চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, ৫০০ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ

চাঁদপুরে শহররক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেওয়ায় ভাঙন রোধে এক হাজার সিসি ব্লক ও ১১০০ বালুভর্তি জিইও টেক্রটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। দেবে গেছে শহররক্ষা বাঁধে ২০০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক। ঘটনার সময় দেবে গেছে শহররক্ষা বাঁধের ৫০০ সিসি ব্লক। ভাঙনস্থলে প্রায় ১০০ মিটার নদীর গভীরতা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঘটনাস্থল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানিয়েছে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এলাকাবাসী মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
সোম ও মঙ্গলবার দুদিনে এক হাজার সিসি ব্লক ও ১১০০ বালুভর্তি জিইও টেক্রটাইল ব্যাগ ফেলা হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ভাঙনস্থলে সিসি ব্লক ও বালুভর্তি জিইও টেক্রটাইল ব্যাগ ফেলার তদারকি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ঢাকাটাইমসকে জানান, এ ভয়াবহ ভাঙন ঠেকাতে আমাদের কাছে ১৪ হাজার সিসি ব্লক ও ১১ হাজার বালুভর্তি জিইও টেক্রটাইল ব্যাগ মজুদ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সোমবার ভয়াবহ ভাঙন ঠেকাতে প্রথম পর্যায়ে ১১০০ বালুভর্তি জিইও টেক্রটাইল ব্যাগ ও মঙ্গলবার এক হাজার সিসি ব্লক ফেলা হয়েছে। এতেও যদি ভাঙন বন্ধ করা না যায় তাহলে পরবর্তীতে ১৪ হাজার মজুদ থাকা সিসি ব্লক ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে।
বিলম্বে এই ভাঙনস্থলে বালুভর্তি জিইও টেক্রটাইল ব্যাগ ফেলায় মারাত্মক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ৭, ৮, ৯ নম্বর মহিলা কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াস।
গত রবিবার বিকালে হঠাৎ চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধের লঞ্চঘাট এলাকায় ভয়াবহ নদীর পাড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এ ভাঙনের ফলে লঞ্চঘাট এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে আবারও ভয়াবহ ধস দেখা দিয়েছে। মুহূতের মধ্যে এ এলাকার বাঁধের প্রায় ৫০০ সিসি ব্লক মেঘনা নদীগর্ভে তলিয়ে ও দেবে গেছে। প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় ব্যাপক ফাটল দেখা দেওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শহররক্ষা বাঁধ। হঠাৎ এ ধসের কারণে ভাঙন আতঙ্কে লঞ্চঘাট এলাকার হাজারও পরিবার উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। হঠাৎ শুস্ক মৌসুমে চাঁদপুরে এ ভয়াবহ নদী ভাঙনে মারাত্মক আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা ও শহরবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে, চাঁদপুর শহরের লঞ্চঘাটের পাশের টিলাবাড়ি নামক স্থানে। ব্লক দেবে যাবার খবর শুনে আশপাশের মানুষ দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে এবং শহরবাসী খবর পেয়ে ছুটে আসে ভাঙনস্থলে।
খবর পেয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় জেলা প্রশাসক শহররক্ষা বাঁধের দেবে যাওয়া বাঁধের স্থানে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর, রফিক, জহিরুলসহ কয়েকজন জানান, রবিবার দুপুরের পর হঠাৎ করে ব্লক দেবে যাচ্ছে বলে মানুষ ছুটাছুটি শুরু করে। প্রায় ২০০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সিসি ব্লক ধসে পড়ায় বিশাল অংশজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে আরও এলাকা ভাঙতে পারে বলে তারা জানান।
স্থানীয়রা জানান, শহররক্ষা বাঁধের ফাটল স্থানের আশপাশে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পরিবারের লোকজন বসবাস রয়েছে। বর্তমানে সবাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, আমরা ঘটনার পর থেকেই কাজ শুরু করেছি। ভাঙন ও ফাটলের কারণে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আজ থেকে ভাঙ্গনস্থলে বালুভর্তি জিইও টেক্রটাইল ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ কোড়ালিয়া চর এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করায় শহররক্ষা বাঁধের দিকে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে ভাঙন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে তাদের আশঙ্কা রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/৪জানুয়ারি/কেএম)

মন্তব্য করুন