ওদের পরিবারের নারীরা কি সত্যিই নিরাপদ?

আতিক খান
  প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:২৩
অ- অ+

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রস্তুতি চলছে। এখনো একজন স্ত্রী একটা পাবলিক প্লেসে স্বামীর সাথে অবস্থান করেও ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণে সেঞ্চুরি করা মানিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আজ এসব ঘটনা দেখতে হতো না।

এদের অধিকাংশই গ্রাজুয়েশন করা প্রাক্তন ছাত্র, অথবা পড়ার মাঝপথে আছে। কি রকম শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এই প্রজন্ম। রাজনীতি করলেই কি চরিত্র কলুষিত হতে হবে। সরকারি নির্দেশে ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল, অথচ কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিশেষ ছাত্রদের সেখানে অবস্থান করতে দিয়েছেন। রুমে আবার বিদেশি পিস্তলসহ অস্ত্রশস্ত্রও পাওয়া গেছে। এসবের দায় হোস্টেল সুপার এবং সিলেট এমসি কলেজ প্রশাসনেরও।

গণধর্ষণের মতো একটা অরুচিকর কাজে এতগুলো ছাত্র এভাবে লাফিয়ে পড়ল? এদের মধ্যে একজনও কি মানুষ ছিল না? একজনও বাধা দিয়ে বলল না, এই মেয়েটা কারো স্ত্রী, কারো বোন, কারো মেয়ে... একে যেতে দাও। এর জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ওর শ্বশুরবাড়িই হয়তো আর মেয়েটাকে মেনে নিবে না। যদিও নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ছিল স্বামীরই। ৬ জন সোনার ছেলের সামনে স্বামী বেচারাই বা একা কি করবে? আর যদি শ্বশুরবাড়ি মেনেও নেয়, মেয়েটা কি এই দুর্ঘটনা আজীবন ভুলতে পারবে? এই নৃশংস ঘটনাটা বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ড হতেও জঘন্য৷

ওদের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের সামনে আনুন। কি রকম পারিবারিক শিক্ষা দিয়ে বড় করেছেন এদের বাবা-মায়েরা, তাদের মুখ হতে আমরাও শুনি। ওরা কি আদৌ লজ্জিত নাকি গর্বিত?

এই ছাত্রদের এত লাই দিয়ে মাথায় তোলে কারা? ওদের গডফাদারদের কি ধরা হবে? ঘটনাটা সন্ধ্যায় ঘটলেও মিডিয়ায় এসেছে রাত ১১টার পর। পুলিশকে ছাত্রাবাসে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে রাত দুটার পর। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা শুরুতে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন। আর প্রশাসন আপস করে মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছে বলে পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন সাংবাদিকরা। গণমাধ্যম জেনে যাওয়ায় দুটো চেষ্টাই বিফল হয়েছে। এই যে ধামাচাপা বা আপস যারা করতে চায়, ওদের পরিবারের নারীরা কি সত্যিই নিরাপদ?

এতসব নাটক করার ফলাফল হলো অপরাধীদের পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেয়া। স্থানীয় সব নেতা, কলেজ কর্তৃপক্ষ, পুলিশ সবাই উপস্থিত কিন্তু ধরতে পারল শুধু একটা মোটরসাইকেল। সব কজন ধর্ষক পলাতক। এদেরকে ধরলেও কি বা হবে। বড়জোর সংগঠন হতে বহিষ্কার করবে। এদের কি রাষ্ট্রীয় আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে? মানিকের কিছু হয়েছিল?

ধর্ষণ আর গণধর্ষণে রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততায় নারীদের নিরাপত্তা এখন শূন্যের কোঠায়। খাগড়াছড়িতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক নারী গণধর্ষণের শিকার হলো। ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে স্বামীকে ভর্তি করিয়ে রক্তের খোঁজ করার সময় দালাল কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সেই রোগীর স্ত্রী। এই কাজে সাহায্য করেছে আবার ধর্ষকের প্রেমিকা, চিন্তা করেন!!

৬ জন ছাত্রলীগ কর্মী আর অজ্ঞাত ৩ জন, মোট ৯ জনের নামে মামলা হয়েছে। পুলিশ কাউকে খুঁজে না পেলেও আজ সকালে আসামিদের দুজন ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন।

আচ্ছা, এদের পক্ষেও কি অনেক উকিল সাফাই গাইতে দাঁড়িয়ে যাবেন? আর একজন সাংবাদিককে চরিত্রহীন বলায় হইচই করা নারীবাদীরা গণধর্ষণ দেখেও সব কোথায় লুকিয়েছে? এদের কোনো বক্তব্য আজ সারাদিনেও দেখলাম না।

নির্যাতনের শিকার মেয়েটার রক্তাক্ত পায়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন, রক্তাক্ত পায়ের ছবিটা আপনার কোনো প্রিয়জনের। এবার বলুন আপনি এদের কি শাস্তি চান!

লেখক: মাস্টার মেরিনার ও লেখক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা