পুঁজিবাজারে আসছে সুবাতাস, ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নিচ্ছে বহুমুখী পদক্ষেপ। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইবে বলে আশা করা হচ্ছে। তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন—বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
তিনি বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে বড় কোনো সমস্যা নেই। এই সপ্তাহ থেকেই বাজার ভালো হবে। আর এজন্য বিএসইসি দিন রাত সমানে কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড—সিএমএসিএফের সঙ্গে বিএসইসি ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকটি লিস্টেড কোম্পানিজ—বিএপিএলসির অংশগ্রহণে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এতে জানানো হয়, সংস্থাগুলোর গৃহীত নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারের তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করে বাজারের ভাবমূর্তি ফেরানো হবে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১ ঘণ্টা আলাপের সুযোগ হয়েছে। তার ডাইনামিক নেতৃত্বে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বড় কোন সমস্যা নেই। দেশের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী। ভয়ের কিছু নেই। বর্তমানে সারাবিশ্বেই একটু সমস্যা হচ্ছে। এটা সমায়িক। সমস্যা খুব শিগগিরই কেটে যাবে।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা শেষে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করবে এবং তা করতে না পারলে সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে দেবে-এটাই তাদের দায়িত্ব।
‘কিন্তু কিছু কোম্পানি বারবার সময় নিয়েও অবন্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে দিচ্ছে না। তাহলে তারা কি সেই লভ্যাংশ খরচ করে ফেলেছেন?’—প্রশ্ন রাখেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে ২২ হাজার কোটি টাকার অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য পাওয়া গেলেও এখন সেটা ৭০০-৮০০ কোটিতে নেমে এসেছে। এই সময়ের ব্যবধানে এতো টাকা কোথায় গেলো? এই বিষয়টি অনুসন্ধানে আমরা অডিট শুরু করব। শেয়ারবাজারে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের বিষয়ে অডিট করা হবে।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যখনই অবন্টিত লভ্যাংশ স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে প্রেরণের জন্য সময় চেয়েছে, তখনই দেওয়া হয়েছে। এভাবে বারবার সময় নিচ্ছে। কিন্তু এখনও দেয়নি। কিন্তু অডিট শুরু করার পরে সময় দেওয়া হবে না। এজন্য আগামি ৩১ মে’র মধ্যে সবাইকে অবন্টিত লভ্যাংশ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। অন্যথায় ৩১ মের পরে কমিশন যদি কোন পদক্ষেপ নেয়, তখন কাউকে কিছু মনে করবেন না।’
শেয়ারবাজারে আইসিবি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু নানাসময় কিছু বাধাঁর সম্মুখীন হয়ে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারে না। আইসিবিকে এফডিআরের অর্থ ফেরতের চাঁপ, বিনিয়োগ সীমা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আইসিবির এসব সমস্যা আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। আশা করি উনি এটাকে খুব শীঘ্রই সমাধান করে দেবেন।’
বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরো অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করতে হবে। বড় প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করতে পারলে একটি স্থিশীল পু্ঁজিবাজার গঠন সম্ভব। তাই সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। বাজার ভালো হবে।’
প্যানেল আলোচনায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিদের আরোও বেশি আকৃষ্ঠ করতে পন্যের ডাইভারসিফিকেশন করতে হবে। একই সাথে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এখনও পু্ঁজিবাজারে আসেনি তাদের তালিকা ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এর আগে অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসির নির্দেশনা এবং শেয়ার দর কমার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে। যার ফলে দুই কার্যদিবস উত্থানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শেয়ারবাজারের লেনদেন। বিদায়ী সপ্তাহে বড় ধরনের পতন থেকে রক্ষা পায় দেশের শেয়ারবাজার।
এমন অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও চাঙাভাব ফিরে এসেছে। তাদের মতে, বাজারকে খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে একটি দুষ্টু চক্র কাজ করছে। যদি এভাবে বাজারের মনিটরিংয়ে সংস্থাগুলো কাজ করে তাহলে বাজার অবশ্যই ভালো হবে। সবাইকে সাবধানতা মেনে লেনদেন করতে হবে। কারো পাতা ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি কমিশনের তড়িৎ কিছু সিদ্ধান্তের ফলে বাজার বড় পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাজারের উন্নতিতে কমিশনের নানা পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করলে বাজার খারাপ সময়ও টিকে থাকা যায় এবং পরবর্তীতে বাজার ভালো হলে সুফল নিয়ে আসে।
(ঢাকাটাইমস/২৮মে/বিএস/ডিএম)

মন্তব্য করুন