জিভে জল আসা পাটালি গুড়ের নির্মাণ শৈলীও লোভনীয়

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর
 | প্রকাশিত : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৫১

জিভে জল চলে আসে পাটালি গুড় দেখলেই। মৌ-মৌ গন্ধ আর লোভনীয় এক একটি খন্ড দেখলে মন চোখ জুড়িয়ে যায়। পাটালি গুড় তৈরিতেও রয়েছে নান্দনিকতায় ভরপুর। আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে রস সংগ্রহ, তারপরে পাত্রে জ্বালিয়ে লালচে রং হলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় পাটালি গুড়। তবে গুড় তৈরির কারিগরা ভালো নেই। ভেজালের ভিড়ে নড়বড়ে অবস্থা এ শিল্লের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোর।

সরেজমিনে গিয়ে জানা দেখা যায়, শীত আর কুয়াশার মধ্যেই আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছেন মাদারীপুরের গাছি মনজিল শিকদার ও তার ছেলেদের নিয়ে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একের পর এক গাছ থেকে চলে রস সংগ্রহের পালা। গাছ থেকে রস নিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। তা বড় পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। এরপরে একটি বড় পাত্র বা তাফালে গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস ছেকে জ্বাল দেওয়া শুরু হয়। এভাবেই চলে আধা ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা লড়াই। নাড়তে নাড়তে রস যখন ঘন হয়ে আসে, তখন বড় বালতিতে ঢালা হয়। এসময় টাটকা গুড়ের গন্ধে মাতোয়ারা করে ফেলে। তারপরে ছোট ছোট পাত্রে সেই গুড় ঢালা হয়। এক পর্যায়ে এক একটি খন্ডে তৈরি হয় পাটালি গুড়।

মনজিল শিকদার বলেন, ‘আমি এখন বুড়ো হয়ে গেছি। তাই ছেলে নাতিদের নিয়ে গাছ থেকে রস নামাই। সেই রস থেকে বিভিন্ন ধরণের গুড় তৈরি করা হয়। এক সময় পুরো পাঁচ মাস রসের রমরমা ছিল। এখন তেমন গাছও নাই, তেমন রসও নাই। যাও কিছু আছে, তাতেও আগের মতো রস আসে না। ফলে এখন আর ছেলেরা এই পেশায় থাকবে না। আমি যত দিন বেঁচে আছি, তত দিন টিকে থাকবে।’

সাধারণত বাংলা মাসের অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন ধরন অনুযায়ী খেজুরের গুড়কে দানাগুড়, পাটালি, ঝোলা গুড়, চিটাগুড় ভাগে ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে পাটালি গুড় খুবই সুস্বাদু। তবে ভেজালের ভিড়ে খাঁটি গুড় তৈরির সাথে জড়িতদের দিন কাটছে অভাব অনাটনে। যে কারণে এই পেশায় টিকে থাকতে পারছেন না। আর এই রসানোবিলাসি পাটালি গুড়ের ভেজাল দেয়ায় ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যেও। তারা চায়, আগের ঐতিহ্য ফিলে আসুক পাটালি গুড়।

কুনিয়া এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হাওলাদার বলেন, ‘আমরা যাও রস চোখে দেখলাম, পরবর্তী প্রজন্ম রস কি সেটা জানবে না। যেহারে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে, সেহারে গাছ লাগানো হচ্ছে না। ফলে রসও আর আসার কথা না। খেজুর গুড়ের ঘ্রাণ বহু দূর পর্যন্ত পাওয়া যেত, এখন কাছে আসলেও সেই চিরচেনা ঘ্রাণ নেই।’

আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গাছিদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে গুড়ে চিনি না মিশাতে। গাছিদের প্রণোদণার আশ্বাস জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘গাছিদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে উপরে গিয়ে রস নামাতে না হয়। তারা নিচে বসেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে পারবে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগাতে কৃষি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে জেলার ব্রাডিং এই খেজুর রস আর খেজুর গুড় তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে।’

শীতকালে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে পায়েস এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন পিঠা, তালের পিঠা, খেজুর গুড়ের জিলাপি তৈরি করা হতো। তবে বর্তমানে নিপা ভাইরাসে খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকার পর্রামশ বিশেষজ্ঞদের।

(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :