‘বুয়েট শিক্ষার্থীরা হাওরে ঘুরতে গিয়েছিল, নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য হাস্যকর’, বললেন অভিভাবকরা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখানো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
মঙ্গলবার বিকালে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি তাদের সন্তানেরা কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয় বলে চ্যালেঞ্জ করেন।
গেল রবিবার টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরে বেড়ানোর সময় বুয়েটের বর্তমান ও প্রাক্তনসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়।
গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের একজন আলী আম্মার মুয়াজের বড়ভাই আলী আহসান জুনায়েদ অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
অভিভাবকরা বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে আজকে অভিভাবক হিসেবে আপনাদের সহযোগিতা পেতে আপনাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।’
অভিভাবকরা জানান, তাদের জ্ঞাতসারে গত শনিবার তাদের সন্তান/স্বজনেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। যাওয়ার পরে সুনামগঞ্জ গিয়ে আরও বেশ কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে তারা আনন্দিত হয় এবং তারা সবাই একত্রে ঘোরার কথা জানায়।
অভিভাবকরা বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদেরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি হাওর এলাকায় হয়ত নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ফোনে কল যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ তাদেরকে ফোনে না পেয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি। এরপর প্রায় ৩ ঘন্টা পরে রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকের কাছেই সন্তানেরা তাদের নজের ও গার্ডিয়ানের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নাম্বার জানাতে বলে।’
অভিভাবকদের ভাষ্য, ‘তারা (শিক্ষার্থীরা) জানায় যে তাদেরকে পুলিশ হাওরে নৌকায় ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে: এরপর আইডি কার্ডের নাম্বার নেয়ার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এতটুকুই বলতে পারে।
‘অনেক উদ্বিগ্নতার পরে গতকাল (সোমবার) বিকালে সংবাদমাধ্যমের বরাতে আমরা জানতে পারি যে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে।’
অভিভাবকরা বলেন, তাদের সন্তানদের ব্যাপারে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে তারা অবাক হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বানোয়াট সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দূরভিসন্ধিমূলক বলে তারা মনে করেন।
গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দাবি, তাদের সন্তানেরা কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে তারা জড়িত নন। ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে এবং ভালো সন্তান হিসেবে আমরা তাদের ব্যাপারে গর্ব অনুভব করি। ছোটবেলা থেকেই তাদের পড়ালেখার প্রতি ঝোঁক ছিল; রাজনীতিসহ এজাতীয় কোনো কাজের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।’
‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন মামলা সাজানো হলো, আমাদের বোধগম্য নয়।’
এসময় উপস্থিত অভিভাবকরা দ্রুত তাদের জামিন প্রদান ও মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
(ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/এসকে/ইএস/ডিএম)