গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও, উপজেলা পরিষদ ঘেরাও

জামালপুরের মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা করে কয়েক হাজার গ্রাহকের আত্মসাৎ করা প্রায় হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন গ্রাহকরা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে তিনটা পর্যন্ত চলে এই কর্মসূচি।
এর আগে বালিজুড়ী বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন গ্রাহকরা। এরপর সেখান থেকে কয়েক হাজার গ্রাহক একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমবেত হন। উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে তারা জমাকৃত অর্থ ফেরতের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখা হয় মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ।
জেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জে ১৬৩টি সমিতির নিবন্ধন আছে। ২০২২ সাল থেকে বিভিন্ন কারণে ৭৪টি সমিতির কার্যক্রম বন্ধের পথে। উদ্যোক্তারা প্রায় কার্যক্রম বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এসব সমিতির মধ্যে ২৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা সমবায় কার্যালয়। ২৩টি সমিতির উদ্যোক্তাদের কাছে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা থাকার কথা বলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধুন অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোতে জমা আছে।
এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন। ফলে টাকার পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সমবায় সমিতির কর্ণধাররা আত্মগোপনে যাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ থানা ও জামালপুরের আদালতে একাধিক মামলা করেছেন তারা। জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
সমবায় সমিতির নিবন্ধন খুলে উচ্চ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে শতদল, আল আকাবা, নবদ্বীপ, আশার আলো, পরশমণি, আল আকসা, স্বদেশ, সোনালীসহ কয়েকটি সমবায় সমিতি মাদারগঞ্জের কয়েক হাজার মানুষের হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করে আটকে রেখেছে।
সমিতিতে গ্রাহকদের কেউ তার মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল, কেউ রেখেছে প্রবাসে সন্তানের কষ্টে উর্পাজিত টাকা। মামলা করে ও বিষয়টি বার বার উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে জানানোর পরেও কোনো সমাধান পাননি তারা। এছাড়া হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের।
তাই অতিদ্রুত আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন বক্তারা। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে মাদারগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহকে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
(ঢাকাটাইমস/৪ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন