ফরিদপুরে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বেপরোয়া বাণিজ্য

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৫৫
অ- অ+

ফরিদপুরে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক গড়ে উঠছে বেসরকার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপনে আইন মানা হচ্ছে না। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠান। আর এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিচ্ছে।

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, ফরিদপুর জেলায় প্রায় তিন শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে জেলা শহরেই রয়েছে এ ধরনের শতাধিক প্রতিষ্ঠান, যাদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় বৈধ অনুমোদন নেই।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, অনেকে এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের আবেদন করে, কিন্তু অনুমোদন পাওয়ার আগেই চালু করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে জরিমানা ও বন্ধ করে দেয়ার পরেও এসবের লাগাম টানা যাচ্ছে না।

সরকারি হাসপাতালের এক শ্রেণির চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়ারাও রোগী ভাগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে নির্ধারিত কমিশন পাচ্ছেন। অথচ সরকারি আইন অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলোর ৩০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল থাকতে পারবে না। কিন্তু এই আইন অমান্য করে চলছে রমরমা বাণিজ্য। এই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশেরই মালিক চিকিৎসক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এগুলোর অনুমোদন দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু খোঁজখবর না নিয়ে অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা তারা করে না।

শিপ্রা গোস্বামী বলেন, সর্বত্রই সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি গড়ে ওঠা দালালনির্ভর এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। এতে সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হবে।

বর্তমানে একটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রায় ২১টি ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে এসব লাইসেন্স যেমন পেতে হয়, তেমনি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে লাইসেন্সগুলো নবায়নও করতে হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াও আর যেসব লাইসেন্স নিতে হয় তার মধ্যে রয়েছে- মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, ফর্মেসি পরিচালনার জন্য লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্স, জেনারেটর লাইসেন্স, ব্লাড ব্যাংক লাইসেন্স, বয়লার লাইসেন্স, ক্যাফেটেরিয়া ও লন্ড্রি লাইসেন্স, কমর্শিয়াল লাইসেন্স, বিএসটিআই লাইসেন্স (বেকারি), ট্রেডমার্ক লাইসেন্স (বেকারি), গভীর নলকূপ লাইসেন্স, আণবিক শক্তি কমিশন লাইসেন্স, আরসিও লাইসেন্স, মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লাইসেন্স, নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি ইত্যাদি।

ফরিদপুরের অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের এসব অনুমোদন নেই। বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য বিভাগ ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, আটক করে কারাগারে পাঠায় এবং জরিমানার দণ্ডও জারি করে। অভিযুক্ত ক্লিনিকগুলো সিলগালাও করে দেওয়া হয়। কিন্তু নানা কৌশলে প্রতিষ্ঠানগুলো সচলই থাকে।

ফরিদপুরের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টক সেন্টার সরকারের নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার কথা। যখন একজন রোগী আসবে তখন প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স উপস্থিত থাকবে। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য শর্তাদি মানতে হবে।

সভাপতি বলেন, যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ নিয়ম মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবো। আমরা এসব বিষয় তদন্ত করে দেখবো।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, অনেক সময় অনুমোদনের আবেদন করার পর অনুমোদনের অপেক্ষায় না থেকেই এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে দেয়া হয়। আমরা বিভিন্ন সময় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও অনেকক্ষেত্রে সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেই।

শনিবার ফরিদপুরের আল মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে প্রসূতির পেট থেকে বের করার সময় এক নবজাতকের কপাল কেটে ফেলার ঘটনা প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, ওই হাসপাতালটি নবায়নের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এমন আরও অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে যাদের কাগজপত্র ঠিক নেই। এ ব্যাপারে আমরা জোরদার অভিযান চালাবো। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেবো।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে বিরুদ্ধে মোবাইল কোট অভিযান পরিচালনা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা