যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
 | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:১৭

দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই চালু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলা এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান।

নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারপোর্ট-ফার্মগেট অংশ আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। এ এক্সপ্রেসওয়ের পুরো কাজ শেষ হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমবে। পাশাপাশি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।

এক্সপ্রেসওয়ে তিন ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম অংশের বনানী পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ, বনানী থেকে মগবাজার অংশে ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত শেষ অংশে ভৌত কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট কাজ শেষ হয়েছে ৬৩ শতাংশ। পুরো প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি।

প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রথম ধাপে ১ হাজার ৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস বিম ও ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার ও ৩২৮টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

প্রকল্পের ভৌত কাজের দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৬৩৩টি পাইল, ৩৩৫টি পাইল ক্যাপ, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস বিম ও ২ হাজার ৩০৫টি আই গার্ডার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৪৪টি আই গার্ডার ও ২৩৩টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ভৌত কাজের অগ্রগতি ৫৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এ উড়াল সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

উড়াল সড়কের রুট কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। পুরো পথই রেললাইন ঘেঁষে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের অগ্রগতি মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা যখনই নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন, তখনই জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন।প্রথমবার সরকারে এসে তিনি যমুনা নদীর ওপর বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেন। এছাড়াও আরও অনেক সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে রয়েছে—ধরলা সেতু, গাবখান সেতু, শিকারপুর ও দোয়ারিকা সেতু এবং ভৈরব নদ সেতু। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনাই ছিল তার সরকারের প্রচেষ্টা।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। মধুমতি সেতু ও নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। একের পর এক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এখন মোংলা বন্দর আমাদের খুব কাছে এসে গেছে। সেই সঙ্গে আমাদের স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরাসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের চট্টগ্রাম এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর একটি আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।

এদিকে, আগামী অক্টোবর মাসের শেষ প্রান্তে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার বিকেলে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি জানান, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। এই সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এখন দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে ২৬ লাখ টাকা।

গত ১৪ বছরের সারা দেশে প্রতিটি গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সড়ক ও মহাসড়কের অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে একটি গাইডলাইন করা হয়েছে। যে গাইনলাইনের আলোকে দেশের সব এলাকার সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে সময়োপযোগী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নেই কাজ করছে সওজ। সওজের মেধাবী সব প্রকৌশলীর মেধার যথাযথ বাস্তবায়নেই কাঙ্ক্ষিত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মহাসড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বর্তমানে জনগণ নির্বিঘ্নে ও স্বল্প সময়ে যেমন যাতায়াত করতে পারছেন গন্তব্যে, তেমনি পণ্য পরিবহনও করতে পারছেন সহজেই। এ ছাড়া বর্তমান সরকার আমলে সমতল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দেশের সর্বত্রই নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব সড়ক-মহাসড়কসহ সওজের মাধ্যমে বর্তমানেও চলমান রয়েছে জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্ট উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ কাজ।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :