আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে ৩২৩ চরমপন্থি, ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, ১১:২৩ | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২৩, ০৯:১৪

বিপুল অস্ত্র-গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন ৩২৩ জন চরমপন্থি। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে সিরাজগঞ্জ স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তাদের আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে।

র‌্যাব-১২-এর তত্ত্বাবধানে টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ ছাড়াও রাজবাড়ী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলাসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন চরমপন্থি দলের সদস্যরা আত্মসমর্পণ করবেন। দুইশতাধিক অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ জমা দেওয়া হবে বলে আশা করছে র‌্যাব।

বাহিনীর একাধিক সূত্র ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগেও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জলদস্যু এবং সুন্দরবনে জলদস্য-বন্যদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয় র‌্যাব। কয়েকশ অপরাধী র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সমাজের মূলধারায় ফিরে আসা এই ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে র‌্যাব। এছাড়া ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে অনেক জঙ্গিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সুযোগ দিয়েছে বাহিনীটি, যা বিশ্বে অনন্য নজির হিসেবে দেখা হয়।

ভয়ঙ্কর অঞ্চল

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এক সময় অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সশস্ত্র হামলা, হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিত্যদিনের ঘটনা ছিল। এসব অঞ্চল ‘রক্তাক্ত জনপদ’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছিল। লুটতরাজ, জিম্মি, অপহরণ, খুন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল, জনযুদ্ধ, সর্বহারাসহ ১৪টির বেশি চরমপন্থি দল সক্রিয় থেকে এসব অপরাধ করতো। তারা আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউনিস্ট পার্টির মাধ্যমে বন্দুক দিয়ে রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল। এতে সাধারণ মানুষ তাদের নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতো।

জানা গেছে, এক সময় এসব অঞ্চলের প্রতিটি পরিবার থেকে সামর্থ্যবান পুরুষকে চরমপন্থি দলে যোগ দিতে হতো। অন্যথায় পুরো পরিবার নির্যাতনের শিকার হতো। রাত গভীর হলে অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই আতঙ্কে থাকতেন। চরমপন্থিরা নব্বই দশক থেকে এখন পর্যন্ত দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে খুন করেছেন। এই তালিকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যও রয়েছেন।

র‌্যাব বলছে, এসব এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে র‌্যাব তাদের কার্যক্রম শুরু করে। অভিযানিক কার্যক্রমের মাধ্যমে র‌্যাব অনেক সফল অভিযান করে। এতে চরমপন্থি গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় অনেকেই গ্রেপ্তার হয়। অব্যাহত অভিযানে ভিত ভেঙে পড়ে চরমপন্থিদের। এর ফলে শীর্ষস্থানীয় চরমপন্থিসহ বিভিন্ন চরমপন্থি দলের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধারাবাহিক অভিযানে চরমপন্থিরা অনন্যোপায় হয়ে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের সুযোগ খুঁজতে থাকে।

বাহিনীটি বলছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া এই চরমপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে র‌্যাব। একসময় তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এতদিন চরমপন্থি দলের সদস্যরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। এ কারণে তারা দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এখন তারা অপরাধ জীবন ছেড়ে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারবেন।’

চরমপন্থিদের অপরাধ জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে র‌্যাব ফোর্সেস ২০২০ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে বলে জানান মঈন।

কর্মসংস্থান করে দিচ্ছে র‌্যাব

সর্বহারাসহ চরমপন্থিদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারীদের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং স্বাভাবিক পেশায় পুনর্বাসিত করা হবে। টাঙ্গাইলে ৩০টি সর্বহারা পরিবারের মহিলা সদস্যদেরকে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য ‘উদয়ের পথে’ নামে পাইলট প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। ভূমিহীনদের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য জমি বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন চরমপন্থি দলের নেতা ও সদস্যদের আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে গরুর খামার, পোল্ট্রি ফার্ম, মাছ চাষ, চায়ের দোকান, ভ্যান-রিক্সা, সেলাই মেশিন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে।’

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘এই উদ্যোগ তখনই সফল হবে, যখন সমাজ ও রাষ্ট্র আত্মসমর্পণকারীদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ, আমাদের সমাজে এ জাতীয় অপরাধে জড়ানো ব্যক্তিদের পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটাকেও স্বাভাবিকভাবে নেওয়া হয় না। সমাজের একশ্রেণির মানুষ চলনে-বলনে তাদের টার্গেট করে এক ধরনের কলঙ্কের ইঙ্গিত করে থাকেন।’

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/এসএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :