‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ে’ ক্রিকেট জুয়া, যেভাবে কোটিপতি তিন যুবক

অনলাইন জুয়া বা বেটিংয়ের কারণে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। গত এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার বিপুল টাকা লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। দেশে বসে এই বেটিং পরিচালনায় ছিলেন তিন যুবক। যারা অনলাইনের মাধ্যমে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গড়েছেন গাড়ি-বাড়িসহ বিপুল সম্পদ।
বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।
এই ঘটনায় জড়িত সিন্ডিকেটের দুই মাস্টার এজেন্টসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা দেশে বিভিন্ন লিংকের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া পরিচালনা করতেন। তিন যুবক হলেন, তরিকুল ইসলাম বাবু, রানা হামিদ ও মো. সুমন মিয়া। এই তিন অনলাইন জুয়াড়ি জুয়ার মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ি-জমি কিনেছেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, চারটি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, পাঁচটি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।
একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশের জুয়ার সাইটগুলো রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে পরিচালিত হয়। আমাদের দেশে যারা থাকেন, তারা মাস্টার এজেন্ট। বিদেশে যারা পরিচালনা করেন, তারা সুপার এজেন্ট। যখন আইপিএল ও বিপিএল খেলাগুলো চলে, তখন তারা বাজি ধরে।
ডিবিপ্রধান বলেন, এই চক্রটির আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এখনো ৫০ থেকে ৬০ জন পলাতক আছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। আর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। তারা রিমান্ডে রয়েছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, তাদের (গ্রেপ্তার তিনজনের) প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস ছিল না। আইপিএল, বিপিএলসহ মূলত ক্রিকেট খেলাকে ঘিরেই এই বেটিং সাইট পরিচালিত হয়। বেটিং সাইটগুলোতে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচটি কোন দল জিতবে তার উপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেট করা রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিংয়ের পিবিইউ পরিমাণের তিনগুণ বা বেটিংয়ের শর্ত অনুসারে পিবিইউ ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং বা অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয়।
ডিবিপ্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতে এর এডমিন রয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বন্ধ করতে গেলে তারা অন্য সাইটে চলে যাবে। আমরা বিটিআরসির মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করব। মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে। তবে সামাজিকভাবে এটা প্রতিরোধে কাজ করা উচিত। কারণ যারা বেটিংয়ে অংশ নেয় তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এটা নেশার মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন আট থেকে ১০ লাখ টাকায় লোকাল এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকত। লোকাল এজেন্টে বেটিংয়ে অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি পিবিইউ ১৫০ টাকা নিয়ে বিক্রি করে থাকে। এই কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ গ্রেপ্তার তিন আসামির মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যায়। তারা ভুয়া ফেসবুক আইডি ও বিদেশি নম্বরের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে বেটিং সাইডগুলো পরিচালনা করে এবং গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। গ্রেপ্তার তিনজনের ব্যাংক হিসাবে এবং মোবাইল ব্যাংক হিসাবে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে।
ডিবিপ্রধান বলেন, অনলাইন জুয়া একটা নেশার মতো, এখানে একবার ঢুকলে নিঃস্ব হওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। অংশগ্রহণকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে, আইন-শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব পড়ছে।
(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এসএস/জেবি)

মন্তব্য করুন