শেষ সময়ে পশুর হাটে দামের ওঠানামা

মোসাদ্দেক বশির, জহির রায়হান, আব্দুল আউয়াল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:৩৪ | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৪২

শেষ সময়ে রাজধানীর হাটগুলোতে কোরবানির পশুর দামে ক্ষণে ক্ষণে ওঠানামা দেখা গেছে এবার। গত কয়েক দিন গরুর বাজার মন্দা থাকলেও গতকাল বিকাল থেকে দাম বাড়তে থাকে। এত দিন যারা গরু বিক্রি করেননি, শেষ সময়ে এসে ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা। প্রায় সব হাটেই ছোট গরুর চাহিদার তুলনায় বড় গরুর চাহিদা কম বলে জানিয়েছেন ব্যাপারিরা। বড় গরুতে তাই লোকসান গুনেছেন অনেকে।

এবার রাজধানীর হাটগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, একেক সময় একেক হাটে দামের ওঠা-নামা। গতকাল বিকেলের পর প্রায় সব হাটে দাম চড়া গেলেও আজ সকাল থেকে কোনো হাটে দাম স্বাভাবিক তো কোনো হাটে চড়া। আবার কোনো হাটে দাম পড়ে গেছে।

রাজধানীর পশুর হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হাটে আসা অধিকাংশ ছোট গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বড় গরু নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ হাটেই গরুর সংখ্যা কমে এসেছে।

রাজধানীর গাবতলী, শনির আখড়া, কমলাপুর, খিলক্ষেত-বসুন্ধরা ৩০০ ফুট হাট ঘুরে এবং ব্যাপারি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গরু বিক্রিতে মন্দাভাব ছিল। তবে সময় যত গড়াতে থাকে গরুর দাম বাড়তে থাকে। আগেভাগে গরু বিক্রি না করে যারা অপেক্ষা করেছেন দাম পাওয়ার জন্য, তারা লাভের মুখে দেখেছেন। আবার কোথাও কোথাও আরো বেশি দাম পাওয়ার জন্য যারা গরু বিক্রি করেননি, তারা আটকে গেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর প্রায় সব গরুর বাজার ছিল চড়া। দুপুরে যে গরু ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটিই রাতে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। অনেক ব্যাপারিকে আরো বেশি দাম হাঁকতে দেখা গেছে। এই ধারা আজ শুক্রবার কোথাও সকাল, কোথাও দুপুর ১২টা পর‌্যন্ত দেখা যায়। এরপর আবার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দুপুর দুইটার দিকে গাবতলীতে ট্রাক ভর্তি গরু আসতে দেখা গেছে।

জামালপুর থেকে ২২টি গরু নিয়ে ৩০০ ফুট হাটে আসা এক ব্যাপারির সঙ্গী আবছার মিয়া বলেন, গত মঙ্গলবার এই হাটে আসেন তারা। বৃহস্পতিবার সকাল পর‌্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি দাম না পাওয়ায়। এতে তারা অনেকটা হতাশ ছিলেন। তবে গতকাল দুপুরের পর কিছুটা কাঙ্ক্ষিত দাম পেতে থাকেন তারা। এরপর থেকে শুক্রবার দুপুর পর‌্যন্ত ১৭টি গরু বিক্রি হয়েছে তাদের। লাভ না লোকসান হয়েছে জানতে চাইলে একগাল হেসে তিনি বলেন, ‘ব্যাপারি সাব বলতে পারবে।’

তবে ক্রেতারা বলছেন, গতকালের চেয়ে আজ গরুর দাম বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার যে গরু বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়, তা আজ সকালে বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ হাজারে।

কমলাপুর গোপীবাগ হাটে সিরাজগঞ্জ থেকে ৩৮টি গরু নিয়ে এসেছিলেন আমজাদ হোসেন। তার দাবি, সব কটি গরু বিক্রি হলেও লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। গতকাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বাজার ভালো ছিল। তবে আজ আবার বাজার পড়ে গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১২টি গরু নিয়ে এসেছিলেন আরমান। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৮টি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, ‘গতকাল যে কয়টি বিক্রি করেছি তাতে লাভ হয়েছে। তবে আজ আবার কম দাম বলছে। কাল ঈদ বাড়ি যেতে হবে। কম দামেই ছেড়ে দিতে হবে।’

গাবতলী হাটে কুষ্টিয়া থেকে ১১টি গরু নিয়ে এসেছেন আক্তার হোসেন। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চারটি বিক্রি করেছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার গরু গড়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে দাম। কিন্তু যে দামে কিনে এনেছি সেই দামই বলছে না ক্রেতারা।’ তিনি বলেন, কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে গরু ফেরত নিয়ে যাবেন।

সাভারের ডাব্লিউ এগ্রো লিমিটেড ১৬টি গরু নিয়ে এসেছে গাবতলীতে। প্রতিটি গরুর দাম তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘এখানে ছোট গরুর চাহিদা রয়েছে। এ বছর বড় গরুর চাহিদা কম। এ পর্যন্ত লোকসান দিয়ে তিনটি গরু বিক্রি করেছি।’

আজিজুল ইসলাম ১৮টি গরু নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে গাবতলীতে এসেছেন। তার প্রতিটি গরুতে ৩ লাখ টাকা করে খরচ গেছে। প্রতিটি গরুতে ১৮ থেকে ২০ মণ করে মাংস হবে। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছে দুই লাখ টাকা করে।

পাবনা থেকে আলিম নামের একজন ব্যাপারি ৬৪টি ভারতীয় মহিষ এনেছেন। শুক্রবার দুপুর পর‌্যন্ত তার আটটি মহিষ অবিক্রীত রয়েছে। তবে যেগুলো বিক্রি করেছেন তাতে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি জানান, গড়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে প্রতিটি বিক্রি করেছেন।

গাবতলীতে চারটি উট ও পাঁচটি দুম্বা এনেছিলেন আমজাদ হোসেন। তিনটি উট বিক্রি করেছেন। প্রতিটি বিক্রি হয় আট থেকে ১০ লাখ টাকায়। দুম্বা বিক্রি করেছেন গড়ে আড়াই লাখ টাকা করে।

(ঢাকাটাইমস/১সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :