নেয়ামত ভূঁইয়া’র কবিতা: ‘মুক্তির মিছিল’
হারাই হারাই ভয়টা সব সময়ই ছিলো
তবে এমন করে আচমকা হারিয়ে যাবে, তেমনটা ভাবিনি।
চোখের মণির স্লেটে অশ্রুর পেন্সিলে লেখা সতর্ক সংকেত
পলকের রাহাজানিতে পড়ে ডাকবার্তা হয়ে সময় মতো
নির্ভয়ে আসতে পারেনি বোধের তল্লাটে।
রক্তচক্ষু দেখে ভেবেছি ওটা প্রেমের পূর্বরাগ।
মুখের বিকৃত ভেংচি কাটা দেখে ভেবেছি
ওটা আমার জন্যে উদ্বিগ্নতার পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া।
হাতের তালুরা যখন থাবা, নখেরা যখন নখর,
আশ্বাস যখন হুমকি, ভালোবাসা যখন পুষ্পিত ভাষণ,
তখনো আমি মালার ফুলকে বানাইনি আগুনের ফুলকি,
প্রতিবাদে জ্বালিনি মিছিলে মশাল।
সেই মওকায় আমার খাজানা থেকে লোপাট হয়ে যায় বিশ্বাসের জেওর।
আমার আস্থার আকাশ ছায়াস্নেহ সামিয়ানা
কুট কুট করে কেটে নেয় নেংটি ইঁদুরের ধারাল দাঁত।
আমার অস্তিত্বের জমিনে রক্তেফলা ফসলের মাঠ উজাড় করে পঙ্গপাল।
রুই কাতলার পেটের ডিম, কোয়েলের বাচ্চা, বীজতলা, চারা গাছ, কচি ডাব
উঠুনের কোনের আধফোটা জবা ফুল;
দূর্বা ঘাসের জড়াজড়িতে মুখ থুবড়ে ফুটে থাকা
আধা থেঁতলানো জংলা গাঁদাফুল,
হায়েনা বর্গীর হানায় সবি তছনছ।
তুমি আবার ফিরবে ইতিহাসের বিশ্বাসের সূত্র ধরে;
ইঙ্গিত ইশারা সম্ভাবনা সংকেত আভাস নিশানা লক্ষণ বহুশ্রুত শ্রুতলিপি
যৌবনবর্ধক রগ-রগে বানোয়াট বিজ্ঞাপনের মতোই বিরক্তিকর। সেগুলোর জরায়ু এখন জরার গিরিগুহা;
প্রজনন কিংবা প্রসব বেদনা নিরেট গুজব।
খাঁ খাঁ রোদ্দুরের দুপুরে কাঠফাঁঠা গরমে কাকের কণ্ঠ যখন শুকিয়ে খাক,
গলির মোড়ের এক-আধ ফোঁটা জল-চুয়ানো কলের টেপ
সেই কাকের কাছে মধুভার মৌচাক।
এই যুক্তির ঘুড়ি উড়িয়ে পার করছি যুগান্ত
সুতোকাটা সেই ঘুড়ি দমকা হাওয়ার কুণ্ডুলিতে পড়ে আজো লাপাত্তা।
ভাবগতিক দেখে আঁচ করতে পারি
আনন্দের আলতো পায়ে তুমি আসবে না;
আকালবোধনের প্রাণান্ত যজ্ঞ ব্যর্থতা দেখেছে বহুবার
শেষাঙ্কে ভরসার বেলুন হয়েছে ফুটো।
কিছু কিছু ন্যাড়া আছে যারা বার বারই বেলতলা যায়;
আমরা সমুদ্রে ডুবে মরি, তবু সমুদ্রস্নানে যাই বার বার।
এবার তোমাকে ফেরাতে তোমার স্থবির পায়ে পরাবো
আমাদের হৃৎশোণিতের শেকল; চাঞ্চল্যের চুম্বক।
আহ্বানে আসবে না বলেই এই অমায়িক শক্তি প্রয়োগ;
এভাবেই তোমার ফেরার পথের ধারেই আমাদের মুক্তির মিছিল হবে যোগ,
অতীতের চিতাভষ্ম পিছে ফেলে তোমার অভ্যর্থনা হবে প্রিতম,
রক্তের কিংশুকে আল্পনা এঁকে এঁকে প্রতিটা প্লাকার্ডে
লিখা হবে ‘স্বাগতম’।