তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহচর, আগরতলা মামলার আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১২:১৫ | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৩
কর্নেল (অব.) শওকত আলী

চলে গেলেন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী। সামরিক বাহিনীতে বিশেষ অবদান, মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা, বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কারণে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বহুকাল।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী কর্নেল (অব.) শওকত আলী ১৯৩৭ সালের ২৭ জানুয়ারি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলাধীন লোনসিং বাহের দীঘিরপার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুন্সী মোবারক আলী এবং মাতার নাম মালেকা বেগম।

তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্ত হন এবং ১৯৭৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ লাভ করেন।

কর্নেল শওকত আলী ২৪ জানুয়ারি ১৯৫৯ তারিখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরে কমিশন লাভ করেন। পেশাগত দক্ষতা বিবেচনা করে তাকে করাচির নিকটবর্তী মালির ক্যান্টনমেন্টে অর্ডন্যান্স স্কুলের প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হয়।

ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বিপ্লবী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ২৬নং আসামি ছিলেন। এ মামলায় মালির ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৬৮ তারিখে গ্রেপ্তার হন। এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রায় ১৩ মাস কারাগারে ছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ তারিখে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে ১৯৬৯ সালে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকালে তিনি মাদারীপুর এলাকার কমান্ডার পরে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে সাব-সেক্টরের কমান্ডার ও প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি মুজিবনগরস্থ সশস্ত্রবাহিনীর সদর দপ্তরের স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। তবে অবসরের সময় তিনি কর্নেল পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে অর্ডন্যান্স সার্ভিসেসের পরিচালক নিযুক্ত হন।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৭৯ সালে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং এই সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। প্রজন্ম-৭১ এর জন্মলগ্ন থেকে এই সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি আফ্রো-এশীয় গণসংহতি সংস্থা (আপসো) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বিশ্ব শান্তি পরিষদ বাংলাদেশ শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন, পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তিন বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন।

কর্নেল শওকত আলী ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে তিনি আওয়ামী লীগ সংসদীয় দল তথা বিরোধী দলের হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালের মে মাস থেকে ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে কারাবরণ করেন।

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া ওই সংসদে পিটিশন কমিটি, সরকারি হিসাব কমিটি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালে অষ্টম সংসদে তিনি পুনরায় সদস্য নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এবং বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নবম সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি সর্বসস্মতিক্রমে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। তিনি ২২ মার্চ ২০১৩ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০১৩ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।

৫ জানুয়ারি ২০১৪, তিনি পুনরায় দশম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য আঞ্জু মোনোয়ারা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন কর্তৃক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত হন। দেশের প্রতি তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মাদার তেরেসা রিসার্চ কাউন্সিল কর্তৃক মাদার তেরেসা গোল্ডমেডেল লাভ করেন।

শওকত আলী আগরতলা মামলার উপর বাংলায় ‘সত্য মামলা আগরতলা’, ইংরেজিতে ‘আর্মড কোয়েস্ট ফর ইনডিপেন্ডেন্স’ এবং কারাজীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে 'কারাগারের ডায়েরী’ শীর্ষক বইয়ের লেখক। ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও আমার কিছু কথা’ ২০১৬ সালে ‘গণপরিষদ থেকে নবম সংসদ’ শিরোনামে আরেকটি তথ্যবহুল বই রচনা করেন।

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

সব অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

সব বাধা অতিক্রম করে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

দেশে ১৩ শতাংশ মানুষ চোখের গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আইওএমের কার্যকর ভূমিকা চায় বাংলাদেশ

সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিভেছে: পরিবেশ মন্ত্রণালয়

জাহাজে হজযাত্রী পরিবহনের বিষয়টি ‘ইনকারেজ’ করছে না সৌদি: ধর্মমন্ত্রী

জিসিসির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নবদিগন্ত উন্মোচন

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে আশাবাদী সরকার

জনগণকে নিরপেক্ষভাবে সেবা দিতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ আইজিপির

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :