গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে আমরা কতটা অমানবিক হয়ে উঠছি: ড. কামাল উদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৫০ | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:২২

‘গৃহকর্মী নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমাদের অমানবিক হয়ে ওঠার প্রমাণ’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, গৃহশ্রমের সাম্প্রতিক যেসব ঘটনা দেখছি সেগুলো প্রমাণ করে আমরা কতটা অমানবিক হয়ে উঠেছি। আমাদের মন-মানসিকতা কতটা নিচে নেমে গেছে। সভ্য সমাজের বহিঃপ্রকাশ আমাদের মাঝে নেই।

বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বক্তব্যে তিনি গৃহশ্রমিকের অধিকার ও বিশেষ কিছু সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, গৃহশ্রম ও দারিদ্যের আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। জীবন-জীবিকার সংগ্রামে গৃহে শিশুশ্রমের পরিমাণ বাড়ছে। গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুরা সামর্থ্যের বাইরে শ্রম, নিম্নমানের পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাবার ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হওয়া ইত্যাদিতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অত্যন্ত অমানবিক জীবন-যাপনে বাধ্য হচ্ছে। সমাধানের জন্য সামগ্রিক পরিসর অর্থাৎ আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিসর বিবেচনায় নিতে হবে এবং এর জন্য গবেষণাধর্মী ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করা উচিত। আইনটি যাতে সুপ্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হয় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট লক্ষ্যনির্ভর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনটি যাতে শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষার পাশাপাশি যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা করে তা খেয়াল রাখতে হবে। তবে আইন প্রণয়নে দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক, উপপরিচালক এম. রবিউল ইসলাম, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব তমোকো উছিয়ামা, শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সরফুদ্দিন খানসহ অন্যান্য অতিথিরা।

এসময় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমাদের মানবিক ও শিক্ষিত সমাজ নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে আমরা গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। গৃহকর্মী খাদিজা ও প্রীতি নির্যাতনের বিষয়ে কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।

বক্তব্য প্রদানকালে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাস্থ্যখাতে দুরবস্থা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি ডাক্তারদের অনৈতিক ও অমানবিক আচরণের সংবাদ আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। সুন্নতে খৎনা ও প্রসূতির ভুল চিকিৎসা সংক্রান্ত খবরগুলো প্রমাণ করে আমাদের সামাজিক কতটা অবক্ষয় হয়েছে।

বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ফোরামের সমন্বয়কারী সাফিয়া সামি বলেন, এসব গৃহর্কমী মৃত্যুকে আমরা হত্যা বলব। শিশুদের গৃহর্কমী কাজে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত। শিশু শ্রম বলে কিছু থাকবে না। সেখানে তাদের ঝুঁকি অঝুঁকি নিয়ে কথা কেন বলি। আমাদর ব্যক্তি মানুষেরও উচিত এ বিষয়ে সচেতনতা রাখা যে, আমার বাসায় শিশু গৃহর্কমী থাকবে না। ‘সরকারি চাকুরিজীবীদের ম্যানুয়ালে কোনো শিশু গৃহকর্মী রাখা যাবে না’ বিষয়টি থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খান। তিনি বলেন, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) এর আলোকে সরকার ২০২৫ সনের মধ্যে সব ধরনের শিশু শ্রম নিরসনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন।

(ঢাকা টাইমস/এএম/২২ফেব্রুয়ারি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :