সুপ্রিম কোর্টও কব্জায় নিতে চায় সরকার: প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ মে ২০১৭, ১৭:৫৩ | প্রকাশিত : ২৩ মে ২০১৭, ১১:৫৯
ফাইল ছবি

‘অধঃস্তন বিচার বিভাগ কব্জা করে নিয়েছে সরকার। এখন সপ্রিম কোর্টকেও নিয়ে নিতে চাচ্ছে।’

ষোড়শ সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়ার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন।

এছাড়া রাষ্ট্রপতি বিচারককে অপসারণ করতে পারেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আসন ছেড়ে উঠে গেছেন।

আগামীকাল বুধবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় মামলাটি এক নম্বরে রয়েছে। আগামীকালও এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবারের শুনানির শেষ পর্যায়ে সোয়া ১টার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল তার লিখিত যুক্তি উপস্থাপনে বলেন, ‘রায়ে (হাইকোর্টের রায়ে) যে বিচারক লিখেছেন যে, সংসদ সদস্যদের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। যদি এটি প্রমাণিত না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তখন আপিল বিভাগ বলেন, এটা কী বললেন? এটা কি সম্ভব? অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এটা আপনি কী বললেন? বিচারককে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেই অপসারণ করতে পারেন।’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা আমার মতামত। আপনারা যদি কিছু বলতে চান এটার ব্যাপারে তাহলে সেটা বলতে পারেন। তা মামলার রায়ে সেটা রিফ্লেকশন হবে।’ এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা উঠে যাবো।’

এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল তার লিখিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছিলেন। শুনানির সর্বশেষ সময় যখন সোয়া ১টা বেজে গেছে, সে সময় সাধারণত কোর্ট নেমে যাওয়ার কথা, ওই সময়েই তার (অ্যাটর্নি জেনারেল) লিখিত যুক্তিতর্কের একটি জায়গায় মন্তব্য করেছেন, রায়ে যে বিচারক মন্তব্য করেছেন, সংসদ সদস্যদের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। এগুলো যদি প্রমাণিত না হয়, তবে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তখন প্রধান বিচারপতি জানতে চেয়েছেন, এটা কিভাবে সম্ভব। বিচারককে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেই অপসারণ করতে পারেন? এই নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এটা আমার বক্তব্য, আপনারা যদি কিছু বলতে চান এটা ব্যাপারে তাহলে সেটা বলতে পারেন। তা মামলার রায়ে সেটা রিফ্লেকশন হবে। যখন এই আলোচনা এসেছে, তখন আদালত বলেছেন, আমরা এখন উঠে যাবো।’

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, ‘আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি সরিয়ে দিতে পারেন। এটা আগেও দিয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত আছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিই পরবর্তী সময়ে মার্শাল ল এর প্রধান অ্যাডমেনিস্ট্রেটর হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সংবিধান সাসপেন্ড (অপসারণ) করেছেন এবং শপথ ভঙ্গ করেছেন। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এখানে ভারসাম্য আনা হয়েছে।’

শুনানিতে বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলনতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

শুনানির এক পর্যায়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘অধঃস্তন বিচার বিভাগ কব্জা করে নিয়ে নিচ্ছেন। এখন চাচ্ছেন সপ্রিম কোর্টকে নিয়ে নিতে। ১১৬-এর (অনুচ্ছেদ) বিষয়ে আমাদের অভিমত কী ছিল? আপনিতো স্বাধীন বিচার বিভাগ চান।’

অ্যাটর্নি জেনারেল- অবশ্যই চাই।

আপিল বিভাগ- তাহলে অধঃস্তন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকলে কী করে হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল-এটা অন্য কথা।

আপিল বিভাগ- ৮০ ভাগ বিচারক অধঃস্তন আদালতে। ওখানে কার্যত সপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বললে এটাও উঠবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল- আপনিতো ভাস্কর্য করেছেন। এটা নিয়েও তো ইস্যু হয়ে গেছে।

আপিল বিভাগ- আপনি এরসঙ্গে ওটা টানবেন না। সুপ্রিম কোর্ট, অধঃস্তন আদালত পঙ্গু হয়ে গেছে। একারণে বলতে বাধ্য হচ্ছি।

অ্যাটর্নি জেনারেল- বিচারপতি মোস্তফা কামালের চেতনার সঙ্গে আমাদের কিছু পার্থক্য ছিল। তিনি মাসদার হোসেনরের মামলায় রায় দিয়ে গেছেন। ১১৬ তো ভিন্ন বিষয়।

আপিল বিভাগ- একটা জেলায় পাঁচ মাস জেলা ও দায়রা জজ নেই। বিচার বিভাগ কী রকম কার্যকর হচ্ছে? এখন বিচার বিভাগ কার্যকর হচ্ছে কী না। জেলা জজ না থাকলে বিচার বিভাগ কার্যকর হবে কী না।

অ্যাটর্নি জেনারেল-এটা আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয়।

আপিল বিভাগ- আপনার জবাব হলো, এটা আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয়। উচ্চ আদালতের বিষয়টি সংসদে নিয়ে গেলেন। তাহলে আর কী থাকলো?

আপিল বিভাগ- ষোড়শ সংশোধনীর বিল নিয়ে বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল- হাইকোর্টের রায়ে কিছু কিছু মন্তব্য রুঢ় হয়ে গেছে। এগুলো বাদ দেবেন।

আপিল বিভাগ- আপনি কী বললেন। আপনি বললেন, রায় দেবেন আইনের বিধান দেখে। এটা কী বললেন। আমরা কি তা মাথায় না রেখেই রায় দেব। সব সময় সংবিধান বাঁচিয়ে রেখেই রায় দেয়া হয়। প্রত্যেকটি বাক্য, সেমিকোলন আলোচনা করেই রায় দিই।

অ্যাটর্নি জেনারেল- হাইকোর্টের রায়ের সংসদ সদস্যদের নিয়ে আপত্তিকর কথা বলা হয়েছে।

আপিল বিভাগ- আপত্তিকর মন্তব্য থাকলে সেটা বিবেচনা করা হবে। মন্ত্রী সাহেবরা অনেক কথা বলেন। যা আমরা হজম করছি, করতে পারি। আমি প্রধান বিচারপতি হিসেবে যা বলি তা বিচার বিভাগের জন্যই বলি। আপনারা মন্ত্রীর কথা হজম করতে পারবেন তো। আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচারকদের বেতন বেড়েছে। এটা হলেই কি বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়ে যায়? মন্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের বেড়েছে এক বছর আগে। আমাদের এক বছর পর।

অ্যাটর্নি জেনারেল- আমি আপনার সঙ্গে আছি। আমি বিচার বিভাগের সঙ্গেই থাকবো। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর যে বিতর্ক তা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা তৈরি হয়।

শুনানির এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ষোড়শ সংশোধনী যা করা হয়েছে সেটা ১৯৭২ সালের সংবিধান ছিল।

আপিল বিভাগ- এখন ওইসময় থেকে আর্থ সামজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭২ এর চিন্তা চেতনা থেকে ২০১৭ সালের চিন্তা চেতনা। পেছনে থাকবেন। সামনের দিকে তাকাতে হবে। সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানও পরিবর্তন হবে। এটা ব্যালাঞ্চ করতে হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল- এটা সামরিক আইন জারি মাধ্যমে হয়েছে। সেই সামরিক আইনের কলঙ্গ মুছে দিতেই ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে।

আপিল বিভাগ- ওই সময়েতো অনেক কিছু হয়েছে। যা এখন আপনারা সংরক্ষণ করছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল- ভালো কিছু থাকতে পারে। ডাকাতেরও কিছু ভালো গুণ থাকতে পারে। তাই বলে ডাকাতকেতো আর ভালো বলা যাবে না।

আপিল বিভাগ- ৭০ অনুচ্ছেদ কেন রেখেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল- এর একটি ইতিহাস আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হর্ষ ট্রেডিং হচ্ছে।

আপিল বিভাগ- তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না? তাহলে বিচারকদের ক্ষেত্রে হর্ষ ট্রেডিং হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কী না। আপনারা নিজ দলের সদস্যদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।

অ্যাটর্নি জেনারেল-এটা বলা ঠিক না।

আপিল বিভাগ- এটাই ঠিক। ৭২ এর সংবিধানের পর আইন কেন করেননি। পরিস্থিতি বুঝতে হবে। আপনারা কেন সংসদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আপনারা যদি সংসদ সদস্যদের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে বিচারকদের ক্ষেত্রে কিভাবে আস্থা রাখা যায়?

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/এমএবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

জি কে শামীমের জামিন ঘিরে আবারও প্রতারণা, এক সপ্তাহ নিষিদ্ধ আইনজীবী 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা

ধর্ষণ মামলায় মুশতাক-ফাওজিয়ার স্থায়ী জামিন

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

টিপু-প্রীতি হত্যাকাণ্ড: আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু

বিডিনিউজ সম্পাদক খালিদীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল দুদকের

পরীমনির আবেদনে পেছাল মাদক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা: পিনাকী ভট্টাচার্যকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট, মুশফিককে অব্যাহতি

আগামী সপ্তাহ থেকে আপিল বিভাগে দুই বেঞ্চে বিচারকাজ চলবে

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :