‘ডলার বিনিয়োগ করলে দ্বিগুণ মুনাফা, গ্রাহক খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৫৫ | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৫০

‘অনলাইনে ৩০০ থেকে ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলেই প্রতিদিন আয় ৬ থেকে ২০০ ডলার উপার্জনের সুযোগ। এছাড়া এমএলএম রেফারেন্স বোনাস মিলবে ৩০ থেকে ১ হাজার ডলার পর্যন্ত।’

চটকদার এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছিল একটি সিন্ডিকেট। তাদের প্রলোভনে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেকে। এমন একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

মিরপুর মডেল থানার একটি মামলার সূত্র ধরে তদন্তে নেমে চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।

তারা হলেন- আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইমরান শেখ, মাহবুবুর রহমান সাদিক ও শাহনেওয়াজ শরীফ শামীম।

৩০ জানুয়ারি ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি জানায়, উচ্চ রেফারেল কমিশন এবং ৩ মাসে জমা টাকা দ্বিগুন করার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের ফাঁদে পা দেয়। বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকমাসে প্রায় ৬-৭ কোটি টাকা প্রতারক চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিয়েছে।

যেভাবে প্রতারণা:

গ্রেপ্তাররা অনলাইনে uscommunitytrad.com সাইটের মাধ্যমে তাদের ইনভেস্টমেন্ট সংগ্রহের মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তারা সাধারণ গ্রাহকদেরকে উচ্চ হারে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্কীম প্যাকেজে ইনভেস্টমেন্ট করতে প্রলুব্ধ করে।

তাছাড়াও একজন ইনভেস্টর যদি অন্য কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারেন তাহলে প্যাকেজ ভেদে বিভিন্ন রকমের কমিশন প্রদান করতো। সেখানে রয়েছে তাদের অসংখ্য বিনিয়োগ স্কিম প্যাকেজ।

ডিবি আরও জানায়, তারা প্রায় ৬ মাস ধরে সাধারণ মানুষদেরকে অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ক্রিপ্টোকারেন্সীর (বিট কয়েন) সহায়তায় ডলার ডিপোজিট করতে সহায়তা করতো। ডিপোজিট করা টাকা ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যেতো। যার প্রভাব পরে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর। দেশের ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সীতে লেনদেন অবৈধ।

যেসব স্কিমে নেওয়া হতো বিনিয়োগ:

সিলভার প্যাকেজে ৩০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে বলা হতো প্রতিদিন রিটার্ন পাবে ৬ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ৩০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০০ দিন।

গোল্ড প্যাকেজে ৫০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন পাবে ১০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ৫০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০১ দিন।

ডায়মন্ড প্যাকেজে ১০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন পাবে ২০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ১০০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০২ দিন।

প্লাটিনাম প্যাকেজে ২০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন পাবে ৪০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ২০০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০৩ দিন।

এক্সক্লুসিভ প্যাকেজে ৫০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন পাবে ১০০ ডলার ও রেফারেল কমিশন ১০০০ ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০৪ দিন।

আর ভিআইপি প্যাকেজে ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে বলা হতো প্রতিদিন রিটার্ন পাবে ২০০ ডলার ও রেফারেল কমিশন ১০০০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে। এই প্যাকেজের মেয়াদ ছিলো ১০৫ দিন।

ডিবি সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতারণার নতুন কৌশল হিসেবে চক্রটি নতুন একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হ্যাচারী প্রজেক্টের কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে বিনিয়োগ গ্রহণ করছে। তারা এই টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে আট হাজার করে পঁচিশ মাসে দ্বিগুণ মুনাফাসহ ফেরৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটি ছিল তাদের প্রতারণার নতুন একটি ফাঁদ।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি আমেরিকান কোম্পানির নাম ধারণ করে উচ্চ মুনাফা লোভ দেখিয়ে এমএলএম স্কিমে বিনিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা নির্ধারিত প্যাকেজের আওতায় ডলারের বিপরীতে টাকা বিনিয়োগ করতো। আর সেই টাকা নিয়ে পলাতক হয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি।

গ্রেপ্তারকৃতদের মোবাইলে হ্যাচারি প্রজেক্টের নামে অন্য একটি স্কিমের তথ্য পাওয়া গেছে। যার মাধ্যমে লাখ টাকা করে নেওয়া শুরু করেছিল তারা।

ডিবি প্রধান বলেন, আমরা আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছি। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্য নিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে। আর কতো সংখ্যক লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হবে।

সর্বসাধারণকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন অবৈধ। তাই প্রতারণা এড়াতে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন না করা। নাম সর্বস্ব সফটওয়‍্যারে বা ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ না করা। অনুমোদিত ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যতিত কোথাও লেনদেন না করা।

এছাড়া, অধিক লোভনীয় বিনিয়োগ থেকে সাবধান হতে হবে। যেকোনো ধরণের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই বাচাই করে বিনিয়োগ করা উচিত বলেও সতর্ক করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/এসএস/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

শিল্পী পরিচয়ে ভয়ংকর মাদক কারবারে গায়ক রেবেল, কাজ করতেন ‘ভাইজানের’ হয়ে

২৮ অক্টোবর অছিম পরিবহনে ছাত্রদলনেতার আগুনে প্রাণ যায় নাঈমের, যেভাবে রহস্য উদঘাটন

কেরাণীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার 

সোনালী লাইফের বহিষ্কৃত সিইও মীর রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার, বিপুল কনটেন্ট জব্দ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :