এবার বাজার সিন্ডিকেটের খোঁজে দুদক

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৩:১৮| আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩৫
অ- অ+

এবার বাজার সিন্ডিকেটের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন। রমজান ও ঈদকে ঘিরে বাজার অস্থিতিশীল করে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতানো অসাধু ব্যবসায়ীদের সন্ধানে দুদক অভিযান চালাবে। দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল দুদকের কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও একটি চক্র বাজারকে অস্থির করে তুলছে। আর এই অস্থিরতার আড়ালে তারা অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি দুদকের নজরে এসেছে। বাজারে সিন্ডিকেটের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতানোর পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এ বছরও রমজানের দুই মাস আগে থেকেই বাজারে শুরু হয় সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বাজারে স্থিরতা ফেরাতে পারেনি এখনও। বাজার দেখভালকারী সরকারের সংস্থাগুলো প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়েও অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট বাজার সিন্ডিকেট অবৈধভাবে মুনাফা লুটে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি তারা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জিম্মি করছে সাধারণ ক্রেতাদের।

এ বিষয়ে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা কয়েকটি করপোরেট কোম্পানির হাতে চলে গেছে। ওইসব কোম্পানির হাতে বাজার ব্যবস্থা জিম্মি হয়ে পড়লে বাজারের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। অকারণেই বাড়তে থাকবে দ্রব্যমূল্য। তা নিয়ন্ত্রণ করা সামনে আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণে এখনই এই সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে হবে।’

অন্যদিকে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা মনিটরিং অব্যাহত রাখছি। ব্রয়লারের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বাজার থেকে সিন্ডিকেট নির্মূলে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ইতোমধ্যেই মুরগির একটি পাইকারি আড়ৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাজার কমিটিগুলো এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে।’

এদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গতকাল প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় মাসে নিম্নবিত্ত পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ, কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি।

সানেমের জরিপের তথ্য বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

জরিপটি চলতি মার্চ মাসে করা হয়েছে। তবে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসের তথ্য নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে না কমেছে, তা তুলে ধরার জন্য এই জরিপ করা হয়নি।

সানেম বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাবারের খরচ মেটাতে মানুষ এখন ব্যাপক কাটছাঁট করে চলছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে।

সংস্থাটির ভাষ্য, ‘যেমন ছয় মাস আগেও যেসব পরিবারে মাসে চার বার মুরগি খেত, এখন তারা দুইবার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে।’

সানেম বলছে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং সেবায়ও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য- এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জরিপের তথ্য বলছে, শহরের নিম্ন আয়ের পরিবার খাদ্য কিনতে বেশি কাটছাঁট করছে। গ্রামের পরিবারগুলো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে খরচ কমিয়েছে বেশি। জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে, তার জন্য জরিপ না করেও বলে দেওয়া সম্ভব, তারা কেমন আছে। এ জন্য এই জরিপে যা উঠে এসেছে, তা হয়তো অনেকের জানা।

(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/আরআর/আরকেএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
র‌্যাব ডিজির ‘স্টাফ অফিসার’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে অংশ নেওয়া সেই অফিসার
সিরাজগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
সাইবার হামলার আশঙ্কা: সতর্কতা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ছোট-খাটো বিষয়গুলো নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি না করার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা