আবু হানিফ জাকারিয়ার পাঁচটি কবিতা

বিভ্রান্ত পথিক
ক্লান্তিহীন চলছি পথ থেকে পথে,
ছুটছি প্রান্তর থেকে প্রান্তর।
খুঁজে পাইনি আজো গন্তব্য।
নগর থেকে নগর, স্টেশন থেকে স্টেশন,
পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল, নদী ও সমুদ্র,
কোন বন্দর ঘুরে আবার এক বন্দর,
তবুও কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি আজো।
অলি-গলি, সড়ক-মহাসড়ক, লেন-বাইলেন
কত নাম কত আকৃতি কত বিচিত্র রকমফের,
কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা; আমি চলছি ক্লান্তিহীন।
আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি, লেলিহান শিখা
জ্বলছে অবিরাম, কিন্তু সারাক্ষণ জ্বলে না,
নিভে একসময়; নেভে না আমার মনের আগুন।
রংবেরঙ এর মানুষ দেখি, দেখি নানা রকমের
খেলা খেলে চলছে যারা এই সময়ের খেলারাম।
বিভ্রান্তি ভর করে আমার মগজ বিকল করে দেয়,
আমি ভুলে যাই আমার গন্তব্য,
আমার শেষ ঠিকানা। আমি লোভী হয়ে যাই, থেমে যাই;
খেলা দেখে আনন্দ পাই, অপার আনন্দ আমার।
গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনা আমি বিভ্রান্ত পথিক।
যাপিত জীবন
বিষাদগ্রস্ত জীবনে অজানা আশংকা যখন সঙ্গী
উচ্ছ্বাস হারিয়ে মানুষ আজ কোন ঘেরাটোপে বন্দি।
ভুলে যাচ্ছে ঐ মায়াবী মুখ, ভুলেই যাচ্ছে রুপালি আলো
দুনিয়াও ভুলে যেতে চায়, ঘিরে ধরেছে নিকষ কালো।
আশাহত আজ যে জীবন, তা ছিল উচ্ছ্বাসে ভরপুর
ক্লান্তিকর রাত আসে রোজ, কেটে গিয়ে উদাস দুপুর।
ব্যস্ততার চোরাবালি আজ ডুবিয়ে দিচ্ছে নির্মল সুখ
গতিময় জীবন কাটাচ্ছে, হারাচ্ছে নিষ্পাপ প্রিয় মুখ।
মধ্যবয়সীর চিঠি
কতদিন ধরে প্রতীক্ষায় আছি
একটি নীল খামের জন্য, নয়ত একটি সাদা খাম
নিদেনপক্ষে ডাকবিভাগের একটি হলুদ খাম।
আসবে আসবে করে কত সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা
দিন, মাস, বছর এমনকি যুগও কেটে গেল।
আমার প্রতীক্ষার অবসান হল না
হলনা আমার সুখানুভূতির স্বাদ নেয়া,
খাম খুলে সেই চিঠির গন্ধ নেয়া-
লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া, ভিতরে ভিতরে তাড়িত হওয়া
সুখের আবেশে আর কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া।
এখন আর প্রতীক্ষা করিনা-
তবুও ক্লান্ত দুপুরে ডোরবেলটা বাজলে
চকিত হয়ে যাই,অজান্তেই প্রত্যাশার পারদ বেড়ে যায়।
গেট খুলে দেখি ভিক্ষুক নয়ত নতুন সাহায্যপ্রার্থী।
ডাকপিয়ন আর আসেনা নীল, সাদা বা হলুদ খাম নিয়ে।
চিঠি আর আসবে না জানি-
সেই প্রত্যাশাও আর করিনা এখন।
হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠল আবারও,
ভাবলাম কোন সাহায্যপ্রার্থী নয়ত ভিক্ষুক
না এবার সত্যি সত্যি সাদা খাম হাতে কেউ,
কুরিয়ারম্যান দিল ব্যাংকের পাঠানো এক চিঠি
এ যে মধ্যবিত্তের লোনের কিস্তির ফিরিস্তি।
বিদেশি কালচার
অবলীলায় কয়েকটি ভিনদেশি শব্দ
গেঁথে গেল আমাদের বাঙালিত্বে।
সেই শব্দ গুলির বাংলা ক'জন জানি
জানানোর জন্য কেউ ছিলেন তো দায়িত্বে।
আমরা সহজেই তা মেনেও নিলাম
এটাই এখনকার ট্রেন্ড,
খুব সহজাত আমরা বিদেশি কালচারে
সকলকে বানিয়েছি ফ্রেন্ড।
খুব অভিজাত বাঙালি সাহেবেরা
বাংলায় তাদের নাক সিটকানো,
চলায় বলায় অফিসের কালচারে
বাংলাটা যেন দম আটকানো।
বিদেশিরা কেউ চেপে ধরেনি কাউকে
আমরাই রেখেছি সঙ্গ নিরোধে,
মাতৃভাষাকে আজ উপহাস্য বানিয়েছি
যাব কার সাথে বিরোধে?
যে যার মত বিকৃত সুরে গাই বাংলা ভাষা
যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছি আজ,
বাহবা আর হাততালি দেই বিদেশি কালচারে
হারিয়েছি যেন কুন্ঠা আর লাজ।
ফিরে যাবার সনদ
নিশ্বাস সমান দুরত্বে দু'জন মানুষ
নিস্তব্ধতা করে রেখেছে তাদের গ্রাস।
মৃদুসুর তুলে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে,
নিঃশব্দে ছাড়া তাদেরই গভীর শ্বাস।
আগন্তুকের মত তৃতীয় কোন প্রাণী
টিকটিক শব্দে জানান দেয় অস্তিত্ব।
ক্ষণস্থায়ী জীবনের সেই শুধু সাক্ষী
আজকের নীরবতা কিংবা নিস্তব্ধতার।
আষ্টেপৃষ্ঠে তাদেরকে জড়িয়েছে
বোবাকান্না, আতংক, মৃত্যুভয়।
দুজন দুজনকে অনুভব করে,
হৃদয়ের গহীনেও তাদের বসবাস।
একটু আগেই যে জেনে গেছে তারা
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় আর বেশিদিন নয়।
কম্পিউটারে ছাপানো সাদা কাগজ
যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যাবার সনদ।
সংবাদটি শেয়ার করুন
ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এর সর্বশেষ

দেশরত্ন

একগুচ্ছ কবিতা

‘জননী সাহসিকা’ কবি সুফিয়া কামালকে হারানোর দিন

সুন্দরীনামা

কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহানের একান্ত সান্নিধ্য ও সাহচর্য

মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

নিমা ইউশিজ এবং ফার্সি কবিতার আধুনিকায়ন

হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ পেলেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ

‘কথাসুন্দর’ সম্মাননা পেলেন নাট্যজন সেলিম রেজা সেন্টু
