ভারতে বিমান দুর্ঘটনার ৪ দিন পরই ছুটিতে গেলেন ১১২ পাইলট!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:৫১| আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৪:৩২
অ- অ+

ভারতের এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার চার দিন পর প্রতিষ্ঠানটির ১১২ জন পাইলট চিকিৎসাজনিত ছুটিতে গেছেন। দেশটির কনিষ্ঠ বিমান পরিবহনমন্ত্রী মুরলিধর মোহল এই তথ্য জানিয়েছেন।

লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আহমেদাবাদে মাঝআকাশে ইঞ্জিন থ্রাস্ট হারিয়ে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে একটি ছাত্রাবাসে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত হন।

মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনার দিনই ৫১ জন কমান্ডার ও ৬১ জন ফ্লাইট অফিসার ছুটির আবেদন করেন। এই ঘটনার মাধ্যমে পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব আবারও সামনে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব এয়ারলাইন্সকে পাইলটদের জন্য “দ্রুত ও কার্যকর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা” চালু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট ক্রু এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের মানসিক চাপ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ মডিউল চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সহকর্মীভিত্তিক সহায়তা গ্রুপ গঠনের পরামর্শও দেওয়া হয় যাতে সংকটে থাকা কর্মীদের চিহ্নিত ও সহায়তা করা যায়।

এদিকে বুধবার এয়ার ইন্ডিয়াকে চারটি শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ডিজিসিএ)। এগুলো পাঠানো হয় ক্রুদের ক্লান্তি, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা মান লঙ্ঘনের অভিযোগে, যা গত এক বছরে এয়ার ইন্ডিয়ার স্বেচ্ছায় দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত।

এ বিষয়ে এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এসব নোটিশ পেয়েছি এবং যথাযথভাবে জবাব দেব। যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি রয়েছে।”

গত ছয় মাসে নিরাপত্তাজনিত নানা কারণে এয়ার ইন্ডিয়া মোট ১৩টি শোকজ নোটিশ পেয়েছে।

বোয়িং ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি একাধিক ঘটনা ঘটেছে এয়ার ইন্ডিয়ায়—

মঙ্গলবার: হংকং থেকে দিল্লিগামী এয়ারবাস A321 বিমানের এপিইউতে আগুন ধরে। অবতরণের পর আগুন লাগলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

সোমবার: কোচি-মুম্বাই ফ্লাইট রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে; ইঞ্জিন কাভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একই দিন: দিল্লি-কলকাতা ফ্লাইট টেকঅফের ঠিক আগে উড্ডয়ন বাতিল করে।

বৃহস্পতিবার: দিল্লি-মুম্বাই এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট টেকঅফ বাতিল করে স্পিড মনিটর স্ক্রিনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায়।

এই ধারাবাহিক দুর্ঘটনার পেছনে মূল প্রভাব ফেলেছে ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনা, যা উড্ডয়নের ৩২ সেকেন্ডের মাথায় বিধ্বস্ত হয়।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিমানের দুটি ফুয়েল সাপ্লাই সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’ অবস্থায় চলে যায়, যার ফলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে পড়ে।

এই সুইচগুলো সাধারণত একসাথে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ হওয়ায় জল্পনা শুরু হয়— এটি কি ইচ্ছাকৃত ছিল?

একটি অনিরীক্ষিত অডিও ক্লিপে পাইলটদের মধ্যে কথোপকথনের অংশ সামনে আসে, যেখানে একজন প্রশ্ন করেন, “তুমি কি ফুয়েল সাপ্লাই বন্ধ করেছো?” আর অপরজন বলেন, “না।”

তবে ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো এবং সরকার উভয়েই এই অডিও এবং মিডিয়া রিপোর্টকে “ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB), যারা ভারতকে তদন্তে সহায়তা করছে, তারাও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনা করে।

এই ঘটনার পর সব এয়ারলাইন্সকে বোয়িং বিমানের ফুয়েল সাপ্লাই সুইচ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা দ্রুতই পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং কোনো ত্রুটি পায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৬ জুলাই/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিয়ের দেড় মাস পর স্বামী বুঝতে পারলেন তার স্ত্রী পুরুষ!
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে দলগুলোর নেতারা কী বললেন
চুয়াডাঙ্গায় দিনমজুরকে গলা কেটে হত্যা
মা হারালেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সেক্রেটারি উজ্জল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা