‘থানকুনি’ ‍গুজবে ঘুম হারাম!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০২০, ১৬:৪৯

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়া নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ। এরমধ্যে গুজব ছড়িয়েছে, থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে করোনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে পাতা খাওয়ার আগে ওজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিতে হবে। ফজরের আগেই পাতা খেতে হবে বলেও ছড়ানো হয়।

বুধবার মধ্যরাতে একজন থেকে অন্যজন হয়ে অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই গুজব। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকজন আলেমের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে গুজবটি ছড়ানো হয়, যা ঢাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে।

যদিও যাদের কথা বলা হয়েছে তারা নিজেরাও বিষয়টি জানেন না বলে ঢাকা টাইমসকে বলেছেন। থানকুনি পাতা খাওয়ার বিষয়টি তারা স্বপ্নে পেয়েছেন বলা হলেও এসব আলেম বলছেন, এটা ভিত্তিহীন। কেউ এটা ছড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর রাতে নিজ বাড়ির আঙিনা, আশপাশের ঝোঁপঝাড় থেকে থানকুনি পাতা তুলে এনে নিজে খেয়েছেন। পরিবারের অন্যের মুখেও তুলে দিয়েছেন। কেউ আবার টেলিফোন করে দূরে থাকা স্বজনদেরও যেকোনোভাবে থানকুনি পাতা সংগ্রহ খাওয়ার অনুরোধ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানকুনি পাতা খেলে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এই ‍গুজবে বেশি কান দিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। যেসব আলেমের নাম বলা হয়েছে তারাও বেশিরভাগের বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলে। তবে কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি কোন আলেম তাদের স্বপ্নে পাওয়ার কথা বলেছেন। সবারই ভাষ্য তারা শুনেছেন।

গুজবে কান দিয়ে থানকুনি পাতা খেয়েছেন এমন বেশ কয়েকজনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ ছারছীনার পীর, কেউ আবার চরমোনাই পীর স্বপ্ন দেখে থানকুনি পাতা খাওয়ার কথা বলেছেন বলে দাবি করেন। কেউ আবার জৈনপুরী, বরগুনার চলাভাঙ্গার পীর, পটুয়াখালীর চৈতার পীর, মির্জাগঞ্জের মাওলানা মোতাহার হোসেন (সুফি সাহেব) এসব বলেছেন বলে দাবি করেন।

তবে ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে দুজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা দুজনই এমন কিছু বলেননি বলে দাবি করেছেন।

জৈনপুরের পীর মুফতি এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী এ বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা রিউমার। মনে হয় কথাটি বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্যই নামাজ পড়ে দোয়া করলে আল্লাহর যেকোনো বালা ‍মসিবত থেকে মানুষ রক্ষা পাবেন। আল্লাহ বিপদমুক্ত করবেন। কিন্তু থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এমন কথা শুনিনি, বলিও না। এটা ভিত্তিহীন কথা।’

এই আলেম বলেন, ‘আমার কাছে অনেকে জানতে চেয়েছেন। সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি সচেতন থাকতে। পাশাপাশি খাটি মধু সকাল-বিকাল তিন চামচ করে খাওয়া এবং গরম পানি দিয়ে কুলি করার পরামর্শ দিচ্ছি। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তো অবশ্যই মানুষ ওজু করেন। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার কাজটাও হয়ে যায়।’

বাংলা কলেজের আবুল হাসান টিটু শেষ রাতে মায়ের কাছ থেকে থানকুনি পাতা খাওয়ার জন্য ফোন পেয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে ফোন দিয়ে মা বলেন কোন হুজুর নাকি বলছেন সূর্য উঠার আগেই তিনটা থানকুনি পাতা খেলে আর করোনাভাইরাস হবে না। যেভাবে হোক থানকুনি পাতা খাইতে হবে।’

কেরাণীগঞ্জে অবস্থানরত পটুয়াখালীর সালেহ মৃধা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গতকাল রাত দুইটায় বড় বোন ফোন করে থানকুনি পাতা খাওয়ার জন্য বলেছেন। পরে আবার তিনটার দিকে মা ফোন দিয়ে বলেছেন হুজুরে খেতে বলছেন, যেভাবে পারো পাতা খাও। আরও কয়েকজন ফোন দিয়েছেন। ফোনের যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতেই পারিনি।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী উপমা ইসলাম রূপা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছুটিতে বাড়ি আসছিলাম। রাতে বাবা, মা ঘুম থেকে উঠিয়ে জোর করে ওজু করালেন। পরে থানকুনি পাতা খাওয়ালেন। আমি কিছুই বুঝিনি। তাদের যুক্তি এই জিনিস তো খারাপ না, খেতে সমস্যা কী!’

রূপা বলেন, ‘তার বাবা-মাও নিজেরা শুনেননি। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা ফোন করে জানিয়েছেন জৈনপুরী পীর স্বপ্নে দেখছেন থানকুনি পাতা খেলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।’

এদিকে মির্জাগঞ্জের সুফিসাহেব বলে পরিচিত মাওলানা মোতাহার হোসেন ঢাকা টাইমসের কাছে তার স্বপ্নের খবর শুনে চমকে ওঠেন। বলেন, ‘এসব মানুষের ঈমান নষ্টের ষড়যন্ত্র। থানকুনি পাতা খাওয়ার কথা আমি তো কাউকে কিছু বলিনি। কীভাবে এসব কথা ছড়ানো হলো তাও জানি না। সবাইকে বলবো সচেতন থাকুন। আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে বাঁচতে দোয়া করুন।’

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :