ওসি মোক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত

রাজধানীর কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুল ওয়াদুদ আনা কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনটি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদরদপ্তরে হেডকোয়ার্টারে জমা দিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদরদপ্তরের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গত ২ মে বাসায় ঢুকে ভাঙচুর ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ওসি মোক্তারুজ্জামান ও উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন ড. আব্দুল ওয়াদুদ। পরবর্তীতে ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জিসানুল হক বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান। সম্প্রতি তিনি তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপিতে জমা দিয়েছেন।
ডিএমপির সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি, আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজে ও যাবতীয় তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার সময় থানায় উপস্থিত না হয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করায় মোক্তারুজ্জামান দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় টিম ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল উদ্দিনের অপেশাদারিত্বের বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আবদুল ওয়াদুদের বাসায় বহিরাগতরা প্রবেশ করে যে মব তৈরি করেছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন এসআই বেলাল উদ্দিন।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি জোনের এডিসি জিসানুল হক বলেন, এ ঘটনায় নিরপরাধ কোনো পুলিশ সদস্য যেন ভুক্তভোগী না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওসি মোক্তারুজ্জামানের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে কলাবাগান থানার সাবেক ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, “আমি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। সেদিন মধ্যরাত হওয়ায় আমি বাসায় ছিলাম। অভিযোগকারী কেন আমার নাম উল্লেখ করেছেন, তা বুঝতে পারছি না। আমি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।”
অভিযোগপত্রে যা আছে অভিযোগপত্রে বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুল ওয়াদুদ উল্লেখ করেন, কলাবাগান থানা পুলিশের এসআই বেলাল ও মান্নান তাকে থানায় না নেওয়ার শর্তে ১ কোটি টাকা দাবি করেন। পরে দেন-দরবারে ২ লাখ টাকা পরিশোধ করলে সাময়িকভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাকি টাকা পরিশোধের শর্তে তিনজন ডিবি পরিচয়ধারী সিভিল পোশাকের ব্যক্তি তার বাসায় পাহারায় থাকেন।
তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ওই সময় তার বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ সদস্যরা বিদেশি দুর্লভ পাখি— ম্যাকাও, কাকাতুয়া, রেইনবো লরি, একটি গর্ভবতী হরিণ (যা পুলিশের আতঙ্কে ছোটাছুটি করে মারা যায়), কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। অভিযানের সময় কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট বা কাগজপত্রও দেখানো হয়নি বলে জানান তিনি।
অভিযোগে মোক্তারুজ্জামান ও বেলালের নাম উল্লেখ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিলেন আবদুল ওয়াদুদ। পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি।
পরে ৫ মে ওসি মোক্তারুজ্জামান এবং উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল উদ্দিন ও মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এলএম)

মন্তব্য করুন