জাপানে ‘লিভ উইথ করোনা’, অর্থনীতিতে ধস

হাসিনা বেগম, জাপান
 | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০২০, ২২:৩১

জাপানে বর্তমানে প্রায়শই শোনা যাচ্ছে ‘লিভ উইথ করোনা’ বা করোনার সাথে বসবাস। অর্থাৎ জাপানিরা মনে করতে শুরু করে দিয়েছে যে, করোনা কে সাথে নিয়েই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে।

তাই জাপানে দ্বিতীয়বারের মতো আঘাত হানা করোনা সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিন রেকর্ড গড়ছে আবার পরেরদিনই তা ভাঙছে এবং নতুন করে আবার রেকর্ড গড়ার খেলায় মেতে উঠেছে। আর জাপানিরাও তাতে অভ্যস্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে যাচ্ছে। মুখে বলছে করোনাকে নিয়ে এবং করোনার সাথেই আমাদের জীবনকে মানিয়ে নিতে হবে অর্থাৎ ‘লিভ উইথ করোনা’।

দ্বিতীয় ধাক্কায় টোকিওতে করোনায় সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার হিসাব বেড়েই চলেছে। গত ১ আগস্ট ‘২০ শনিবার টোকিওতে ৪৭২ জন করোনাতে সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার রেকর্ড করা হয়েছে যা ইতোপূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। একদিনে জাপান ব্যাপী সর্বোচ্চ চিহ্নিত হওয়ার সংখ্যাটিও কম নয়। ৭ আগস্ট শুক্রবার জাপানব্যাপী সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫৮৭ জন কোভিড ১৯ এ আক্রান্তে শনাক্ত হন। ৩১ জুলাই সর্বশেষ ১৯৮২ জনের রেকর্ড করা হয়।

সত্যি বলতে জাপানে দ্বিতীয় দফায় করোনা মারমুখী এবং বিধ্বংসী হয়ে ফিরে আসলেও সাধারণ জাপানিদের মধ্যে তেমন কোন ভীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জীবিকা নির্বাহে। সাবধানতা শুধু মুখে মাস্ক এবং শপিং সেন্টারগুলোতে পেমেন্ট করার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চিহ্নিত স্থানগুলোতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। আরও একটি বিষয়ে তাদের মানতে দেখা যায়। তা হলো সেনিটাইজার ব্যবহার করা।

সকালে অফিসে যাওয়ার সময়ে কোন বিদেশিকে যদি জাপানের রেল স্টেশনগুলোতে দাঁড় করিয়ে রাখা যায়, তাহলে তিনি বুঝতেই পারবেন না যে, জাপানে করোনা দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন চিহ্নই তিনি খুঁজে পাবেন না অফিসগামীদের ভিড় দেখলে।

জাপানিরা মনে করেন করোনা মহামারি হলেও এটি অন্যান্য অসুখের মতো স্বাভাবিকভাবে স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। আর দুইদিন আগে বা পরে এর ভ্যাকসিনও বের হবে। তবে কবে নাগাদ বের হবে তার নিশ্চয়তা যেহেতু নেই, সেহেতু সে আশায় বসে না থেকে করোনাকে নিয়েই স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্থ হওয়াটাই সমীচীন মনে করছেন অনেকে।

তবে জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে অবস্থিত দুটি মার্কিন নৌঘাঁটি লকডাউন করা হয়েছে। আক্রান্ত সব সদস্যকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। অন্য সেনাদের মাঝে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া রোধে দ্বীপ এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।

৯ আগস্ট ওকিনাওয়াতে এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ১৫৯ জনের করোনা আক্রান্তের ঘটনা। এ নিয়ে ওকিনাওয়াতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১,১১১ জনে।

জাপান সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, ওকিনাওয়া দ্বীপে ঘাঁটি দুটিতে অন্তত ৬২ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৩৯ জন নৌ-সৈনিক এবং অন্যরা ক্যাম্পে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ঘাঁটিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। ঘাঁটিতে যাতায়াত বা সেখান থেকে কারো বের হওয়া বন্ধ করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত ওসাকা শহরজুড়ে।

জাপানজুড়ে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬,০৭৪ জন, সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৪০,০৮০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১,১০৩ জন।

আর টোকিওতে একই সময় মোট আক্রান্ত ১৭,৭১৪ জন এবং মৃত্যু ৩৪০ জন।

(সূত্র উইকিপিডিয়া ১৭ আগস্ট ‘২০ রাত ৭,৩০)।

এদিকে জাপানের অর্থনীতির এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এ বছরের দ্বিতীয় চতুর্ভাগে সেখানে জাতীয় প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পতন হয়েছে শতকরা ২৭.৮ ভাগ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জাপানে এই রেকর্ডের পতন খুব দ্রুত হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এই পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। করোনা সঙ্কট শুরুর আগে থেকেই কম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করছিল জাপান। তার ওপর এই সঙ্কট সেখানে বড় প্রভাব ফেলেছে।

বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলা করছে জাপান। শুধু জাপানই নয়, সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :