পণ্যের দাম নিয়ে অভিযোগ আসে, ব্যবস্থা নিতে পারে না ৩৩৩

তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪, ১১:২৫ | প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪৮

ইচ্ছামতো পণ্যদ্রব্যের দাম বেশি নেওয়া ঠেকাতে জরুরি সেবা নম্বর ৩৩৩ কে রোজার আগেই প্রস্তুত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। যাতে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি নেওয়া হলে তাৎক্ষণিক ওই নম্বরে ভোক্তা বা ক্রেতা অভিযোগ করতে পারবেন এবং প্রতিকার পাবেন। তবে মঙ্গলবার প্রথম রোজায় ফোন করে দেখা যায়, ৩৩৩ নম্বর খোলা। সক্রিয়ভাবে রিসিভ হয় ফোন। কম্পিউটার কণ্ঠে বলা হয়, দাম বেশি নিলে অভিযোগ জানাতে ১ চাপুন। ১ চাপলে এক সেবাদাতা ফোনে কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত অভিযোগ দিলে তিনি তা শোনেন এবং একটি লিংক পাঠিয়ে ওই লিংকে প্রবেশ করে ফরম পূরণ করে ভুক্তভোগীকে ভোক্তা অধিকারে জমা দিতে বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিকার পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ছাড়া উপায় থাকে না অভিযোগকারীর হাতে।

সব মিলিয়ে ৩৩৩ যেমন আশাজাগানিয়া বলে প্রচার করা হচ্ছে, বাস্তবে সেই সুফল মিলছে না। এক কথায় এখনো তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতই হতে পারেনি ৩৩৩।

চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সচিবালয়ে বাজার দরে অধিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং এ বিষয়ে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে উদ্ভাবনী পরিবর্তন আনার বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। এতে টিসিবি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, দোকান মালিক সমিতি, সুপারশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ভোগ্যপণ্যের বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘২০২০ সালে কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর দুস্থ মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে ও রোগী শনাক্তকরণে ৩৩৩-এর ব্যবহার বাড়ানো হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে ৩৩৩ নম্বরকে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলো। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এই পরিষেবার কাজ সম্পন্ন হবে এবং রোজার আগে এই সুবিধা চালু করা হবে।’

কিন্তু রোজা শুরুর আগের দিন সোমবার এ বিষয়ে জানতে প্রতিমন্ত্রী পলককে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে বিষয় উল্লেখ করে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। মঙ্গলবারও তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তার ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গেও এ প্রতিবেদকের একাধিকবার কথা হয়। তবে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিত্যপণ্য নিয়ে অভিযোগ জানাতে ৩৩৩ তে মঙ্গলবার রাতে কল দিলে সেবাদাতা কল রিসিভ করে জানান, সব পণ্যের বিষয় আমরা এখন অভিযোগ নেই না। শুধু আটটি পণ্যের ওপর অভিযোগ নিচ্ছি। আটটি পণ্য হলো- চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, খেজুর, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ ও চিনি। সকল পণ্যের জন্য এই সেল খোলা হলেও এখনো সকল পণ্যের জন্য অভিযোগ নেওয়ার এক্সেস দেওয়া হয়নি বলে জানান এই সেবাদাতা।

তবে এই আট পণ্য নিয়ে অভিযোগ দিলেও তাৎক্ষণিক প্রতিকার দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, আমাদের এখান থেকে অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। এরপর তদন্ত করে তারা ব্যবস্থা নেবেন। এই প্রক্রিয়া কত সময় লাগবে তাও জানা নেই। আর সব পণ্যের অভিযোগ রাখার জন্য আমাদের এখনো এক্সেস দেয়নি।

জানা যায়, ৩৩৩ তে কল দিলে এখন পর্যন্ত শুধু তারা পণ্যের দাম বলতে পারে। এছাড়া দাম বেশি নেওয়া বা নিত্যপণ্য নিয়ে অন্যান্য অভিযোগ দিলে তারা কিছুই করতে পারছে না।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩৩৩ সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিত্যপণ্যের অভিযোগ নেওয়ার জন্য ৩৩৩ জরুরি সেবা আমরা চালু করেছি। কিন্তু আমাদের এখানে অভিযোগ আসলে সমাধান করবে কে? বাজার দরে যদি কোনো সমস্যা হয়, সেগুলো ভোক্তা অধিকারের দায়িত্ব। তারা এগুলো সমাধান করবে। কিন্তু আমাদের কাছে আসা অভিযোগগুলো জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে পাঠানোর মতো কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। যার জন্য অভিযোগ সমাধানও করা যাচ্ছে না। আমরা শুধু কলদাতাদের বাজার দর জানাতে পারছি।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আপাতত অভিযোগদাতাদের ভোক্তা অধিদপ্তরের লিংক পাঠিয়ে দিচ্ছি। এতে অভিযোগদাতারা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে অভিযোগ দাখিল করবে। কিন্তু এখন লিংকে অভিযোগদাতা ভোক্তায় অভিযোগ করছে কি না তা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে কল আসছে, কল ধরছি। কিন্তু সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে সমন্বয় করিয়ে দেবে। কিন্তু তা কবে দেবে জানা নেই। এছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তরে গেলে তারা বলেছে ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হয়ে আসেন তাহলে আমরা কাজ করতে পারব।’

১৫ জানুয়ারির সভায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আপনি এটা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কথা বলেন। এ বিষয় আমার কিছু বলার নেই। এখনো তাদের কোনো সিদ্ধান্ত আমি পাইনি।’

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) মো. নাসির উদ্দিন তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটার কাজ চলছে। সফটওয়ারের কাজ পুরোপুরি ফাইনাল হয়নি। যারা সফটওয়ার ডেভেলপ করছে তারা পুরোপুরি এখনো শেষ করেনি। সফটওয়ারে একটা ড্যাশবোর্ড করা হবে, এখানে টিসিবির ডাটাগুলো থাকবে। পণ্যমূল্য কোথাও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখলে তখন ৩৩৩ তে কল দিলে সফটওয়ারের মাধ্যমে টিসিবির মূল্য দিতে পারবে কলদাতাকে। আর অভিযোগ দিলে তার সকল তথ্য সফটওয়ারে থাকবে। তবে এই কাজ এখনো মধ্যম পর্যায় আছে।’

এই কাজ বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইআইটি-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ দাউদুল ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তাকে অন্তত ১০বার কল ও হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।

ওই সেবা চালুর অগ্রগতি জানতে চাইলে এই কমিটির প্রধান মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয় মিডিয়ায় আমারে কথা বলার পারমিশন দেওয়া হয়নি।’

(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/টিআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :