বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন

নিষ্ক্রিয় ২০ দলীয় জোট, ৩৬ দল সক্রিয় চার প্ল্যাটফর্মে

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:২৪ | প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫২

বিএনপির ডাকে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন। সেদিন বিএনপি ছাড়াও আরো ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে থাকবে। তারা চারটি প্ল্যাটফর্মে আলাদা মোর্চা গঠন করে বিএনপির সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। দলগুলোর শীর্ষনেতারা ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চলতি মাসের শুরুর দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আর নেই বলে একাধিক শীর্ষনেতার বক্তব্যে ইঙ্গিত আসে। এই জোট ভেঙে আলাদা দুটি মোর্চা তৈরি হচ্ছে বলেও তারা আভাস দেন। এরই মধ্যে সক্রিয় সমমনা দলগুলো নিয়ে চারটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।

গত ৮ আগস্ট জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই ৭টি সমমনা দল নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। অপরদিকে ১১টি দলের সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘নাগরিক মঞ্চ’।

বৃহত্তর আন্দোলনের স্বার্থে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণার পর ২০ দলীয় জোট আর নেই, বিএনপির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণার পরই নড়েচড়ে বসেন জোটের শরিক দলের নেতারা। ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিএনপি ও জাময়াত ছাড়া বাকি ১৮টি দল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ১১ দল ও ৭ দল দুটি আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে।

যদিও জামায়াত দীর্ঘ বছর যাবতই জোটের কোনো কর্মসূচিতে নেই। চলতি বছরের ২২ আগস্ট জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দেন বিএনপি জোটে জামায়াত নেই। তবে, বিএনপির ১০ দফা সমর্থনসহ বিভিন্ন দাবিতে ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল করবে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা।

এছাড়া জোটের বাইরে থাকা তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বে জাগপাও বিএনপির ১০ দফার সমর্থনে রাজধানীতে গণমিছিল করবে বলে জানিয়েছে। আমার বাংলাদেশও (এবি পার্টি) সিদ্ধান্ত জানাবে বলে ঢাকা টাইমসকে জানান দলটির নেতারা।

১১ ডিসেম্বর বিএনপির দশ দফাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আলাদা বিবৃতি দেন ২০ দলীয় জোটের ১১ দল। মূলত, তাদের আলাদা বিবৃতি ২০ দলীয় জোটের যে অস্তিত্ব নেই তারই প্রমাণ মিলে। যুক্ত বিবৃতিতে ১১টি দল হলো—জাতীয় পার্টি (জাফর), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এলডিপি, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, এনডিপি, ইসলামি ঐক্যজোট, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল।

সমমনা দলগুলো ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’ অথবা ‘জাতীয়তাবাদী মঞ্চ’ নামে একটি রাজনৈতিক মোর্চা করবে বলে জানিয়েছেন এ জোটের নেতারা। অপরদিকে এই জোটের অপর অংশ অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন এনপিপির নেতৃত্ব ৭ দল আছে দাবি করে তারাও বিএনপির ১০ দফা সমর্থন করে ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিবৃতি প্রদান করেছে।

সেখানে ৬টি দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন ও বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী। যদিও ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব ১১ বা ৭ দল, কোনো মোর্চায়ই যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি বলে ঢাকা টাইমসকে জানান। জোটের আরেকটি দল ‘মাইনরিটি পার্টি’ কোন প্ল্যাটফর্মে যাবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। অপরদিকে ১১টি দলের সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘নাগরিক মঞ্চ’। ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে এই মোর্চার আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে দলগুলো এরই মধ্যে একাধিকবার বৈঠকও করেছে।

সূত্র জানায়, ১১টি দলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রয়েছে ৩টি দলের। অন্য ৮টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। মঞ্চটি আত্মপ্রকাশের দিনই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে বিএনপির ঘোষিত ১০ দফার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিএনপির সঙ্গে সরকার পতন আন্দোলনে মাঠে নামবে ‘নাগরিক মঞ্চ’।

সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড ও শীর্ষনেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন নাগরিক মঞ্চের নেতারা। বিএনপি থেকে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।

নতুন এই জোটে থাকতে পারে—বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (সুজা), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মুকিত), এনডিএম, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম সমাজ, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, ফেডারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ আযাদী লীগ, বাংলাদেশ আইডিয়েল পার্টি।

এছাড়া আরও ২টি দল নিয়ে আলোচনা রয়েছে। দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ শামীম ও বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান মুফাসসির অধ্যাপক বাজলুর রহমান আমিনী।

তবে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এই জোটে থাকার কথা অস্বীকার করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি এই জোট চিনিই না। প্রথম এই জোটের কথা শুনলাম।’

১৪ ডিসেম্বর নাগরিক মঞ্চের উদ্যোক্তা চারটি দলের নেতারা বিএনপির ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

জোট প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান ও বর্ষীয়ান নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বিএনপির দেওয়া কর্মসূচিগুলো অভিন্নভাবে আলাদা প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করবো। এগুলো দেশে নতুন কিছু নয়। আমরা ১১টি দল ইতোমধ্যে ঐকমত্য পোষণ করেছি। এ এগারটি দল একটি রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকবো।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম জোট প্রসঙ্গে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা সকলেই এ সরকার পতন আন্দোলনে একমত। আমরা ১১টি দল একটি প্ল্যাটফর্মে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিবো। এখানে যে যেভাবেই হোক আন্দোলনে অংশ নেওয়াই আমদের উদ্দেশ্য।’

জোট ভেঙে গেলেও আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি দাবি করে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঢাকা টাইমসকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। আমরা আগে যেভাবে রাজপথে ছিলাম এখনও সেভাবে সক্রিয় থাকবো। তবে এবার আমরা ১১ দল আলাদা রাজনৈতিক মোর্চা করে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিবো।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এ বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ৭টি দল বিএনপির ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য একজোট হয়েছি। আরো কয়েকটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইসলামি ঐক্যজোটসহ আমরা এ ৭টি সমমনা দল এক প্ল্যাটফর্মে ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণমিছিল করবো।’

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :