মানিকগঞ্জের হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি আশুলিয়ায় গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাকার চাঞ্চল্যকর টুটুল হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সুরুজ মিয়া ওরফে সৌরভকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার আশুলিয়া থানার পলাশবাড়ী কামাল গেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দীর্ঘ আট বছর ধরে বিভিন্ন ছদ্মবেশে পলাতক জীবনযাপন করেছেন।
বুধবার বিকালে র্যাব-৪ এর সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি দল মানিকগঞ্জের চাঞ্চল্যকর টুটুল হত্যা মামলার পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য মঙ্গলবার বিকালে আশুলিয়া থানার পলাশবাড়ী কামাল গেইট এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সুরুজ মিয়া ওরফে সৌরভকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সুরুজ ও নিহত টুটুল একই এলাকার বাসিন্দা। তারা এক সাথে পড়াশুনা করত। নিহত টুটুলের সাথে প্রধান আসামি সুজনের পুরাতন সাইকেল কেনাবেচার সূত্র ধরে দুই পরিবারের মধ্যে একটি বিরোধ সৃষ্টি হয়।
র্যাবের ভাষ্য, ২০১৪ সালের ২৩ মে বিকাল তিনটার দিকে নিহত টুটুলের বাবা আরমান আলীর সাইকেলে চড়ে তেওতা বাজারে এসে জমিদার বাড়ির গেটে অবস্থিত চায়ের দোকানে আসেন। তখন এই মামলার প্রধান আসামি সুজন ও তার সহযোগী আসামিরা পূর্ব শত্রুতাবশত টুটুলকে একা পেয়ে সেখান থেকে কৌশলে অজ্ঞাতনামা জায়গায় নিয়ে টুটুলের পরিহিত শার্ট বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাম পায়ের হাটুর নিচ থেকে পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়। আর গলা ও মাথার ডান পাশের অংশ কুপিয়ে খুন করে। পরে তার লাশ গুম করার জন্য তেওতা জমিদার বাড়ির অন্ধ কুপে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
নিহত টুটুলের বাবা আরমান আলী তার ছোট ছেলেকে সম্ভাব্য সব জায়গায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি খোঁজাখুজি করেন। তাকে কোথায় না পেয়ে শিবালয় থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংবাদের ভিত্তিতে শিবালয়ের থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা লাশটি উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকজন অজ্ঞাতনামা লাশটি টুটুলের লাশ বলে শনাক্ত করেন।
এ ঘটনায় নিহত টুটুলের বাবা আরমান আলী বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ১ জুলাই শিবালয় থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সুরুজ, লিটন, মোক্তার, রাজু, আবু তালেবসহ অজ্ঞাতনামা আরো দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার পর প্রধান আসামি সুজন ও তার সহযোগী লিটন, মোক্তার, রাজু এবং আবু তালেবকে শিবালয় থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মামলা হওয়ার পর থেকেই সহযোগী আসামি সুরুজ আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাব জানায়, পরবর্তী ওই মামলায় টুটুল হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আসামি মো. সুরুজকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। পলাতক আসামি সুরুজ মিয়া মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই গত আট বছর পলাতক ছিলেন।
র্যাব জানায়, তিনি ১৯৯৮ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার নারায়ণ তেওতা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় এলাকার একটি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। সুরুজ পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করতে ২০১৪ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসেন। গত আট বছর ধরে আসামি মো. সুরুজ মিয়া নাম পরিবর্তন করে মো. সৌরভ নাম ব্যবহার করেন। তিনি বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়াসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করেন। প্রথমদিকে তিনি দিনমজুর, কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে সুরুজ মিয়া আশুলিয়া এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/এএ/এলএ)