প্রতিটি জানালার থাই গ্লাসের বাইরে এক্সট্রা কাঠের নকশার কাজ করা, যা ব্যয়বহুল। গাইডকে বললাম: “কি হে, প্রতিটি অফিসের জানালায় থাই গ্লাসই তো যথেষ্ট ছিল, তবে কাঠের ব্যবহার করা হয়েছে কেন?” বললেন: “রাজার আদেশ। বহু বছর ধরেই জানালায় এ রকম ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের রাজা পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।”

আমরা পুনাখায় যাব বিধায় একটি সরকারি অফিস থেকে গাইডের সাথে পারমিশন নিতে গেলাম (যেহেতু আমাদের পাসপোর্টে কেবল পোর্ট এন্ট্রি ভিসা ছিল)। অবাক হলাম সরকারি অফিসে মাত্র ২০ মিনিটেই আমাদের কাজ হয়ে গেল। গাইডকে একটু রসিকতা করে বললাম: “এত তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে গেল, তা সরকারি কর্মকর্তাকে কিছু দিয়েছিলেন নাকি?” গাইড বললেন: “প্রশ্নই আসে না। রাজা জানলে এ রকম কর্মকর্তার গলা কেটে নেবে।”

কথা বাড়ালাম না। বুঝলাম এরা তাদের রাজাকে কতটা সমীহ করে চলে। গাড়ি ছুটতে ছুটতে নিয়ে এল পদ্মাসনে বসা বুদ্ধমূর্তি দর্শনের জন্য। রাজকীয় গোল্ডেন বুদ্ধমূর্তি (যদিও ব্রোঞ্জের তৈরি)। এতটা উঁচুতে অবস্থিত মূর্তি যা ভুটানের যে প্রান্তেই যাই না কেন চোখে পড়বেই। মন্দিরটি বেশ উঁচুতে। সিঁড়ি ভেঙে ওঠায় বেশ ক্লান্ত লাগছিল আমার। ব্যাগে সব সময় চুইংগাম রাখি। চুইংগামটা যেই মুখে পুরছি, এমন সময় মন্দির রক্ষণাবেক্ষণকারী ব্যক্তি এসে সবিনয়ে চুইংগাম না খেতে বললেন। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম: “কেন?” বললেন: “ভুটানে চুইংগাম কেনাবেচা ও খাওয়া নিষেধ।” হাঁ হয়ে জিজ্ঞেস করলাম: “মানে?” বললেন: “চুইংগাম পরিবেশ নষ্ট করে।” কিছুক্ষণের জন্যে মাথা ঘুরিয়ে গেল যেন। আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি নিজে থেকে ‘জামপি’ নামের একটি ম্যাংগো জুস নিয়ে এসে বললেন, ‘সিস্টার, চুইংগাম নয়....জুস খান।’ ভুটানিজ জুস। চমৎকার হলুদ প্যাকেটে ভরা জুস। ক্লান্ত থাকায় চুমুক দিলাম স্ট্র-এ। কিছুটা খাবার পর জুসের প্যাকেটটা পড়লাম, সেখানে লেখা

ÒBhutan. A country famous for its pristine natural beauty, stringent environmental protection, policies and ‘Gross National Happiness is more important than Gross National Product’|

বুদ্ধমন্দির দর্শন শেষে হোটেলে ফেরার পথে চোখে পড়ল ভুটানি নারী-পুরুষদের। এখানে নারী-পুরুষ দুজনেরই হাইট বেশ লম্বা, স্লিম, ফর্সা। নারী-পুরুষ বেশির ভাগই ভুটানের জাতীয় পোশাক পরেন, তবে অনেককে শার্ট, প্যান্ট পরাও দেখলাম। প্রচুর হাঁটে ভুটানিরা। আশ্চর্যজনকভাবে দেখলাম ভুটানের বেশির ভাগ রাস্তার মোড়েই রয়েছে ‘বার’ এবং বিক্রেতা বেশির ভাগ সময়ই নারী।

যেতে যেতে হঠাৎ গাছপালায় ঘেরা পার্কের মতো একটা জায়গা দেখলাম। পার্কে যাব বলে গাইডের কাছে আবেদন জানালাম। মঞ্জুর হলো আবেদন। পুরোটা সবুজ ঘাসে মোড়ানো পার্ক। মাঝে মাঝে কংক্রিটের তৈরি বসার স্থান। আর পার্কটি ঘিরে রেখেছে ছলাৎ ছলাৎ নদীর পানি। এ রকম একটি ওপেন পার্কে উদ্বাস্তু কিছু মানুষ দেখব বলে আশা করেছিলাম। গাইডকে তাদের কথা জিজ্ঞেস করলাম। গাইড বললেন: “ম্যাডাম, ভুটানে কোনো ইবমমধৎ নেই। আমাদের দেশটা যেমন ছোট, মানুষও আমরা তেমন কম। আর যদি কারো আর্থিক অবস্থা খারাপ হয় তবে তার দেখভালের দায়িত্ব পুরোটাই রাষ্ট্রের।” আবারও মুখ বন্ধ করে রইলাম। পার্ক থেকে হোটেলে ফেরার পর রাতে ঘুমাতে পারিনি। আসলে ঘুমাতে চাইনি। নিচ থেকে ভেসে আসা পানির শব্দ চোখের ঘুমকে বিদায় জানিয়ে মনে এনে দিল শান্তি।

পরদিন সকাল। নাস্তা সারলাম পরোটা, ডাল, পনির, ডিম পোচ, ফ্রুটস আর কফি দিয়ে। একটু বেশিই নিয়ে খেলাম। কারণ আজ রওয়ানা দিব থিম্পু থেকে পুনাখার উদ্দেশে। ব্রেকফাস্ট সেরে বাসে চড়লাম। বাস চলছে তো চলছেই (প্রায় ২.৫ ঘণ্টার পথ)। এ পথও মসৃণ তবে ক্রমশ উপরে উঠেছে বিধায় মাঝেমাঝেই ঝাঁকুনি খাচ্ছিলাম। এক পাশে সুউচ্চ পাহাড়, অপর পাশে বিরাট খাদ (নিচে তাকালেই ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায়)। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ঝরনা। যেখানে ঝরনা সেখানে ট্যুরিস্টদের ঝরনা দেখানোর ব্যবস্থাও আছে। লক্ষ করলাম প্রচুর ট্যুরিস্ট সেখানে। গাইডকে অনুরোধ করে বাস থেকে নামলাম। তাকিয়ে রইলাম ঝরনার পানির পতনের দিকে। সাদা পানি। নিচে পাথর। ট্যুরিস্টরা ঠান্ডা জলে পা ভিজাচ্ছেন। আবার কেউ বা পাথরও স্মৃতি হিসেবে নিচ্ছেন। অবাক হলাম এত ট্যুরিস্ট থাকা সত্ত্বেও চারপাশে বিন্দুমাত্র উটকো কাগজ/খোসা পড়া না দেখে। শুধু ভাবলাম, কিভাবে চারপাশ এত নির্মল রাখা সম্ভব! আমার মনে কী চলছে গাইড যেন বুঝতে পারলেন। এগিয়ে এসে বললেন: “ম্যাডাম, চারপাশে সাদা পোশাকে টহল দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। ধরা পড়লেই ফাইন।”

ঝরনার সৌন্দর্যে চোখ ভরিয়ে আবার বাসে উঠলাম। বাস আবার বিরতিহীন ছুটে চলছে। রাস্তার কিছু পরপরই সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডের নির্দেশনাগুলো চমৎকার ভাষায় লেখা। যেমন একটি সাইনবোর্ড বলছে- ‘প্রকৃতির তো কোনোকিছুতে তাড়া নেই...তবে গাড়ি চালানোর সময় তোমার এত তাড়া কেন?’ গাড়ি কেবলই উপরে উঠে চলছে। মনে হচ্ছিল আকাশটা ছুঁয়ে ফেলবে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে। হঠাৎই শরীরে বেশ ঠান্ডা বোধ করতে শুরু করলাম। শাল জড়িয়ে নিলাম শরীরে। গাড়ি থামল। সবাই নামলাম। কিন্তু এ কোথায় এলাম! চারপাশটা ঠান্ডা। মেঘ নেমে এসেছে আমাদের মাথার কাছে। কাউকেই ঠিকমতো দেখতে পারছি না। সবাই যেন সাদা মেঘের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। জানলাম এর নাম ‘দোচলা পাশ’। সি লেভেল থেকে ১২ হাজার ফুট উপরে। পৃথিবীর কোলাহল এ জায়গাকে স্পর্শ করে না। মনে হলো পৃথিবী থেকে বাইরের কোথাও বেড়াতে এসেছি যেন। জায়গাটা এমন যে মনে হয় সময় থমকে আছে এখানে। ভাবছিলাম এখানে থেকে যেতে পারলে মন্দ হতো না। কিন্তু গাইড বললেন: “চলুন। পুুনাখা তো যেতে হবে, ম্যাডাম।”

পৌঁছালাম পুনাখায়। পুনাখা ছোট। প্রকৃতি এ শহরকে তার পুরোটা উজাড় করে দিয়েছে। সেই সাথে পরিকল্পিতভাবে মানুষ পুনাখাকে সাজিয়ে নিয়েছে। বোধ করি কলমের আঁচড়ে পুনাখার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব।

এবার দেশে ফেরার পালা। গাইড পৌঁছে দিলেন এয়ারপোর্টে। তার চমৎকার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে টিপস দিতে গেলাম। সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে বললেন: “ম্যাডাম, আপনারা ট্যুরিস্ট কোম্পানির মাধ্যমে এসেছেন, তাই আমি কোম্পানির কাছ থেকেই আমার পারিশ্রমিক নেব। দুই জায়গা থেকে টাকা আমি নিতে পারব না, ধন্যবাদ।”

গাইডের কথা শুনে আমার বিস্ময়ের যেন আর শেষ রইল না। বিমানবন্দরে ঢোকার পূর্বে পেছনে ফেলে আসা ভুটানকে আবার দেখে নিলাম। ক্লান্তিমুক্ত হতেই তো এসেছিলাম এখানে। তাই না? হ্যাঁ। তা যেমন দূর হলো সেই সাথে ছোট দেশ ভুটান আমাদের বুঝিয়ে দিল উদার প্রকৃতিই মানুষকে শেখায় সততা।

ভুটান ভ্রমণের কিছু টিপস ভুটান যেতে হলে (বিশেষ করে কোনো উৎসবের সময়) বেশ (প্রায় দুই মাস) আগেই টিকেট বুকিং দিতে হবে।

প্যাকেজে গেলে ভুটানের খরচাপাতি বেশ ব্যয়বহুল।

মে-অক্টোবর ভুটান ভ্রমণের জন্য শ্রেয়।

ভুটান ট্যুরিস্টদের জন্য ১০০% নিরাপদ।

প্রতিটি শহরের দুরত্ব খুব বেশি বিধায় জার্নিতে সমস্যা হতে পারে। ব্যাগে এভমিন ট্যাবলেট রাখতে পারেন।

মৌলি আজাদ: লেখক।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা