৫১% বাড়িয়ে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি আট হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:২৫ | প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৬
ফাইল ছবি

শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করলেও নিম্নতম মজুরি বোর্ড মাসে আট হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপর জারি করে এটি কার্যকর করা হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা সড়কে মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে এক সভার পর শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন মজুরি কাঠামোর ঘোষণা দেন।

শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে আট হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৪ হাজার ১০০ টাকা; বাড়ি ভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা এবং অন্যান্য এক হাজার ৮৫০।

পুনর্নির্ধারিত অন্যান্য ধাপগুলোর মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, ‘ডিটেইলস কাজের এখনও বাকি আছে। পূর্ণাঙ্গ কাজ করে আমরা গেজেট করব। গ্রেডগুলো আগের মতোই থাকবে।’

ঘোষিত মজুরি বর্তমান ন্যূনতম মজুরির চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এতদিন ধরে সেই হারে বেতন পাচ্ছিলেন পোশাক শ্রমিকরা।

সে সময় আগের নূন্যতম মজুরির তুলনায় প্রায় শতভাগ বেতন বেড়েছিল। আবার চলতি বছরই সরকারি শিল্প কারখানার শ্রমিকদের বেতন শতভাগ বাড়িয়ে নূন্যতম মজুরি করা হয় ৮৩০০ টাকা।

এবার মজুরি বোর্ড গঠনের পর শ্রমিক সংগঠনগুলো ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা দাবি করে আসছিলেন। তবে এর বিপরীতে পোশাক শিল্প মালিকরা ৬ হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে নূন্যতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বাবলু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আট হাজার টাকা মজুরি আমরা অবশ্যই মানব না। এটা কোনো যুক্তিতেই পড়ে না আমরা পরবর্তীতে আন্দোলনে যাব।’

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। আর তখন পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের কথা বলা হয়। এই হিসাবে আগামী ডিসেম্বরের আগেই নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করার কথা।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। বোর্ডকে তখন ছয় মাসের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে সুপারিশ দিতে বলা হয়। গত ১৮ আগস্ট ৬ মাস পূর্ণ হয়। এরপর আরও তিন মাস সময় বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায়।

বোর্ডের ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডে চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মালিকপক্ষের প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মজুরি বোর্ডে ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করে। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নূন্যতম বেতন ১৬ হাজার টাকা ও গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ১৮ হাজার টাকা করার দাবি জানান।

আর গত ১৬ জুলাই পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নিম্নতম মজুরি নির্ধারণে বোর্ডের সদস্যদের কাছে ন্যূনতম মজুরি ছয় হাজার ৩৬০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বেতন বেড়েছে এক হাজার

পোশাক খাতে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করে, এদের উপর নির্ভরশীল কয়েক কোটি মানুষ জানিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকগুলো মিটিং করে বাজার বিশ্লেষণ করে সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাব যায়, মালিকদের পক্ষ থেকেও একটা প্রস্তাব আসে। অনেক মিটিং হওয়ার পরও তারা ঐক্যমতে আসতে পারেননি।’

‘প্রথমে মালিকদের পক্ষ থেকে মজুরি ছয় হাজার টাকা, এরপর আরও কিছু বাড়াতে বাড়াতে সাত হাজার টাকায় তারা আটকে যান এবং তারা বলেন তারা এর বেশি পারবেন না। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১২ হাজার টাকার প্রস্তাব ছিল, তারা বলেছেন ১২ হাজার টাকার কমে হবে না। এই যখন অবস্থা, আমরা দেখলাম অক্টোবরের পর নির্বাচনকালীন সরকার হবে ও নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হবে, তখন এই কাজগুলো নীতিগতভাবে এই সরকার করতে পারবে না।’

‘বেতন পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে যখন অচলাবস্থা তখন প্রধানমন্ত্রী নিজে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের ডেকে আলাপ করেন। আলাপ করে তিনি সিদ্ধান্ত দেন- আমাদের সব পক্ষকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। গার্মেন্টেসের ক্রেতারা এখন মূল্য কমিয়ে দিয়েছে।’

‘সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ন্যূনতম মজুরি হবে ৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ যে শ্রমিকরা আজতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবে তার মজুরি হবে ৮ হাজার টাকা পাবে সব মিলিয়ে। গ্রেড অনুযায়ী বেতন আরও বাড়বে। কোন শ্রমিককে ৮ হাজার টাকার কম মজুরি দেয়ার সুযোগ কোন মালিকের নেই।’

বোর্ডের চেয়ারম্যান যা বললেন

ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি বোর্ড আজকে পঞ্চম সভায় বসেছিলাম। আমরা দুই পক্ষের প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম বেশ কয়েকটি মিটিংয়ে। একটা পর্যায়ে আমরা থেমে গিয়েছিলাম, মালিকরা কোনো ক্রমেই সাত হাজার টাকার বেশি দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। আমরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চেষ্টা করেছি।’

‘মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেখানে আরও এক হাজার টাকা বেড়েছে। সেই বিষয়টি আজ বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়। আমরাও সবাই সম্মতভাবে মনে করেছি ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা যুক্তিযুক্ত হবে। সেই হিসেবে আমরা আজকে সুপারিশটা তৈরি করেছি।’

বোর্ডে মালিক পক্ষের সদস্য ও বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ন্যুনতম মজুরি ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হই। শ্রমিক প্রতিনিধিরা ১২ হাজার টাকায়ই থাকে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা আট হাজার টাকা দিতে রাজি হই। এটা আগামী ডিসেম্বরের বেতন থেকে কার্যকর হবে।’

মেনেছেন বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি

পোশাক শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও শ্রমিক লীগের মহিলা সম্পাদিকা সামসুন্নাহার ভূইয়া বলেন, ‘এই মজুরিটা শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান সবকিছু মিলিয়ে খুব বেশি হয়ে গেছে আমি তা বলব না। মালিকরা ৬ হাজার ৩৫০ টাকার পর আবার বাড়াতে চাচ্ছিলেন না। আমাদের পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম ১২ হাজার ২০ টাকা। পরে প্রধানমন্ত্রী বিজিএমইএর সভাপতিকে মাথায় হাত দিয়ে বাচ্চাদের মতো বলতেছিলেন ছোট ভাই এটা মেনে নেও। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আট হাজার টাকা আমরা শ্রমিকরাও মেনে নিয়েছি।’

শ্রমিক প্রতিনিধি ও শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফললুল হক মন্টু বলেন, ‘শ্রমিকরা অনেক দাবি-দাওয়া করেছিলেন; তারা ১২ হাজার, ১৬ হাজার, ১৮ হাজার টাকা দাবি ছিল। অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী সব কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

নতুন মজুরি কাঠামো মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষ মেনে নেবে বলে প্রতিমন্ত্রী চুন্নু আশা প্রকাশ করলেও এই মধ্যে আপত্তি এসেছে বামপন্থি শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।

বিকাল ৩টায় মজুরি বোর্ড যখন তোপখানার কার্যালয়ে সভা করছিল, তখনই ভবনের নিচে বিক্ষোভ করছিল গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, শ্রমিক সংহতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

সাড়ে ৪টার দিকে সভা শেষ করে যখন মজুরি বোর্ডের সদস্যরা সচিবালয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বিক্ষুব্ধ কয়েকশ জন স্লোগান দিচ্ছিলেন- ‘১৬ হাজার টাকার কমে ন্যূনতম মজুরি মানব না’।

তৈরি পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে দৃশ্যত রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো অনুসরণ করেছে সরকার।

সম্প্রতি শ্রম প্রতিমন্ত্রী চুন্নু রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি শতভাগ বাড়িয়ে ৮৩০০ টাকা করার প্রস্তাব সংসদে তোলেন। বর্তমানে এই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৪ হাজার ১৫০ টাকা।

ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/ডিএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ফিরলেন ২০ বাংলাদেশি

৯৬ শতাংশ সিগারেটের প্যাকেটে নেই উৎপাদন তারিখ, টিসিআরসি বলছে কর ফাঁকির চেষ্টা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করতে জনপ্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ

এবার বাড়ল অকটেন, পেট্রল ও ডিজেলের দাম

চুনাপাথর ও ২৩ নাবিক নিয়ে দেশের পথে এমভি আবদুল্লাহ

শুক্রবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ইঙ্গিত শিক্ষামন্ত্রীর

প্রবাসীদের সব সমস্যা জানি, সমাধানও হবে: প্রতিমন্ত্রী

কোনো কিছুর সহায়তা ছাড়াই হাঁটতে পারবেন আনু মুহাম্মদ: চিকিৎসক

তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের মানুষকে সাবধানে থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতে সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে: প্রতিমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :