বাগেরহাটে ভেঙে গেছে ভৈরব নদের বেড়িবাঁধ, ৫ গ্রামের মানুষের চলাচলে ভোগান্তি

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢা্কাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ জুলাই ২০২৩, ২০:১৬

বাগেরহাট সদর উপজেলার ভৈরব নদের তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বেড়িবাঁধের একটি অংশ মঙ্গলবার ভেঙে গেছে। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় অন্তত পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে। ইটভাটার মালিক বেড়ির পাশ থেকে মাটি কেটে নেয়া এবং বাঁধের নিচ দিয়ে অবৈধভাবে কালভার্ট নির্মাণ করায় বাঁধটি ভেঙে গেছে অভিযোগ স্থানীয়দের। ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে, বুধবার সকালে বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাঁধের সংস্কার ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিককে ওই কালভার্ট অপসারণ করতে চিঠি দিয়েছে। তবে ইটভাটা মালিক তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জানা গেছে, বাগেরহাট শহরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। এই ভৈরব নদের তীরবর্তী সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালকাঠি গ্রাম। এই গ্রামের তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। গত অর্থ বছরে নব্বই লাখ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধটি সংস্কার করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। বাঁধের উপর দিয়ে গোটাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে।

গোপালকাঠি গ্রামের জিল্লাল শেখ, পিন্টু সিকদার ও সুজন হাওলাদারসহ বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুই দশক আগে এমবিএ নামে একটি ইটভাটা গড়ে ওঠে। এই এমবিএ ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনি নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে নিয়ে ইটভাটায় ব্যবহার করেন। এই নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের হুমকি ধামকি দেয়। এই বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। প্রশাসনের কাছে এই সমস্যার সমাধান চেয়েও আমরা পাইনি।

গোটাপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম বিপ্লব অভিযোগ করে বলেন, এই বাঁধের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এই বাঁধের পাশ দিয়ে স্কেভটর দিয়ে ইটভাটা মালিক মাটি কেটে ইট তৈরি করেন। সরকারি বেড়ি বাঁধ অবৈধভাবে কেটে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি কালভার্ট নির্মান করেছেন। এই কালভার্ট নির্মাণের কারণে এই বাঁধটি ভেঙে গেছে।

তিনি অবৈধভাবে কেশবপুর নদের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করেন। অবৈধভাবে সরকারি জায়গার মাটি কাটার অভিযোগে কিছুদিন আগে তাকে প্রশাসন এক লাখ জরিমানা করে। তারপরেও তার মাটি কাটা থেমে নেই। প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সেই দাবি জানাচ্ছি।

তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে এমবিএ ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনি বলেন, এই কালভার্টটি ১৩ থেকে ১৪ বছর আগের নির্মান করা। সম্প্রতি এই বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ করা হয়। ওই সংস্কারে কাজে বাঁধের পাশ দিয়ে মাটি কেটে দেয়া হয়েছে। মাটি কাটার কারণে ধীরেধীরে তা ভেঙে গেছে। নদী থেকে মাটি কাটার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আমি নদী থেকে মাটি কাটিনা আমি দুরের পতিত জমি দিয়ে মাটি কিনে এনে ইট তৈরি করি।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সংবাদ পাই। বুধবার সকালে আমি ঘটনাস্থলে এসে দেখি বাঁধের নিচ থেকে একটি কালভার্ট। ওই কালভার্ট দিয়ে একটি মাছের ঘেরের পানি ওঠানামা করে। ওই পানির চাপে ধীরে ধীরে বাঁধটি দুর্বল হয়ে ভেঙে গেছে। সকালে এসে কালভার্টটি অপসারণ করা হয়েছে। এই বাঁধ দ্রুত নির্মাণ করার জন্য পাউবোকে অনুরোধ করা হয়েছে। স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি এই বাঁধে ইটের সলিং দেয়া হয়েছে। ইটভাটা মালিকের অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে সেই রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। তার ব্যক্তিগত ব্যবসার কারনে এই বড় একটি জনগোষ্ঠির সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান করতে জড়িত ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান এই জনপ্রতিনিধি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ভৈরর নদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধের গোপালকাঠি অংশে অবৈধভাবে কালভার্ট নির্মান করা হয়। যা আমরা অবহিত ছিলাম না। এই অবৈধ কালভার্টের কারনে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই বাঁধে যে ব্যক্তি কালভার্ট নির্মান করেছেন নিজ উদ্যোগে তা অপসারণ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। কালভার্ট অপসারণের পর দ্রুতই তা মেরামত করে দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :