জামালপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ, প্রবাসীও পেয়েছেন ঘর

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:২৮

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের খাসিমারা এলাকার মুজিব শতবর্ষের ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাবলু নামে এক প্রবাসী ঘর পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে নিজস্ব বাড়ি রয়েছে এমন লোকজন এবং একই ব্যক্তিকে একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। এতে ভূমিহীন ও গৃহহীনরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানান তারা। নিজস্ব বাড়ি থাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তালা দিয়ে রেখেছেন ওই সুবিধাভোগীরা। সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ নির্ধারণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের (ফেস-২) অধীনে মেলান্দহ উপজেলায় ২০২০-২১অর্থবছরে ১ম পর্যায়ে প্রতিটি ঘর নির্মাণ ব্যয় ১লাখ ৭১ হাজার টাকা হিসেবে ২৬০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। ২য় পর্যায়ে প্রতিটি ঘর নির্মান ব্যয় ১লাখ ৯০হাজার টাকা হিসেবে ১৮০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিটি ঘর নির্মান ব্যয় ২লাখ ৫৯হাজার টাকা হিসেবে ৩৮টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। এ উপজেলায় ৪৭৮টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। এ উপজেলায় ৮কোটি ৮৫লাখ ২হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৭৮টি ঘর নির্মান করা হয়েছে। এ উপজেলায় আশ্রায়ণ প্রকল্পের ৪৭৮টি ঘরের মধ্যে ১৫৫টি ঘর প্রায় ৩কোটি টাকা ব্যয়ে মাহমুদপুর ইউনিয়নে নির্মান করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ আশ্রায়ণ প্রবাসীও ঘর পেয়েছে। এছাড়াও জুয়েল, জোনাব আলী, হাওয়া বিবিসহ অনেকেই নিজস্ব বাড়ি থাকার পরেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছে। এছাড়াও আম্বুলী বেগম নামে এক মহিলা নিজস্ব বাড়ি থাকার পরেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুইটি ঘর পেয়েছেন। সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ নির্ধারণ করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে খানসামারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের খাসিমারা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৫৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘরের অধিকাংশেই তালা ঝুলছে।

এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও অনেক ঘরের মেঝেতে ও উঠানে মাটি ভরাট করা হয়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৫৫টি পরিবার বসবাস করার কথা তাকলেও মাত্র ৪০-৪৫টি পরিবার বসবাস করছে। আবার কিছু ঘরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তালা ভেঙে ভূমিহীন ও গৃহহীন কয়েকটি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন। লোকজন না থাকায় বিদ্যুৎ বিলের কপি ঘরের দরজার ফাঁকে পড়ে রয়েছে। আবার অনেক ঘরে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ফাঁকা ঘরে স্থানীয়রা রান্নার করার জন্য খড়ি রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ও প্রভাবশালীচক্রের পছন্দ মতো নিজস্ব লোকজনকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়া হয়েছে। এছাড়াও একই ব্যক্তিকে একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ায় কোনো উপকারে আসেনি সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। অপরদিকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

প্রবাসী বাবলু খাসিমারা এলাকার ভুট্ট ওরফে ভুট্টাইয়ের ছেলে। তিনি বিদেশ থাকেন। তার আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন মো.শাহজাহান মিয়া। মো.শাহজাহান মিয়া জানান, এ ঘরটি প্রবাসী বাবলুর। ১বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। আমার নামে কোন কাগজপত্র নেই।

মাদারগঞ্জ উপজেলার তেঘুরিয়া এলাকা থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আম্বুলী বেগমের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন জান মিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম। তাঁর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের নামে কোন ঘর নাই। আমাদের থাকার কোনো জায়গা ছিল না, মেম্বার অনেক খোঁজ খবর নিয়ে আমাদেরকে আম্বুলীর ঘরে থাকতে দিয়েছন। আম্বুলীর পাশের আশ্রয়ন প্রকল্পে আরেকটি ঘর রয়েছে। এছাড়াও তার নিজস্ব বাড়ি গরু ছাগল সংসার সব কিছুই আছে।

একাধিক ঘর পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে আম্বুলী বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিজস্ব জমিতে দুই চালা টিনের ঘর। ঘরের সামনে গরু বাধা। তবে বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

খাসিমারা এলাকার আশ্রায়ণ প্রকল্পে কথা হয় চার সন্তানের জননী সুবিধাভোগী হাওয়া বিবির সাথে। তিনি বলেন, ‘তার নিজস্ব বাড়ি আছে। বড় ছেলে দিন মজুরীর কাজ করেন। বড় ছেলে সেখানে থাকেন। ছোট ছেলে ঢাকায় থাকেন। এখানে তাকে দেখার কেউ নেই। অন্যের কাছে হাত পেতে তার সংসার চলে।

খাসিমারা এলাকার আশ্রায়ণ প্রকল্পে কথা হয় ২সন্তানের জননী বিধবা সালমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, আমি আশ্রয়ণ প্রকল্পে জুয়েলের ঘরে থাকি। জুয়েলের নিজস্ব পিঁড়া পাকা চৌচালা ঘর রয়েছে।

ওই আশ্রায়ণ প্রকল্পে কথা হয় মো.শামসুল হুদার সঙ্গে। তিনি জানান, আমার মায়ের নামে ঘরটি বরাদ্দ হয়েছে। আমার মা বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে থাকে। আমি এখানে থাকি।

উত্তর খাসিমারা এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে ধানের কাজ করছিলেন আব্দুর রশিদ মন্ডল। তার সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমার দুইটি ঘর আছে। ওখানে আমি রান্না করার খড়ি রেখেছি। ঘর দুইটি আমার ভাই ও বোনের নামে নেয়া। তারা ঢাকায় থাকেন। আমার নিজস্ব বাড়ি-ঘর আছে। গৃহস্থি কাজের জন্য ঘর দুইটি নিয়েছি। অফিসারদের আসার কথা শুনলে এখানে এসে থাকি।

এ বিষয়ে মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সরোয়ার হোসেন সরু বলেন, ‘আমি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়া হয়েছে। এখানে নিজস্ব বাড়ির মালিকদের প্রকল্পের ঘর দেয়া হয়েছে। তালা ভেঙে গৃহহীন ও ভূমিহীন কয়েকজনকে আশ্রয় দিয়েছি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘ঘরগুলো নির্মাণের আগে আমার কোনো মতামত নেয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও তহশিলদার এ কাজ করছে। যাদের ঘর দিয়েছে, তাদের আমি চিনিও না। এখানে একই পরিবারের লোকজনকে একাধিক ঘর দেয়া হয়েছে। এখন যদি এগুলো ঠিক না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ঘরগুলো দখল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকল্পের কাজ করেছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা ওই কমিটির সদস্যও না। তবে আপনি আমাকে বলেছেন। আমি স্ব-শরীরে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো’।

এ প্রসঙ্গে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম মিঞা বলেন, ‘আমি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(ঢাকাটাইমস/৮জানুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :