লিয়াকত-রজবের যুদ্ধাপরাধের রায় সোমবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:১২ | প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:০৫

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় সোমবার ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এটি হবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের মামলার বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের ৩৫তম রায়।

রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ের এ দিন ধার্য করেন।

প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিযুদ্ধকালে হবিগঞ্জের লাখাই থানার ফান্দাউক ইউনিয়ন রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানা আলবদর কমান্ডার রজব আলীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুটপাটের মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ রয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে লাখাইয়ের কৃষ্ণপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২৭ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফান্দাউকে নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযোগ। তারা দুইজন পাশাপাশি তিন থানা হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে এসব অপরাধ সংঘটিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষ পলাতক এই দুই আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছেন।

গত ১৬ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে এ মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৬ সালের ১ নভেম্বর লিয়াকত-রজবের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। এ দুজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ মে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে তারা পলাতক রয়েছেন।

তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লিয়াকত আলী হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলাটি হয়।

আসামি লিয়াকত আলী ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। অন্য আসামি রজব আলী ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে অষ্টগ্রামে আল বদর বাহিনী গঠন করে কমান্ডার হন তিনি।দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলা হয় এবং ওইসব মামলার বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ‘আমি আলবদর বলছি’ নামে বই লেখেন।

লিয়াকত-রজবের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ

লিয়াকত-রজবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(১), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুটপাটের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এক, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টা থেকে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও তাদের সঙ্গী রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে লাখাই থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে গণহত্যা ও লুটপাট করেন। গ্রামের নৃপেণ রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ১৫ জন জ্ঞাত ও ২৮ জন অজ্ঞাত হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করেন তারা।

দুই, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা থেকে বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও তাদের সঙ্গী রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে চণ্ডিপুর গ্রামে চন্দ্র কুমার ও জয় কুমারসহ ৯ জন হিন্দু লোককে গুলি করে হত্যা এবং গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট করেন।

তিন, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার দিকে লাখাই থানার গদাইনগর গ্রামে লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম(রজব আলী), রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা চিত্ত রঞ্জন দাসের বাড়ির বাইরের আঙ্গিনায় জগদীশ দাস, পিয়ারি দাস ও মহাদেব দাসসহ ২৬ জন জ্ঞাত হিন্দুকে হত্যা করেন। অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জন আহত হয়ে বেঁচে যান।

চার, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণপুর এলাকায় হামলা চালান। এ সময় হরিদাস রায় ও ক্ষিতিশ রায়সহ ১০ জন হিন্দু লোককে অপহরণ করে অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামের শ্মশানঘাটে এনে রাত ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে। এতে ঘটনাস্থলে ৮ জন শহীদ হন এবং ২ জন আহত হয়ে বেঁচে যান।

পাঁচ, লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও তার সঙ্গী রাজাকাররা ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে যেকোনো দিন সকাল দশটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক বাজার থেকে রঙ্গু মিয়া ও বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করেন। পরের দিন বেলা ১২টার দিকে রঙ্গু মিয়াকে নাসিরনগর থানার ডাকবাংলোর পাশে দত্তবাড়ির খালে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেন। অপহৃত বাচ্চু মিয়া অর্থের বিনিময়ে রাজাকারদের হাত থেকে মুক্তি পান।

ছয়, ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়ির উত্তর পাশে খালি জায়গায় ইশা খাঁ ও আরজু ভূঁইয়াসহ ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেন।

সাত, ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বেলা আনুমানিক ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে খাঁ বাড়িতে হামলা চালিয়ে মনির খাঁ ও সফর আলীসহ আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতাকামী ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করেন। ওই সময় রাজাকাররা বাড়িতে লুটপাট করে।

(ঢাকাটাইমস/০৪নভেম্বর/এমএবি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আর নেই

লভ্যাংশের টাকা আত্মসাৎ মামলা: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিচার বিভাগ আরও শক্তিশালী হবে: প্রধান বিচারপতি

জি কে শামীমের জামিন ঘিরে আবারও প্রতারণা, এক সপ্তাহ নিষিদ্ধ আইনজীবী 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা

ধর্ষণ মামলায় মুশতাক-ফাওজিয়ার স্থায়ী জামিন

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

টিপু-প্রীতি হত্যাকাণ্ড: আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :