সরকারি জমিতে হোটেল ওলিও: নোটিশ টাঙানোর পরও পিছু হটল ঢাকা জেলা প্রশাসন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:৩০

খাসজমি দখল করে রাজধানীর কলাবাগানের পান্থপথে হোটেল ওলিও বানানো হয়েছে। ফিরোজুর রহমান ওলিও অবৈধভাবে দখল করে সরকারি জমির ওপর হোটেল ওলিওর পাশাপাশি দোকান বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া দিচ্ছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসন তাঁর কাছে বৈধ কাগজপত্র চেয়েছিল। তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ওই ভবনে বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা জেলার মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেলের আওতাভুক্ত শুক্রাবাদ মৌজার বর্ণিত ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ (০.০৮৭৪ একর) জমি সরকারি সম্পত্তি। এই সম্পত্তিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

জেলা প্রশাসকের বিজ্ঞপ্তি টাঙানোর সময় উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উজ্বল কুমার হালদার, ধানমন্ডি সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহিদুল ইসলাম ও লালবাগ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মো. মামুনুর রশিদ।

নোটিশ টাঙানোর দিন ঘটনাস্থলে উজ্বল কুমার হালদার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘অবৈধভাবে দখল করা সরকারি খাসজমি চিহ্নিত করে উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দিলাম। পরে এখানে উচ্ছেদ করা হবে।’

তবে ওই বিজ্ঞপ্তি টাঙানোর দুই মাস পার হলেও এ বিষয়ে কোনো নড়াচড়া নেই ঢাকা জেলা প্রশাসনের। বিজ্ঞপ্তি টাঙানোর পর আর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। রাজধানীর বুকে প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে সরকারি জমি বছরের পর বছর বেদখল থাকে, সেই প্রশ্ন তাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উজ্বল কুমার হালদার বলেন, ‘সরকারি জমি উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেলের অধিক্ষেত্রভূক্ত শুক্রাবাদ মৌজার এস.এ ৩৩২, আর.এস ৯৪৬ এবং মহানগর ১০৭০ নং দাগের ০.০৮৭৪ একর সরকারি ভূমি দখল করে চারতলা ভবন করেছেন ফিরোজুর রহমান ওলিও।

ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, বেদখল ওই জমি এস.এ ও আর.এস এবং মহানগর জরিপে ১ নং খাস খতিয়ানে বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক, ঢাকার নামে রেকর্ডকৃত সরকারি সম্পত্তি। বিপুল মূল্যের ওই খাস জমি উদ্ধারের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দখল করা ওই জমিতে গড়ে তোলা চারতলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবনটিতে ওলিও ইন্টারন্যাশনাল একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। আর নিচতলায় ‘হায়া রেন্ট-এ কার’, ‘ঢাকা রেন্ট-এ কার’, ‘কোহিনুর ইলেকট্রিক’, ‘আইমান ইন্টারন্যাশনাল’, ‘বিসমিল্লাহ মটরস’, ‘যমুনা রং প্লাজা’ ও ‘ডিকো কর্পোরেশন’ নামে কয়েকটি দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাঙানো নোটিশে এক সপ্তাহের সময় উল্লেখ করা হয়েছিল। অথচ দুই মাস পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা একটা আইনি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া মেনে ঢাকা জেলা ও ঢাকা শহরে যারা সরকারি খাস জমি অবৈধ দখলে রেখেছে তাদেরকে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।’

‘এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকারি জমিতে হোটেল ওলিওসহ গুরুত্বপূর্ণ যেসব স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলো আমরা উচ্ছেদের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এরইমধ্যে আমরা উচ্ছেদ নথি প্রস্তুত করেছি। অতি দ্রুতই আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী সরকারি খাস জমি উদ্ধার করবো।’

ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। হোটেল ওলিওকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বলেছিলাম কিন্তু তারা তা দেখাতে পারেনি। তারা আমাদের নোটিশ মোতাবেক সাড়াও দেয়নি। এখন আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাবো।’

ঢাকা জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘ঢাকা জেলা ও ঢাকা শহরে সরকারি সম্পত্তির যারাই অবৈধ দখলদার, তারা যত প্রভাবশালী ক্ষমতাশালীই হোক না কেন সরকারি সম্পত্তি কেউ অবৈধ দখলে রাখতে পারবে না।’

(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :