‘নাই’ হয়ে যাচ্ছে ২২০ কোটি টাকা

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪২
অ- অ+

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) অবসায়নের ঘোষণায় সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা বিপাকে পড়েছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার দর তিন টাকা নামার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ এর লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। শেয়ারধারীরা জানার চেষ্টা করছেন আদৌও তারা টাকা ফেরত পাবেন কি না।

পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার সংখ্যা ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার মাত্র ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে সিংহভাগই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ১০ শতাংশের মতো আছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগ।

কোম্পানি অবসায়ন হলে আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ তার দায়ের চেয়ে বেশি। ফলে টাকা দিতে সমস্যা হবে না। তবে শেয়ারধারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাবেন কি না এই প্রশ্নের জবাব তারাও দিতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও জানে না কী হবে। তারা বলছে, আদালত যা বলে সেভাবেই হবে সব।

এই কোম্পানির শেয়ারের ৬৭ দশমিক ১০ ভাগ ধারণ করছেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। শেয়ারের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৬৪১টি। শেয়ারের অভিহিত মূল্য অনুসারে এই শেয়ারের মোট মূল্য ১৯১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

বিপাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও। তারা কিনে রেখেছেন দুই কোটি ৭৬ লাখ ৫৯ হাজার ১২৯টি শেয়ার। অভিহিত মূল্যে দাম হয় ২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকারও বেশি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৭টি। অভিহিত মূল্যে হয় ৫৪ লাখ ২৩ হাজার টাকার কিছু বেশি।

অবশ্য কার ক্রয়মূল্য কত, সেটির হিসাব করা কঠিন। ২০১০ সালে পতনের আগে যারা এই কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের দাম পড়েছে ২১০ টাকার বেশি। পরে ক্রমাগত দাম কমতে কমতে দুই বছর ধরে অভিহিত মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছে। গত এক বছরে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭ টাকা ৬০ পয়সা, আর দুই বছরে সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৫ টাকা ৫০ পয়সা।

অভিহিত মূল্যে যদি ধরা হয়, তাহলে বলা চলে প্রায় ২২ কোটি শেয়ারের ২২০ কোটি টাকা ‘নাই’ হয়ে গেছে।

অবসায়ন হওয়া প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীর অর্থ কোন উপায়ে ফেরত দেয়া হবে, সে বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে কিছু বলা নেই। এক্ষেত্রে আদালত যে উপায়ে অর্থ পরিশোধ করতে বলবেন, তা কার্যকর হবে। তবে সাধারণভাবে সম্পদ বিক্রি এবং সরকারের সহায়তার আলোকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হয়।

আর এজন্য প্রথমে প্রতিষ্ঠানের দায় ও সম্পদ নিরূপণ করা হয়। এরপর একটি স্কিম ঘোষণা করা হয়। যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে কোনো পরিমাণ আমানত কবে নাগাদ পরিশোধ করা হবে তার উল্লেখ থাকে।

গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসায়নের ঘোষণা দেয়। এতে জানানো হয়, পিপলস লিজিংয়ের আমানতের পরিমাণ দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা। বিপরীতে সম্পদ আছে তিন হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম বলেন, অবসায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়টা এখন হাইকোর্টের উপর নির্ভরশীল। যদি পাওনার তুলনায় দেনার পরিমাণ কম হয় তাহলে দিতে তো কোনো অসুবিধা নেই। আর দেনা বেশি হয় সেটা আইন অনুযায়ী পাবে। আমরা হিসাব শুরু করেছি দেনা পাওনার।

কিন্তু সম্পদ বিক্রি করার পরও পিপলস লিজিং এর সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ভাগ্যে কি কোনো টাকা জুটবে? বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কারণ, গত মার্চের হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দায় আছে ৬৭ টাকা। তাই সম্পদ বিক্রির টাকা বণ্টন করার কথা শেয়ারহোল্ডারদের ভাগে কিছু না পড়ার বিষয়টিই ধরে নেয়া যায়।

আইন অনুসারে সম্পদ বিক্রি করে অর্থ এলে প্রথমে পরিশোধ করা হবে লিক্যুইডেটরের ফি ও সংশ্লিষ্ট ব্যয়। এরে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাওনা শোধ করতে হবে। এরপরও কোনো অর্থ থাকলে তা দিয়ে শোধ করতে হবে জামানতসম্পন্ন বা গ্যারান্টেড কোনো ঋণ, ঋণপত্র, বন্ড, ডিবেঞ্চার, প্রেফারেন্স শেয়ার ইত্যাদির গ্রাহকদের পাওনা। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলেই কেবল তা সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা সম্পত্তি ও দায় নিরুপণ করছি। এরপর হাইকোর্ট যেভাবে দায় পরিশোধ করতে বলবেন সেইভাবে করা হবে।’

সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কী হবে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদ ও দায় প্রথমে নিরুপণ করা হবে। সম্পদের মধ্যে বিতরণকৃত ঋণ, স্থাপনা, গাড়ি, নগদ টাকা ও ব্যাংক জমার অর্থ ইত্যাদি। এ সম্পদ দায় পরিশোধে ব্যাংক গ্যারান্টি, ঘর ভাড়া এবং বিভিন্ন আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ করা হবে। এরপর যদি অর্থ থাকে তবে সাধারণ বিনিয়োগকরী পাবে।’

সম্পদ যদি না থাকে তবে শেয়ারধারীদের দায় কে নেবে- এ প্রসঙ্গে আবু আহমেদ বলেন, ‘এর দায় অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংককে নিতে হবে। কারণ একদিনে তো পিপলস লিজিং এর এ অবস্থা হয়নি। আগে থেকে কেন বাংলাদেশ ব্যাংক নজর দেয়নি। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি।’

ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/আরএ/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির আন্দোলনের মুখে পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার
বাংলামোটরে এনসিপির জুলাই চিত্র প্রদর্শনীর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
তাড়াশে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়িছাড়ার অভিযোগ
সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা