বদলি শাস্তিতেই থাকছেন এসপি হারুন!

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২১

আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের কাছে চাঁদা দাবি ও তার পরিবারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠা বিতর্কিত পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে এখনই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ না পাওয়ায় আপাতত বদলি শাস্তিতেই থাকছেন পুলিশের আলোচিত এই কর্মকর্তা।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এসপি হারুনের বিরুদ্ধে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তখন তদন্ত এবং বিভাগীয় শাস্তির বিষয়টি সামনে আসবে।

তবে কারও অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে বাহিনীর স্বার্থে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা দরকার বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ খান। তিনি বলেন, এতে অন্য সদস্যরা সতর্ক হবেন। তারা আর অপরাধ করতে উৎসাহিত হবেন না।

গত রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে এসপি হারুন অর রশীদকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে (ট্রেনিং রিজার্ভ) সংযুক্ত করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এসপি হারুন চাঁদার জন্য একাধিক শিল্পপতিকে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয় দেখিয়েছেন।

৩১ অক্টোবর রাতে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেলের ব্যবহৃত গাড়িটি চালকসহ ঢাকা ক্লাব থেকে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের সদস্যরা। পরদিন ১ নভেম্বর মধ্যরাতে গুলশানের বাসা থেকে রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও তার ছেলে আনাব আজিজকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, যা রাসেলের ফেসবুকে দেওয়া ভিডিওতে দেখা যায়। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র থেকে এই ব্যবসায়ীর পরিবারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় থানাকেও জানানো হয়নি।

এসপি হারুন পরদিন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, রাসেলের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, ১ হাজার ২০০ ইয়াবা, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়। গাড়িতে তখন রাসেলের স্ত্রী ও ছেলে ছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আর মাদক ও অস্ত্র মামলঅ দেওয়া হয় রাসেল ও তার গাড়িচালকের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আম্বার গ্রুপের মালিকপক্ষের একজন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের চাঁদার দাবির বিষয়টি সামনে এলেও এখনই তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ প্রধানের কাছে কোনো অভিযোগ করছেন না। সোমবার কেবল তাদের জামিন হয়েছে। এখন তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন।’

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) এস এম রুহুল আমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী (রাসেল) তার কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ কেউ এখনো দেয়নি। অভিযোগ রিসিভ হলে সেটা অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তাকে (হারুন) জাস্ট বদলি করা হয়েছে।’

হারুনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গুরুতর বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘এটার প্রমাণ অনুসন্ধান করে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে খুব শক্ত শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এখানে নমনীয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

সাবেক পুলিশপ্রধান বলেন, ‘ব্যবসায়ী এখনই কোনো অভিযোগ না দিলেও গণমাধ্যমে আসা অভিযোগর ভিত্তিতে এসপি হারুনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত। কারণ অভিযোগ গুরুতর হলে অনেক সময় স্বউদ্যেগে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এতে অসুবিধার কিছু নেই।’

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে একজনের পরিবার-পরিজনকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে এটা তো ভয়ংকর রকম ব্যাপার। পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এটা একটা বড় আঘাত। এই রকম বিষয় নিয়ে কেউ নমনীয় হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না।’

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শওকত আজিজ রাসেল গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৬ সালের ৫ মে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের ব্যক্তিদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন হারুনের চাঁদাবাজি নিয়ে।

রাসেল বলেন, নির্বাচন কমিশনের আদেশে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহারের পর এসপি হারুন অর রশীদ তার কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। তার পক্ষে উপপরিদর্শক আজহারুল ইসলাম আম্বার ডেনিমের স্টোর ম্যানেজার ইয়াহিয়া বাবুকে ফোন করে টাকা দাবি করেন। এর আগেও গুলশান ক্লাবের লামডা হলে ও গুলশানের কাবাব ফ্যাক্টরি রেস্তরাঁয় এসপি হারুন তাকে ডেকে নিয়ে ৫ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঠিকানায় পাঠাতে বলেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আম্বার ডেনিমের ৪৫ জন শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গাজীপুর থানায় ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়।

যেভাবে আলোচনায় আসেন হারুন

২০১১ সালের ৬ জুলাই ঢাকায় হরতাল চলছিল। মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় তখনকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে ফারুককে পিটিয়ে আলোচনায় আসেন এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় তিনি গাজীপুরের এসপি ছিলেন। তখন তার বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপি। ওই নির্বাচনের সময় কিছুদিনের জন্য তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে আবার তাকে সেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/৫নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :