ফ্রিম্যান ক্লার্ক ও আমাদের সুপ্রিয় শেখ হাসিনা

ড. কাজী এরতেজা হাসান
 | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪০

জেমস ফ্রিম্যান ক্লার্ক বলেছিলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ আগামী নির্বাচনের কথা ভাবেন; একজন রাষ্ট্রনায়ক পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবেন।’ খুব সম্ভবত বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন মতবাদ প্রাণান্ত ডানায় ভর করে আমাদেরকে নৈতিকতা শেখানোর কাজটুকু নিষ্পত্তি করায়।

বাংলাদেশে একজন শেখ হাসিনা আছেন। তাঁর মতো রাষ্ট্রনায়ক এই বিশ্বে খুব কমই আছেন। সুদীর্ঘ সাড়ে চৌদ্দ বছর টানা রাষ্ট্রীয় সেবায় থেকে তাঁকে কখনই উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায় নি। গেল কয়েক মাসে একটি শ্রেণি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন তুলে তাঁকে ও তাঁর ক্ষমতাসীন দলকে আঘাত করতে চাইলেও, তিনি বলেছেন, উজান ঠেলে নৌকা এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা তাঁর দীপ্ত কণ্ঠে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে বারংবার করে জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি নতুন প্রজন্ম ও অনাগত প্রজন্মের জন্য চিন্তামনষ্ক সেই সত্তা, যার ধ্যানে শুধুই বাংলাদেশ নামক একটি দেশ, যে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে, সেই স্বপ্নে তিনি বিভোর থাকতেই স্বস্তিতে থাকেন।

স্বপ্নও বলা যায় না। তিনি তো দৃশ্যমান উন্নয়ন ও অগ্রসর জীবনের অবকাঠামো দাঁড় করিয়ে বলতে পারছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বরং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলাদেশ গড়ার। প্রকৃতির বিচারও আছে। রাজনৈতিক অপশক্তি মহান নেতাকে পৃথিবী থেকে উৎখাত করতে যেয়েও পারেনি। হেরে গেছে তারা। সেই বঙ্গবন্ধু আত্মজা ঠিকই বাংলাদেশের শাসনভার হাতে নিয়ে প্রকৃতির ইচ্ছেকে জিতিয়েছেন।

স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন তাই হেনরি কিসিঞ্জারেরা বলেছিলেন, তীব্র জনঘনত্ব ও সম্পদের অপ্রতুলতায় বাংলাদেশ নামক দেশের মৃত্যু অনিবার্য--- সেই বাংলাদেশ একজন শেখ হাসিনায় ভর করে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা একটি আধুনিক রাষ্ট্র আজ। তবে তাঁর নিজের দলের মধ্যেও কয়েকটি শ্রেণির নেতাকর্মী ছিল বা আছে, যারা মনে করছে যে, বৈশ্বিক পর্যায়ের রাজনৈতিক পরিক্রমার মাশুলে শেখ হাসিনা কী সত্যিই এবার পেরে উঠবেন?

একসময় ছাত্রলীগ করা মানুষ ডেপুটি এটর্নি জেনারেলের মতো পদ আঁকড়িয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েও সুশীল উপদ্রবের প্রধান অস্ত্র ডক্টর ইউনূসে মেতে গিয়েছেন, এমন দৃষ্টান্তও সকলের চোখে পড়েছে। এমন কি খোদ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেও হালে খানিকটা সুশীল আবহের শারীরিক -মানসিক ভাষায় সিক্ত হতে দেখা গিয়েছে। যদিও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বর্তমান শাসকের নিজ উদ্যোগে শেখ হাসিনা ও তাঁর তনয়ার সঙ্গে সেলফি তোলার অভিনব, অত্যাশ্চর্য, চমকপ্রদ স্থিরচিত্রগুলো আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যগোচর হলে, নিন্দুকদের আজ সত্যিই মাথায় হাত!

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনৈতিকেরা যখন শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচন হবে কি হবে না, অর্থাৎ মনে মনে রাজনীতির বিরাজনীতিকরণের প্রশ্রয়ে এগোতে চায়, তাঁদের জন্য একজন শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিকভাবে যমের মত ! তাই ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে সকলেই পুনরায় শেখ হাসিনায় মেতে উঠে বলছেন, জয় বাংলা!

জয় বাংলা বলতে হলে হৃদয় থেকে রক্ত ক্ষরণ হতে হয়, দেশপ্রেমে আপ্লুত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভেসে যেয়ে বঙ্গবন্ধুর দরাজ কণ্ঠ নিজের কণ্ঠে নিয়ে আসতে হয়। মনের কোষ থেকে ধ্বনিত হয়ে বলতে শেখায় তখন, জয় বাংলা ! ওই একজন শেখ হাসিনার মায়ের মত মুখকে ধারণ করে বলতে হয়, মা, তুমি এগিয়ে যাও, তোমার সন্তান হয়ে বলছি, কথিত জাতীয়তাবাদী শক্তি কিংবা সুশীলদের কাছে বাংলাদেশকে দিয়ে দিতে পারি না। খোদ আওয়ামী লীগে হাইব্রিড, সুবিধাবাদী ও ছদ্মবেশীরা নেতাকর্মী সেজে আছেন। চেহারায় রঙ লাগিয়ে তাঁরা ফলত আওয়ামী লীগের শত্রু। দৃশ্যপট, প্রেক্ষাপট একটু বদলে গেলেই তাঁরা তাঁদের আসল চেহারা নিয়ে সামনে চলে আসে।

জনগণের উচিত নয় সরকারকে ভয় করা। সরকারের উচিত জনগোষ্ঠীকে সম্মান করা, ভয় করা---জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। সেটা একজন শেখ হাসিনা বোঝেন। বোঝেন বলেই তিনি মাঝেমাঝে হতাশও হন। যখন তিনি তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় দেখেছেন যে, কিভাবে বিদেশিদের খুশী করে দেশের মৌলবাদী জাতীয়তাবাদী শক্তি অতীতে ক্ষমতায় এসেছে। ভূরাজনীতির আদ্যোপান্ত নিয়ে গভীর চিন্তায় পরিবেষ্টিত হলেই দেখা যাচ্ছে যে, এই বিশ্বের পরাক্রমশালী প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের বাংলাদেশকে লেগে যাচ্ছে। স্বভাবতই তাঁদের দরকার বাংলাদেশে দুর্বল সরকার, রাজাকার সরকার। এখানে রাজাকার অর্থে তাবেদারী গোত্রের কথাই বলছি।

শেখ হাসিনা তো সেই দুর্বল শাসক নন। শেখ হাসিনা তো তাবেদারী করার জন্য জন্ম নেন নাই। সঙ্গত কারণে তাই ছোট ছোট বাঁধা চলে আসে। কিন্তু একজন শেখ হাসিনা কী শুধুই একজন রাষ্ট্রপ্রধান? মনে রাখা শ্রেয় যে, তিনি এই গ্রহের এখন অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক। আপনি চাইলেই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না। একদিকে তাঁর যেমন রয়েছে, জনশক্তির সমর্থন, অন্যদিকে রয়েছে তাঁর হাতে প্রবল দেশাত্মবোধের কৃপাণ। তিনি মানুষের জন্য চিন্তা করার তেমনই এক উদ্রেকে ভাসা অস্তিত্ব, যে অস্তিত্বের সাংস্কৃতিক বোধে গণতন্ত্রই একমাত্র শাসনরীতির অস্তিত্ব, তা জেনেই এক পরিপাটি বাংলাদেশের সন্ধান করেন তিনি।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা ও দি পিপলস টাইমস; সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ; প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি; সহ সভাপতি, ইন্ডিয়ান ইম্পোর্টারস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি; সাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :