করোনাকালে ক্লান্তি কাটিয়ে তরতাজা থাকবেন যেভাবে

লকডাউনে কয়েক মাস পেরিয়ে গিয়েছে । ঘরের যাবতীয় কাজ, অফিসের কাজের চাপ, অনিশ্চয়তা আর বিরক্তি মিলেমিশে ক্লান্ত করে তুলছে প্রায় প্রতিটি মানুষকে। শুধু বিশ্রামে এ ক্লান্তি কাটার নয়।
ব্যস্ত জীবনে নানা কারণে ক্লান্তি ভর করতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং কয়েকটি কৌশল মাথায় রাখলে ক্লান্তি দূর করা যাবে সহজেই।
আনলক পর্বে এ বার বাইরে বেরতেও হচ্ছে। এ সময় চাই এমন কিছু যা ভিতর থেকে চনমনে করে তুলবে। সেই ‘এমন কিছু’ টা হল সঠিক খাবার, হালকা ব্যায়াম ও ভাল ঘুম।
খান সঠিক খাবার
সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করুন। বহু সময় খালি পেটে থাকলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে গিয়ে ক্লান্ত লাগতে পারে।
আধ ঘণ্টা অন্তর কয়েক চুমুক করে পানি খান। সারা দিনে যেন আড়াই-তিন লিটার খাওয়া হয়। কারণ ঠিকঠাক পানি না খেলে পানিশূন্যতার হাত ধরে দেখা দিতে পারে ক্লান্তি।
কফি-কোলা-মদ বেশি খেলে পানিশূন্যতার আশঙ্কা বাড়ে। ক্লান্ত শরীরে মুড সুইং হতে থাকে ঘন ঘন। আবার বিকেলের দিলে চা-কফি বেশি খেলে ঘুম কমে যায়। সে কারণেও ক্লান্ত লাগতে পারে। কাজেই দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা-কফি খাবেন না। ঘুমের সমস্যা থাকলে বিকেলের পর আর খাবেন না, বিশেষ করে কফি।
দিনের প্রতিটি খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রোটিন খান। ডিম, দুধ, দই, মাছ, মাংসের পাশাপাশি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও খান সমানতালে। যেমন, ডাল, ছোলা, রাজমা, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বিনস, বীজ ইত্যাদি। পুষ্টি যেমন হবে, ক্লান্তি কমবে। অল্প খাবারে পেট ভরবে ও বেশিক্ষণ ভরা থাকবে বলে ওজনও বাড়তে পারবে না চট করে। তবে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি খেলে যদি পেটের সমস্যা হয়, রয়ে সয়ে খাবেন। কারণ গ্যাস-অম্বল-বদহজম হলেও ক্লান্তি বাড়বে।
ক্লান্তির একটা বড় কারণ রক্তাল্পতা। সে বিপদ ঠেকাতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। সব রকম আমিষ খাবারেই আয়রন থাকে। থাকে সবুজ শাক-সবজিতে। ভাতের পাতে লেবু তথা ভিটামিন সি খেলে সেই আয়রন ভালভাবে শোষিত হয়। খাওয়ার পর দই ও ফলের স্যালাড খেলেও একই কাজ হবে। চা-কফি-কোলা আয়রন শোষণে বাধা দেয়। কাজেই খাওয়ার এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে এ সব খাবেন না।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে ক্লান্তি বাড়তে পারে। এ বিপদ এড়াতে কলা, বাদাম, ছোলা, সবুজ শাক-সবজি খান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।
মিষ্টি বেশি খেলে এক ধাক্কায় অনেকটা সুগার চলে আসে বলে সাময়িকভাবে তরতাজা লাগে। বেশি সুগার এলে তাকে প্রশমিত করতে শরীরে ক্ষরিত হয় বেশি ইনসুলিন। এতে শরীর নানা রোগের আকর হয়ে ওঠে। তার পাশাপাশি খানিকক্ষণের মধ্যে সুগার একদম কমে যায়, যাকে বলে সুগার ক্রাশ। তখন খুব ক্লান্ত লাগে। কাজেই চিনি, মিষ্টি যত কম খাওয়া যায় তত ভাল। এর কোনও গুণ নেই। ক্ষতিই করে কেবল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খান পর্যাপ্ত। যে কোনও ফলেই সে আছে। বেশি আছে আমলকি, সবেদা, পেয়ারা, লেবু ও যে কোনও টক ফলে।
আপনি বাসায় এসেই কাপড় বদলিইয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিন। মেঝেতে লম্বা হয়ে ১০ মিনিট সুয়ে থাকুন। দেখবেন ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। আর এই সময়টাতে বড় করে নিঃশ্বাস নিতে পরেন এর মাধ্যমে আপনার দেহে অক্সিজেনের ভারসাম্য ঠিক হবে। ফলে ক্লান্তি দূর হবে।
অন্ধকার কিংবা কৃত্রিম আলো ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়। তাই ক্লান্ত মনে হলে যেতে হবে সূর্যের আলো ও খোলা বাতাসের সংস্পর্শে। আর এমন পরিবেশে সময় কাটাতে হবে অন্তত ২০ মিনিট। এগুলো উদ্দীপকের মতো কাজ করবে। এতে শরীর সতেজ অক্সিজেন আর এমন কিছু উপাদান পায়, যা ক্লান্তিবোধ নিমিষেই দূর করে দেয়।
নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন
অনিয়মিত, অগোছালো জীবনে ক্লান্তি বেশি আসে। কাজেই নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস করুন। মদ্যপানে লাগাম টানুন। ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। সকালে নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠুন। হালকা ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামে শরীরে ভাল হরমোন ক্ষরিত হয়। ক্লান্তি কমাতে এটির বিরাট ভূমিকা। মানসিক চাপ কমিয়ে মন ভাল রাখতেও সে অদ্বিতীয়। তার পাশাপাশি চেষ্টা করুন ভাল করে ঘুমাতে। কম ঘুমিয়ে শরীরের ক্ষতি করবেন না।
একটানা কাজ করতে করতে দেহে ক্লান্তি চলে আসে। তাই এ থেকে মুক্তির জন্য কিছু সময় আপনি হাটঁতে পারেন। এতে আপনি কাজের প্রতি আরোও বেশি মনোযোগী হতে পারবেন। এছাড়াও কিছুটা অনুশীলন করতে পারলে স্বস্তিবোধ হবে। মূল কথা হলো, দেহের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন