সহসা কাটছে না গ্যাস সঙ্কট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫৩

দেশে প্রতিদিন ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে ২৬৬ কোটি ঘনফুটের কম গ্যাস সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। ফলে দৈনিক ঘাটতি থাকছে ১১৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই গ্যাসের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর না দিয়ে সরকারের উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। এ অবস্থায় কার্যকর উদ্যোগ না নিলে সহসা এই সংকট কাটবে না। তবে সংকট মেটাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে পেট্রোবাংলা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৫০ বছরে মাত্র ৬৮টি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে পেট্রোবাংলা। এরমধ্যে গত ১২ বছরে ২০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৪টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তার মধ্যে শুধু ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মজুত রয়েছে। তবে পেট্রোবাংলা সম্প্রতি কয়েকটি উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ থেকে গ্যাস প্রাপ্তির খবর দিলেও সেগুলো থেকে গ্যাস প্রাপ্তির হার খুবই কম।

এ বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাস নিয়ে পূর্ববর্তী ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই আজকে গ্যাসের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং আমাদের সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগেও বলেছি, এখনো বলব- দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারের উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান জানিয়েছেন, গ্যাস সংকটের কারণে সরবরাহ কম। সংকট মেটাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দেশীয় উৎপাদন ও আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। পেট্রোবাংলা নতুন কূপ খনন, নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, পুরনো কূপগুলো খননের কাজ হাতে নিয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের দিকে গ্যাস সংকট থেকে কিছুটা পরিত্রাণ মিলতে পারে বলে আশা করছি।

তিনি আরো জানান, পেট্রোবাংলা গ্যাস অনুসন্ধানে আগামী চার বছরে ৪৬টি কূপ খনন করবে। এসব প্রকল্প সফল হলে ভবিষ্যতে নতুন করে প্রতিদিন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ববাজারে স্পট মার্কেটে দাম কমলে ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানির বিষয়টিও পরিকল্পনায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পেট্রোবাংলার হিসাবেই দেশে গ্যাসের ঘাটতির কথা উঠে এসেছে। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংস্থাটি বাস্তবসম্মত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গ্যাসক্ষেত্রগুলো ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। স্থলভাগে অনুসন্ধান নেই। সাগরেও কাজ হচ্ছে না। ফলে সহসা কাটছে না দেশীয় গ্যাস সঙ্কট। আর এখন উদ্যোগ নিলেও তার সুফল পেতে কয়েক বছর লাগবে। বর্তমানে দুটি বিদেশি ও তিনটি দেশীয় কোম্পানি দেশে গ্যাস উৎপাদন করছে। তার মধ্যে শুধু সিলেট গ্যাস ফিল্ডেই (এসজিএফএল) দৈনিক উৎপাদন ১৫ কোটি ঘনফুট থেকে কমে সাড়ে ৮ কোটি ঘনফুটে নেমেছে। অন্যান্য দেশীয় কোম্পানির অবস্থাও একই রকম। দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে যেমন উদ্যোগ নেই, তেমনি কূপ সংস্কার ও ব্যবস্থাপনাতেও রয়েছে অবহেলা। সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের বিশাল মজুদের সম্ভাবনা কথা ধারণা করা হলেও বিভিন্ন সময় একাধিক বিদেশি কোম্পানি অনুসন্ধানেও তাতে কোনো সফলতা আসেনি। প্রায় এক দশক আগে সমুদ্রের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মাত্র দুটি ব্লকে ভারতীয় দুটি কোম্পানি যৌথভাবে কাজ করছে। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের সাগর এলাকাকে অগভীর ও গভীর মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে অগভীর অংশে ব্লক ১১টি আর গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। সাগরের ২৪টি ব্লক এখন উন্মুক্ত।

সেখানে কোনো অনুসন্ধান কাজ হচ্ছে না। ওসব ব্লককে ইজারার জন্য মডেল পিএসসি (উৎপাদন-অংশীদারিত্ব চুক্তি) সংশোধন করে পেট্রোবাংলা। বিদেশি কোম্পানির জন্য বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দামও। কিন্তু গত দুই বছরেও দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। সম্প্রতি মডেল পিএসসি আবার সংশোধন করে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ১০ ডলার করা হয়েছে। আগামী দুই-এক মাসে দরপত্র ডাকা হতে পারে বলে জানা যায়।

সূত্র আরো জানায়, পেট্রোবাংলা গত সাত বছর ধরেই দেশের সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ শুরু করতে পারেনি। ওই কাজের জন্য ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। নানা বাধা পেরিয়ে ২০২০ সালের মার্চে পেট্রোবাংলা টিজিএস ও স্কামবার্জার কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করে। তাছাড়া কেনা হয়নি পৃথক জরিপ জাহাজও। অথচ প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারত বঙ্গোপসাগর থেকে বিপুল পরিমাণে গ্যাস আবিষ্কার করলেও বাংলাদেশ সমুদ্রের তলে কী সম্পদ লুকিয়ে আছে তা এখনো জানতেই পারেনি।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনাইসহ গ্যাস ও তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি চুক্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ে গ্রেপ্তার হন সাবেক রেলমন্ত্রীর এপিএস, যেভাবে উত্থান তার

‘মেড ইন জিনজিরা’: অবহেলিত সম্ভাবনার স্বপ্ন দুয়ার 

ইবনে সিনা হাসপাতালে রুশ কিশোরীকে যৌন হয়রানি: অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ

ভারতের রপ্তানির খবরে ১০ টাকা কমলো পেঁয়াজের দাম

অবন্তিকার আত্মহত্যা: এখনো মেলেনি তদন্ত প্রতিবেদন, থমকে গেছে আন্দোলন 

সড়কে এআইয়ের ছোঁয়া, বদলে যাচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা 

এখন তিন হাসপাতালে রোগী দেখছেন সেই ডা. সংযুক্তা সাহা

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :