দেশের ফুটবলের গায়ে আক্রোশের ক্ষত আর রাজনীতির রঙও আছে

অঘোর মণ্ডল
  প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৩৫
অ- অ+

৪০ বছর কেটে গেলো। কিন্তু তাদের মনের ক্ষত এখনো শুকায়নি! একজন ফুটবলগ্রহ কেন, পৃথিবী ছেড়ে অন্ততলোকে চলে গেছেন। বাকি তিন জনের মনে ক্ষোভ-রাগ-হতাশা এখনও তুষের আগুনের মতো জ্বলছে! বাংলাদেশের মানুষ যে দিন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন সাফ জয়ী নারী ফুটবলারদের, ঠিক চল্লিশ বছর আগে এই দিনে ফুটবল মাঠের ঘটনায় কারাগারে যেতে হয়েছিল সেই সময়ের দেশ সেরা চার ফুট্লারকে। কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন চুন্নু, কাজী আনোয়ার এবং গোলাম রব্বানি হেলালকে। বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খাটতে হয়েছিল। আজকের এই আনন্দ-উদযাপনের দিনেও বিষন্নতা ভর করেছে চুন্নু, কাজী আনোয়ারদের মনে! তারা ফিরে যান ফ্ল্যাশব্যাকে ১৯৮২ সালের সেই ২১ সেপ্টেম্বরে। ঐ দিনটাকে তারা 'ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর' হিসেবে মনে রেখেছেন।

ঢাকার লিগে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ। একটা গোল নিয়ে আবাহনী অধিনায়ক কাজী আনোয়ার রেফারিকে চ্যালেঞ্জ করেন। পুরো গ্যালারি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা! মাঠের ভেতর রেফারির সাথে আবাহনীর খেলোয়াড়দের ধাক্কাধাক্কি! শেষ পর্যন্ত ম্যাচ আর শেষ হয়নি। ঢাকা স্টেডিয়ামের চারপাশে তৈরি হয় রণক্ষেত্র। আর রাতের বেলায় মাঠের সেই ঘটনার জেরে আবাহনী ক্লাবে চলে পুলিশি তল্লাশি। আটক করা হয় খেলোয়াড়দের। চুন্নু, -আনোয়ার -হেলাল- আশিস- খুরশিদ বাবুল ছিলেন এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতির জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আবাসিক ক্যাম্পে। সেখান থেকে তাদেরও আটক করা হয়। কাজী সালাউদ্দিনকে আটক করে আনা হয় তার গুলশানের বাসা থেকে। তারপর শুরু হয় সামরিক আদালতে বিচার। অভিযোগ করা হয়, শেখ কামালের ক্লাব আবাহনী। এই ফুটবলাররা আওয়ামী লীগের লোক। সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য ওরা মাঠে গন্ডগোল করেছেন! এদের শাস্তি হওয়া উচিত।

শাস্তি হলো চারজনের। সালাউদ্দিন-চুন্নুকে তিন মাস করে জেল দেয়া হলো। রাখা হলো যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। অধিনায়ক কাজী আনোযার এবং হেলালকে ছয় মাস করে দেয়া জেল দিয়ে নেয়া হলো রাজশাহী কারাগারে! কেউ বলেন রাজনীতির কারণে, কেউ বলেন ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল ফুটবলারদের! কারণ, যাই হোক, দেশের ফুটবলের এক কালো দিন '২১ সেপ্টেম্বর'।

কাজী সালাউদ্দিন এখনও মনে করেন; সেই সময় বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মেজর( অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ আক্রোশ থেকেই ফুটবলারদের জেলে পাঠিয়েছিলেন। আশরাফ উদ্দিন চুন্নু বললেন, ‘ ফুটবল অনেক কিছু দিয়েছে। অনেক কিছু পেয়েছি। ফুটবলের জন্য জীবনে জেলও খেটেছি!’

আর অধিনায়ক কাজী আনোয়ার বললেন, ‘ আমরা নাকি এরশাদ সরকারকে উৎখাতের জন্য মাঠে গন্ডগোল করেছি। সরকার বিরোধী আন্দোলন উসখে দিতেই আমি নাকি মারামারি করেছিলাম। মামলার এজহারে তাই বলা হয়েছিল। তাহলে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের আমি-ই কী পথিকৃত!’

আর একজন পৃথিবী থেকে অনেক দূরে এখন। অন্ততলোকে বসে কি ভাবছেন জানি না। তবে জীবিত অবস্থায় গোলাম রব্বানি হেলাল খুব গর্ব করে বলতেন; 'আবাহনীর জার্সি গায়ে ঢাকার ফুটবলে খেলিছি। আবাহনীর জন্য কয়েদির পোষাক পরে জেলখানায়ও গিয়েছি। তার জনমার কোন দুঃখ নেই। বরিশালের আলেকান্দার হেলালকে আর ক'জন চিনতো যদি আবাহনীর জার্সি গায়ে না উঠতো।'

বাংলাদেশ ফুটবলের গায়ে রাজনীতির ক্ষত-রং সবই আছে। কিন্তু নারী ফুটবলারদের এই সাফল্যের গায়ে যেন কোন রাজনীতির রং না লাগানো হয়।

লেখক: সাংবাদিক, ক্রীড়া লেখক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সোনারগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রক্সি দলিল লেখকের দাপট
বোয়ালমারীতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভ ভেঙে দিল ছাত্র-জনতা
যুক্তরাষ্ট্রে নারী নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক জাইমা রহমানের
আনন্দ সিনেমা হলের সামনে ককটেল সদৃশ বস্তু রেখেছিল কারা?
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা