পাখির খামারে ভাগ্যবদল তারা মিয়ার

ইমরান মাহমুদ, জামালপুর
 | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ২০:৩৮

শখের বসে পাখি পালন করে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন জামালপুরের নোমান রেজা সুলতানি ওরফে তারা মিয়া (৩৫)। শুরুটা ভালো না হলেও কঠোর পরিশ্রম সফলতা এনে দিয়েছে তাকে। বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। পরিচিত পেয়েছেন পাখি ভাই হিসেবে। এখন তার খামারে ৫০-৬০ প্রজাতির প্রায় ৭ হাজারেরও অধিক পাখি ও কবুতর রয়েছে। প্রকারভেদ এক একটা পাখি ৫০০ থেকে আশি হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। এতে মাসে আয় করছেন এক থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা।

সদর উপজেলার দিগপাইত উপশহরের তিতপল্লা ইউনিয়নের সুলতান নগর গ্রামে কাঁচাপাকা রাস্তায় ঢুকে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে পাখি ভাইয়ের বাড়ি কোথায়। তিনি ওই এলাকার মৃত আবু রায়হান সুলতানির ছেলে। চাইলে আপনিও খুব সহজে ঘুরে আসতে পারেন এই গ্রাম থেকে। প্রথমে সিএনজি কিংবা বাসযোগে দিগপাইত উপশহর সংলগ্ন জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইপিজেড) আসতে হবে। পরে দেড়-দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সুলতান নগর গ্রাম।

জানা গেছে, তারা মিয়া ইরাকের কুর্দিস্তানে অবস্থান করা অবস্থায় শখের বসে স্ত্রী সালমা বেগম ঘরের বারান্দায় তিন জোড়া কবুতর ও এক জোড়া পাখি পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে লাভের মুখ দেখতে থাকায় স্বামীকে দেশে চলে আসতে বলেন। পরে ৭-৮ বছরের প্রবাস জীবন শেষ করে স্ত্রী সালমা বেগমকে সাথে নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন শুরু করেন তারা মিয়া। ২০-৩০ হাজার টাকা মূলধন খাটিয়ে যুক্ত করেন আরোও কিছু পাখি। সেই থেকে শুরু; বছর দুই না যেতেই পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। এখন প্রায় ৪০ শতক জমির উপরে ৫টি সেডে পাখি ও কবুতর পালন করছেন এই দম্পতি। খামারে এখন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ প্রজাতির ৭ হাজারেরও অধিক পাখি ও কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে—লুটিনো, কগাটেল, এক্সিবেশন বাজরিগার, জাপানিজ বাজরিগার, লুটিনো বাজরিগার, ক্লাসিক্যাল বাজরিগার, লাভ বার্ড, কাকাতুয়া, ময়না, জাইন কোনোর, জাবা, ডায়মন্ড ঘুঘুসহ ইত্যাদি পাখি উল্লেখযোগ্য। প্রকারভেদে প্রতি জোড়া পাখি বিক্রি করছেন ৫০০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

এদিকে কবুতরের মধ্যে রয়েছে— ব্ল্যাক বোম্বাই, কালো মুক্ষি, হোয়াইট বোম্বাই, জাহিন হোমার, বিউটি হোমার, গিয়া আউল, সাদা আউল, ড্যানিশ কিং, লাহোরী, সিলভার সিরাজী, লক্ষাসহ বিভিন্ন জাতের কবুতর। জাতভেদে প্রতি জোড়া কবুতর ১ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে তারা মিয়া গড়ে তুলেছেন অনলাইন প্লাটফর্ম। নাম দিয়েছেন 'সুলতানি বার্ডস এন্ড পিজন লফ্ট'। বেশিরভাগ পাখি তিনি অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা আসেন তার বাড়িতে। অনেকে দেখতে এসে শখের বসে কিনে নিয়ে যান পাখি।

তিনি বলেন, দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন এসকল পাখি। এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের হায়দ্রাবাদ প্রদেশে তার পাখির বড় একটি মার্কেট রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে তার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা। খামারে প্রতিদিন খাবার ববদ খরচ আছে দুই-পাঁচ হাজার টাকা। এখন খামার থেকে প্রতি মাসে আয় করছেন এক থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা। আর তাকে অনুসরণ করে ওই এলাকার স্কুল, কলেজ পড়ুয়া এবং বেকার যুবক পাখির খামার করতে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। তবে দিনদিন পাখির খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েই যাওয়ায় অনেকে এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। আক্ষেপ নিয়ে তারা মিয়া বলেন, তিলে তিলে তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এই খামারটিকে গড়ে তুলেছেন। অথচ জেলা-উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোন সাহায্য সহযোগীতায় পাননি তারা। প্রথমদিকে জাহাঙ্গীর নামে একজন তাদের খামার পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারপর আর কোনদিন কারো দেখা পাননি তিনি। ভ্যাক্সিনেশন থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তিনি নিজেই করে থাকেন।

(ঢাকাটাইমস/০৫ অক্টোবর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :