ব্যাংকে ছাঁটাই না করে বেতন কমানোসহ ১৩ নির্দেশনা বিএবির

করোনাভাইরাসের প্রকোপজনিত সংকট দেখিয়ে আগামী দেড় বছরের জন্য ১৫ শতাংশ বেতন-ভাতা কমানো, সব ধরনের নিয়োগ-পদোন্নতি বন্ধ এবং পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইনে কোনো বিজ্ঞাপন না দেওয়াসহ খরচ কমাতে ১৩টি নির্দেশনা দিয়ে সব ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি। সংগঠনটি ৪০ হাজার টাকার বেশি বেতনধারী সব গ্রেডের কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের বেতন ১৫ শতাংশ কমানোর কথা বলেছে। বিএবির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোত ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ব্যাংকাররা।
এমডি ও চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব গ্রেডের যেসব কর্মকর্তা ও নির্বাহীর মাসিক গ্রস বেতন ৪০ হাজার টাকার বেশি তাদের সবার ১৫ শতাংশ কমাতে হবে। আগামী দেড় বছর পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট ও ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যাবে না। ব্যাংকের চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। এখন থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশনে সব ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখতে হবে। নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা এবং সাব-ব্রাঞ্চ খোলা যাবে না। সব ধরনের স্থায়ী সম্পদ কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সব বিদেশি ট্যুর বন্ধ রাখতে হবে। সব ধরনের সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখতে হবে। সব গ্রাহক গেটটুগেদার বন্ধ রাখতে হবে। অফিসার ও এক্সিকিউটিভ গেটটুগেদার ও ম্যানেজার কনফারেন্স বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করতে হবে। বড় ধরনের ব্যয় যেমন আইটি রিলেটেড, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার কেনা আপাতত সীমিত পর্যায়ে রাখা। অন্য সব ব্যয় সীমিত পর্যায়ে রাখতে হবে। কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংক সচল রাখার জন্য এসব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠির শুরুতে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংক খাতের ১৩টি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সুদের হার কমেছে। আদায় প্রায় শূন্যে নেমেছে। আমদানি-রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বাণিজ্য কমার কারণে আনুষঙ্গিক আয় একেবারে কমেছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স কমেছে। ক্রেডিট কার্ডে আদায় ও আয় কমেছে। এপ্রিল ও মে মাসের সুদ এক বছরের জন্য ব্লক করে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে করোনাভাইরাসের ২ মাসে ব্যাংকিং সেবা দেওয়ায় বিপুল অঙ্কের ব্যয় করতে হয়েছে। করোনাভাইরাসের এ সময়ে স্যানিটাইজেনশসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। মৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাস্থ্য বীমা বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ হচ্ছে। ব্যাংকের আয় কমে যাওয়ায় নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ রকম বাস্তবতায় এসব পরিপালন করতে বলা হয়।
এদিকে ব্যাংকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের অন্যতম ব্যাংক খাতে প্রচুর নতুন চাকরি হচ্ছিল। অনেক নতুন নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা স্থগিত আছে। এখন তো সেসব নিয়োগ হবে না, উল্টো বেতন কমানো হবে। এ অবস্থা তৈরি হলে মাথাপিছু আয় কমাসহ নানা নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। সিটি ব্যাংকে বেতন কমানোর প্রভাবে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সব ব্যাংকের ওপর একই রকম সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তার ফল ভালো হবে না।
উল্লেখ্য, ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত ৫৯টি ব্যাংকে বর্তমানে জনবল রয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে আছেন এক লাখ ৯ হাজার ১২৭ জন। বিদেশি ব্যাংকে তিন হাজার ৮৫৮ জন। আর সরকারি ব্যাংকে ৬৫ হাজার ৪৪৫ জন।
ঢাকাটাইমস/১৫জুন/আরএ/এমআর

মন্তব্য করুন