সোনালী লাইফে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তায় ৮ লাখ গ্রাহক

মেহেদী হাসান, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৬

সোনালি লাইফ ইনস্যুরেন্স অস্থিরতা চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। প্রতিষ্ঠানটির সিইওকে বহিস্কার ও দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ; সবমিলিয়ে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্সে। এমন অবস্থায় এই বীমা কোম্পানির প্রায় ৮ লাখ গ্রাহক চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। অস্থিরতার মূলে প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার মেয়ে জামাই বহিস্কৃত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।

জানা গেছে, গোলাম কুদ্দুসের মেয়ে জামাই রাশেদ বিন আমান প্রথম স্ত্রী ফৌজিয়া তানিয়ার অজ্ঞাতে এক নারী সহকর্মীকে বিয়ে করেন। এমন অভিযোগ থেকেই স্ত্রী ও শ্বশুরের সঙ্গে রাশেদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

শ্বশুর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ায় বিশেষ ক্ষমতাবলে মেয়ে জামাই মীর রাশেদ বিন আমানকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বানান। মীর রাশেদ অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে এসে শ্বশুরের প্রতিষ্ঠিত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদে বসেন।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়াকে বিয়ের পরও একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তার সাথে গড়ে উঠে রাশেদের সখ্যতা। এক পর্যায়ের ২০২১ সালে গোপনে বিয়ে করেন সিইও রাশেদ। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর শশুর জামাইয়ে দ্বন্দ বাঁধে। নতুন বছরের শুরুতে অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় সিইও রাশেদ বিন আমানকে। জানানো হয় তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটির বর্তমানে দেশজুড়ে এজন্টে রয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার। ৮ লাখের বেশি গ্রাহকের বীমাকৃত অর্থ রয়েছে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সে। জামাই শ্বশুরের এই দ্বন্দ্বের খবর জানাজানি হলে গ্রাহকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গ্রাহকের অনেকেই এজেন্টদের চাপ দিচ্ছেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। ইনস্যুরেন্সটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় দায়ের করা হয়েছে ৯ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা। সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ মোস্তফা গোলাম এমরান বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে মীর রাশেদ বিন আমানসহ কোম্পানির সাবেক সাত কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। বাকী ছয় আসামি হলেন- সোনালী লাইফের সাবেক এইচআর অফিসার ফাতেমা তামান্না সুইটি, হিসাব বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা সুমি, সাবেক হেড অব পারচেজ রাজেশ আইস, সাবেক হেড অব ফাইন্যান্স মো. বোরহান উদ্দিন মজুমদার, হিসাব বিভাগের সাবেক ম্যানেজার মো. শিপন ভূঁইয়া ও সাবেক হেড অব ইনভেস্টমেন্ট সুজন তালুকদার।

এর আগে মীর রাশেদের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে সোনালী লাইফের পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়।

যদিও শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মীর রাশেদ বিন আমান। উল্টো তিনি অভিযোগ করেন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস কোম্পানির পক্ষ থেকে নিয়োগ করা তৃতীয় পক্ষের তদন্ত এবং রাশেদের অভিযোগের ভিত্তিতে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। গত ১৮ জানুয়ারি পরিচালনা পর্ষদ সভায় তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বচ্ছতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সততা ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে আমি পদত্যাগ করেছি। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিরীক্ষা কার্যক্রম নিবির্ঘ্ন করার পাশাপাশি তদন্ত চলাকালীন কোনো প্রভাব বিস্তার না করে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য আমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি।’

ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদ বিন আমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি সব সত্যি সত্যি দেখাইছিও, বলছিও। কিন্তু হঠাৎ দেখি অফিসে পিডব্লিউসির অডিট। তাদের বিল করা হয়েছে ১ কোটি টাকার মতো। একটা অডিটের বিল এত টাকা হতে পারে না। সর্বোচ্চ পনেরো বিশ লাখ টাকা হতে পারে। তখনই বুঝে গেছি এটি একটি সাজানো অডিট। উনাদের উদ্দেশ্য হলো আমাকে কালার করা।’

রাশেদ বলেন, ‘পিডব্লিউসি (কোম্পানির পক্ষ থেকে নিয়োগ করা তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ) একটা কাগজ দিয়ে গেলো আমাকে দোষী করে। এটা নভেম্বর ডিসেম্বরের ঘটনা। সোনালীতে যা হচ্ছে এটা কুদ্দুস সাহেবের লোভের ফল। পিডব্লিউসির একটা কাগজ দিয়ে উনারা (কুদ্দুস) ডাইরেক্টরদের কাছে যেয়ে বলা শুরু করছে রাশেদ তো এই করছে ওই করছে ওকে এখন সরিয়ে ফেলতে হবে। উনি চাচ্ছেন পুরো অফিসে উনার একক কন্ট্রোল থাকুক। আমি নাকি একশ চল্লিশ কোটি টাকা সরাইছি। এখন মামলা করছে ৯ কোটি টাকার। দশ বছর কাজ করেছি আমি, ৯ কোটি টাকার ব্যাংক স্টেটম্যান থাকা তো স্বাভাবিক। আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কুদ্দুস সাহেব লোভের কারণে নিজের মেয়ের সংসার ভেঙেছেন। আমার বিরুদ্ধে সহকর্মীকে বিয়ে করার অভিযোগ তুললেও প্রমাণ দিতে পারছেন না।’

সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স এতদূর আসার পেছনে তার ভূমিকাই মূখ্য বলেও তিনি দাবি করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে তথ্য পরিবর্তন ও জালিয়াতির অভিযোগও করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/এমএইচ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এখন তিন হাসপাতালে রোগী দেখছেন সেই ডা. সংযুক্তা সাহা

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :