ঝিনুক খুঁড়লে মেলে ভালোবাসা

কষ্টে, শ্রমে, ঘামে আমরা কিছু আর এখন অর্জন করতে চাইনা। লিখতে চাইনা। পড়তে চাইনা। মেধাবী বলে দাবি করি, কিন্তু মেধার লড়াইয়ে অংশ নিতে চাইনা।
মাটির ব্যাংকে দিনের পর দিন, সময় নিয়ে এক পয়সা, দুই পয়সা জমাতে চাইনা। এত সময় কোথায়। এত ধৈর্যই বা কার। আমরা চাই দ্রুত টাকা-পয়সার মালিক হতে।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়া দ্রুততম সাতারু ব্রজেন দাসের গল্পটা এখন আর আমরা শুনতে চাইনা। বরং আশেপাশে কে কতো দ্রুত ধনী হলো, তাকে নিয়ে মেতে থাকি।
আমরা ভালোবাসতে চাইনা। ভালোবাসতে পারিওনা। অসহায় মানুষের পাশে থাকার গল্পটা মুখে বলি, বাস্তবে থাকিনা। যা করি, তা কেবল ছবি তোলার জন্য, লোক দেখাতে।
আমরা কেবল চাই আর চাই। বাড়ি, গাড়ি, অর্থ, বিত্ত, যশ, খ্যাতি, ব্যাংক, ব্যালেন্স। চাই বিদেশেও দ্বিতীয় নিবাস। বাড়ি, গাড়ি, বিত্ত-বৈভব থাকা চাই সেখানেও।
মন্ত্রী হতে চাই। এমপি হতে চাই। জননেতা হতে চাই। যে যেভাবে পারি, কেবল তর তর করে উপরে উঠতে চাই। জীবন জুড়ে কেবল নানান চাওয়া আমাদের।
চাইতে চাইতে আমরা এখন তাল গোল পাকিয়ে ফেলেছি সবকিছুতেই। আজকাল জোর করে ভালোবাসাটাও চাই। বাবার চাই। মায়ের চাই। ভাইর চাই। বোনের চাই। বউর চাই। স্বামীর চাই। বন্ধুর চাই। প্রতিবেশীর চাই। আত্মীয়-স্বজন-সহকর্মীর ভালোবাসা চাই। এক ছাদের নিচে থেকে চাই। কেউ এক আকাশের নিচে থেকে চাই। কেউ মানুষের, কেউ জনগণের ভালোবাসা চাই।
কিন্তু অমরা বুঝতে চাইনা- অবিশ্বাসী পথে হেঁটে, দাম্ভিক হয়ে, মন না বুঝে, কেবল অর্থ-বিত্ত আর ক্ষমতার জোরে ভালোবাসা মেলেনা। ভালোবাসা চাইলে ভালোবাসতে হয় আগে।
ঝিঁনুকের ভেতরে যেমন মুক্তো থাকে, ভালোবাসাটাও তেমন। এটাকে হৃদয়ের তলদেশ থেকে খুঁড়ে আনতে হয়। কষ্টে, শ্রমে, ঘামে জয় করতে হয় । যে এ কাজটা ধৈর্য ধরে, সততার সঙ্গে পারে- ভালোবাসাটা তার জীবনেই মেলে। ধনী-গরীব, স্থান-কাল-সময়, ধর্ম-বর্ণ- ভালোবাসায় কখনও বাধা নয় ।
লেখক:
শেখ মামুনুর রশীদ
সিনিয়র সাংবাদিক ও নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)

মন্তব্য করুন