পর্বতচূড়ায় ঠান্ডা ও বৈরি যুদ্ধক্ষেত্র 'গালওয়ান ভ্যালি'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০২০, ১৫:৩১
অ- অ+

লাদাখের গালওয়ান নদী ঘেঁষা উপত্যকায় সোমবার রাতে চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে ভারতের ২০জন সৈন্য নিহত হয়েছেন। বিশ্বের দুই জনসংখ্যা-বহুল দেশ, যাদের সৈন্যসামন্তের সংখ্যাও পৃথিবীতে অন্যতম বৃহত্তম, তারা কয়েক সপ্তাহ যাবৎ পর্বতচূড়ায় বড় সংঘর্ষের আগে ছোট ছোট বিবাদে জড়িয়েছেন।

কিন্তু সংকট চরমে ওঠে যখন একটিও গুলি বিনিময় না করেও ভারতের ২০জন সৈন্য নিহত হন, যদিও চীনের হতাহতের সংখ্যা এখনো প্রকাশ করেনি দেশটি।

সংঘাতস্থলটি দুই দেশের মধ্যকার ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত, যাকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি বলে। দুই দেশের মধ্যে ৩,৪৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে এবং সীমানা ও ভূখণ্ড নিয়ে পুরনো বিবাদ রয়েছে।

এই গালওয়ান উপত্যকার আবহাওয়া অত্যন্ত বৈরি, সেই সঙ্গে এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে। জায়গাটা এলএসির পশ্চিম অংশে আকসাই চীনের কাছে অবস্থিত, চীন-শাসিত ওই বিতর্কিত জায়গার মালিকানা ভারত দাবি করে আসছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দুদেশের সৈন্যরা যে খাড়া শৈল-প্রবাহের ওপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, কিছু সৈন্য পিছলে খরস্রোতা গালওয়ান নদীতে পড়ে গেছেন, যেখানে পানির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে, যারা নিহত হয়েছেন তাদের ১৭ জনই গুরুতর আহত ছিলেন, যারা সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১০ হাজার ফুট উঁচুতে হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এদের কেউ কেউ আঘাত নিয়ে হিমশীতল আবহাওয়ায় টিকতে না পেরে মারা গেছেন।

লাদাখ ভারতের সবচেয়ে উঁচু মালভূমি এবং শীতল প্রান্তর। শীতকালে যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি হয়ে যায়। সেখানকার পাহাড়ি ঝর্ণা ও জলাভূমি এবং কিছু ঢাল ও অল্প পরিমাণ সমতল জমি ছাড়া বেশিরভাগ অংশের বালিমাটিতে কোন গাছপালা হয় না।

লাদাখের উচ্চতায় মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রস্টবাইট বা ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া, চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে হাই-অল্টিচ্যুড পালমোনারি ওডেমা বলা হয়। যা মূলত উচ্চতাজনিত কারণে বাতাসে অক্সিজেন কম থাকা এবং প্রবল ঠাণ্ডার কারণে হয়।

আরেকটি কারণ হচ্ছে হাই-অল্টিচ্যুড সেরেব্রাল ওডেমা, যা হয় উঁচু এলাকায় ভ্রমণের কারণে শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্ক থেকে এক ধরনের জলীয় পদার্থ নিঃসরণের কারণে হয়।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন বৈরি পরিবেশ হবার কারণেই ঐতিহ্যগতভাবে এলএসির ওই এলাকাটি শান্তিপূর্ণ।

কিন্তু ১৯৬২ সালের পর হঠাৎ এলাকাটির পরিবেশ মঙ্গলবারের মত প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার কারণ কী? মে মাসে ভারতের একজন সামরিক বিশ্লেষক অজয় শুক্লা বলেছিলেন, 'গালওয়ান ভ্যালি ক্রমেই হটস্পট হয়ে ওঠার কারণ হচ্ছে, ওখানেই ভারত সম্প্রতি লাদাখের একেবারে প্রত্যন্ত ও নাজুক এলাকায় একটি নতুন রাস্তা বানিয়েছে।'

কয়েকশ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি ২০১৯ সালে বানানো হয় এবং সেটিকে মালভূমির ওপরে একটি বিমান ঘাঁটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। দাউলাত বেগ ওল্ডির ওই বিমানঘাঁটিটিকেও নতুন করে চালু করা হয়, এই বিমানঘাঁটিটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থানরত বিমানঘাঁটি।

ভারতের এই স্থাপনার ব্যাপারে শুরু থেকেই চীন সন্দিহান, বেইজিং এর সন্দেহ ওই রাস্তা দিয়ে দিল্লি সহজেই সীমান্ত এলাকায় সৈন্য এবং মালামাল পাঠাতে পারবে। মে মাসে ওই এলাকায় সীমান্তের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে চীনা সৈন্যবহর তাঁবু খাটায়, পরিখা খনন করে এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র এনে জড়ো করে। সেই সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবারের প্রাণহানির পর এই মুহূর্তে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/১৮জুন/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
অন্যের বাগানের আম চুরি করল ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকরা, থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ১
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক শনিবার
বিএনপি শুধু নির্বাচন নিয়ে কথা বললে বাংলাদেশ আশাহত হয়: সারজিস আলম
দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান আজ অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে: আমিনুল হক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা