এক লাখ লোককে চাকরি দেয়ার স্বপ্ন দেখি

ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৪২ | প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:০৩

বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে আইটি সেক্টরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার টার্গেট করেছে। কিন্তু এখানে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজার দেখছেন মাইক কাজী। তিনি বিশ্বখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কাজী আইটি সেন্টার লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা।

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে একটি গাড়ি কিনে তা আবার দ্বিগুণ লাভে বিক্রি করার মধ্যদিয়ে ব্যবসা শুরু কাজী মাইকের। রেস্তোরাঁ ব্যবসাও আছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে যাত্রা করে কাজী আইটি। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কাজী আইটিকে দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হিসেবে দেখতে চান তিনি। সুযোগ সৃষ্টি করতে চান বেশি বেশি কর্মসংস্থানের। তার স্বপ্ন বাংলাদেশে এক লাখ লোককে চাকরি দেবেন তিনি।

১৯৮৭ সালের দিকে পরিবারের সঙ্গে যখন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান, তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। কয়েক বছর পর তার পরিবার বাংলাদেশে চলে এলেও তিনি থেকে যান সেখানে। ব্যবসার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে শেষ করেন এমবিএম।

কাজী আইটির প্রধান নির্বাহী মাইক কাজী তার ব্যবসার শুরু ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান। আজ থাকছে শেষ অংশ।

ঢাকাটাইমস: কাজী আইটিতে কি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে?

মাইক কাজী: আমরা বনানীতে অফিস নিচ্ছি আইটি ট্রেনিংসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য। আমাদের যে টার্গেট তাতে আমাদের প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন। না হলে আমরা এত লোক কোথায় পাব।

ঢাকাটাইমস: আগে তো বাংলাদেশে কম সময় দিতেন। এখন বেশি সময় দিচ্ছেন।

মাইক কাজী: আমি এখানে ভবিষ্যৎ দেখছি। যুক্তরাষ্ট্রে আমার গাড়ি ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে। সেখানে আমি এত লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারব না যতটা আইটি সেক্টরে পারব। বাংলাদেশে এই আইটি ব্যবসায় আমি এক লাখ লোককে নিয়োগ দিতে পারব, সেই স্বপ্ন আছে আমার।

ঢাকাটাইমস: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মেধাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মাইক কাজী: বাংলাদেশিরা অনেক মেধাবী। তবে তারা ইংরেজিতে দুর্বল। আমরা ইংরেজিতে পরীক্ষা নিলে তারা একটু খারাপ করে। ৩০ শতাংশ পাস করে। আর যদি বাংলায় প্রশ্ন করা হয় তাহলে ৯০ শতাংশ পাস করে। তার মানে ইংরেজি প্রশ্ন বুঝতে তাদের সমস্যা হয়। আমরা অনেক সময় বুঝি না বাংলাদেশিরা কত মেধাবী।

ঢাকাটাইমস: আপনার ব্যবসার শুরুর গল্পটা একটু শুনতে চাই।

মাইক কাজী: যুক্তরাষ্ট্রে আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখন একটি গাড়ি কিনেছিলাম ৪০০ ডলার দিয়ে। সেটা পরে ১২০০ ডলারে বিক্রি করি। আমরা কাছে বিষয়টি ভালো লাগল। আবার একটা কিনলাম, একটু বেশি দামে বিক্রি করলাম। তখন ভাবলাম আমার বন্ধুরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, কত কষ্ট করে টাকা আয় করছে, আর আমি বলতে গেলে কোনো কিছু না করেই প্রতি মাসে ৪০ হাজার ডলার আয় করছি। এরপর আমি এটাকে পেশা হিসেবে নিলাম। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি গাড়ির ব্যবসা গড়ে তুলি।

ঢাকাটাইমস: আইটি সেক্টরে কীভাবে এলেন?

মাইক কাজী: আইটি সেক্টরে এসেছি ২০১০ সালে। ২০০৮ থেকে ২০১০- এ তিন বছর আমার ব্যবসা খুবই খারাপ ছিল। ব্যাংকক্রাপ্ট হওয়ায় আমার ব্যবসার কয়েকটা শাখা বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় আমি আমার প্রতিষ্ঠানের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করি। সেটি ইন্ডিয়া, ফিলিপাইনে না বানাতে দিয়ে বাংলাদেশে বানাতে দেই। পরিচিত সবাই আমার ওয়েবসাইটের প্রশংসা করতে থাকে। তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্যও এমন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে দিতে আমাকে বলে। আমি এটাকে একটি সম্ভাবনা হিসেবে নিলাম। বাংলাদেশের শান্তিনগরে ৪০টি কম্পিউটার দিয়ে কাজ শুরু করি। ওয়েবসাইট তৈরির। এরপর প্রতি বছর ডাবল ত্রিপল ডিজিট গ্রোথ করে ব্যবসা। খুব ভালো হচ্ছে আমার এ ব্যবসা। প্রতি বছরই আমি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছি।

ঢাকাটাইমস: যুক্তরাষ্ট্রে আপনার প্রতিষ্ঠানে কেমন লোকবল?

মাইক কাজী: সেখানে ৭৫০ জন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কাজ করছে। প্রতি সপ্তাহে আমরা তাদের পেমেন্ট দেই।

ঢাকাটাইমস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মাইক কাজী: দেশের জন্য, পৃথিবীর জন্য কিছু করতে চাই। মরে গেলে তো কিছুই নেওয়া যাবে না। শুধু নামটা থাকবে। মানুষ বলতে পারে মাইক কাজী পৃথিবীর জন্য একটা কিছু করেছে। তাই কিছু করে যাই। একটা স্মৃতি রেখে যাই। এটা আমার একটা নেশা। আমি তিন-চার ঘণ্টা ঘুমাই প্রতিদিন। চার ঘণ্টা ঘুমালে মনে হয় অনেক ঘুমিয়েছি।

ঢাকাটাইমস: শিগগির কোনো চাকরি মেলার আয়োজন থাকছে কি না?

মাইক কাজী: বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ১১ নভেম্বরে চাকরি মেলা ‘কাজী আইটি ক্যারিয়ার বুটক্যাম্প’ করতে যাচ্ছি। এর জন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে। আমাদের কাজী আইটির ফেসবুক ফ্যানপেজে রেজিস্ট্রেশনের লিংক আছে। ছয় হাজার আবেদনকারীকে নিয়ে কাজী আইটি ক্যারিয়ার বুথক্যাম্প হবে। উপস্থিত চাকরিপ্রার্থীদের কয়েকজনকে আমার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের গ্রাজুয়েশন হলেই হবে। আমরা ফ্রেশার নেব, ম্যানেজার নেব, টিম লিডার নেব, সব পজিশনে আমরা নিয়োগ দেব।

ঢাকাটাইমস: কাজী আইটির অফিসের পরিবেশ সম্পর্কে কিছু বলবেন?

মাইক কাজী: আমাদের অফিসের সব কর্মীই বন্ধুসুলভ। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় তারা একে-অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে। এতে আন্তরিকতা বাড়ে। আমাদের কর্মীদের কখনো চাপে রাখা হয় না। আনন্দের মধ্যে তারা কাজ করে। মাঝে মাঝে কর্মীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। সেখানে তারা তাদের বিভিন্ন প্রতিভা প্রকাশ করে। এভাবেই প্রাণবন্ত থাকে অফিসের পরিবেশ।

কর্মীদের মান উন্নয়নে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কেউ বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য অফার পেলে তার খরচ অফিস থেকেই দেওয়া হয়। বিভিন্ন মোটিভেশনাল বই কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

আমি সব সময়ই চাই আমার কর্মীরা যেন একসময় কোনো প্রতিষ্ঠানে সিইও হতে পারে। সেভাবে যোগ্য করে তুলি। আমি আমার ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য অনেক প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। নিত্যনতুন কিছু জানছি। আমি আবার সেগুলো আমার কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ঢাকাটাইমস: ঢাকাটাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মাইক কাজী: আপনাকে এবং ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা: এস. এম. মঞ্জুরুল হক 

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :