ষষ্ঠবারের মতো নাসা স্পেস অ্যাপস চালেঞ্জের আয়োজন করল বেসিস

টানা ষষ্ঠ বারের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর তত্ত্বাবধানে এবং বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের সহায়তায় শুরু হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসার উদ্যোগে আয়োজিত নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২০।
প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাসহ সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করাই হলো এই প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য।
নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ২৫০টি শহরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে, যেখানে বেসিস বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে) বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চলেছে।
আগামী ২ থেকে ৪ অক্টোবর এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে এবার ৫০ লাখ শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি ১ লাখ শিক্ষার্থীদের সরাসরি এ প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, এবার ষষ্ঠবারের মতো আমরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। বাংলাদেশ কিন্তু ইতিমধ্যেই নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিতে পেরেছে। এছাড়া বাংলাদেশ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফল করছে। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশ এ প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু এই প্রতিভার সঠিক প্রতিপালন দরকার। তার একটি উপায় হচ্ছে এসব প্রতিযোগিতা। আমাদের ছেলেমেয়েদের সৃষ্টিশীল করে তৈরি করতে হবে। এই সৃষ্টিশীলতা এবং তাদের প্রতিভা মিলিতভাবে তাদেরকে ভবিষ্যতে সফল হতে সাহাজ্য করবে। নাসা এর রকেটগুলো যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয় তার উপর ভিত্তি করেই নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকে। এই প্রতিযোগিতা থেকে যে সমাধানগুলো আসে তার অনেকগুলোই নাসা তাদের রকেটে ব্যবহার করে থাকে। আমি আশা করি আসছে বছরগুলোতে আমরা দেখব আমাদের ছেলেমেয়েদের দেয়া সমাধান নাসা ব্যবহার করছে। আমি সাংবাদিক ভাইদেরকে বলব আমাদের ছেলেমেয়েদের সাফল্যগুলোকে আমাদের জনসাধারনের সামনে উপস্থাপন করতে। যার ফলে দেশীয় পণ্যের উপর মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের মধ্যে মেধা সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমরা সস্তা শ্রমিক সরবরাহের যে ব্র্যান্ডিং এর জন্য বিশ্বেব্যাপি পরিচিত সেটা পরিবর্তন করে দক্ষ জনশক্তির দেশ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে হবে।
বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন,গত ৪ বছর ধরেই এই প্রতিযোগিতাটি কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। যেকোনো প্রতিযোগিতা আমাদের নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরার সুযোগ করে দেয়। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ এর মাধ্যমে বেসিসের জানার সুযোগ হয়েছে যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা এই শিল্পে আসবে তারা কেমন হবে। গতবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে একটি দল এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন না হলে আমরা জানতাম না যে আমাদের দেশে এমন প্রতিভা আছে। এই ধরনের প্রতিযোগিতায় যত বেশি অংশগ্রহণ করবে ততবেশি শেখার সুযোগ আছে, আছে নেটওয়ার্কিং করার জায়গা। আর এই শিক্ষা গতানুগতিক কোন শিক্ষা নয়। এছাড়া এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের এই শিল্পটি দৃশ্যমান হয়। এবার যেহেতু প্রতিযোগিতাটি ভার্চুয়ালি আয়োজিত হচ্ছে, সেহেতু এটা মেয়েদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়লে আমাদের প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা সার্থক হবে।
বেসিস পরিচালক ও নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২০ এর আহ্বায়ক দিদারুল আলম বলেন, প্রতিবারের মতো এবারো বেসিস নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২০ আয়োজন করতে যাচ্ছি। কিন্তু এবারের আয়োজন একটু ব্যতিক্রম হবে। অন্যান্য বারের মতো এবার আমরা সরাসরি ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভেশন করতে পারছি না। এবার শুধু বাংলাদেশেই নয় পুরো বিশ্বেই প্রতিযোগিতাটি ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হবে। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ সারা দেশে ছড়িয়ে পরার পেছনে রয়েছে সাংবাদিক ভাইদের আবদান। আমরা আশা করছি অন্যান্যবারের মতো এবারো আপনারা এই প্রচারণার কাজটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করবেন। আমরা সবাই মিলে এই ইভেন্টটিকে সফল করতে চাই।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ এর যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল হাসান অপু বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যকাথন। এবার এটি ভার্চুয়ালি হলেও আগের কর্মকাণ্ডগুলো করার ইচ্ছা আমাদের আছে। অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আমাদের ভার্চুয়াল বুটক্যাম্প করার ইচ্ছা আছে। আমি আশা করছি এবারো বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেশকে উপস্থাপন করবে। আমরা আরো আশা করছি আমাদের দলগুলো এবারো ভালো করবে।
মাহদি-উজ-জামান, অ্যাডভাইজার, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ এবং ফাউন্ডার, ক্লাউড ক্যাম্প বলেন, গণমাধ্যমের কারণেই বাংলাদেশে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ এর নাম ছড়িয়ে পরেছে। গত বছর পুরো বিশ্বে ২৯,০০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে এই প্রতিযোগিতায়। বাংলাদেশ থেকে পরপর ২ বছর চূড়ান্ত পর্যায়ে মনোনয়ন পেয়েছিল। নাসা মানে আপনাকে বর পরিসরে চিন্তা করতে হবে। নাসার ৬টি ক্যাটাগরির মধ্যে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা যাবে কিন্তু সমস্যাটি অবশ্যই বড় হতে হবে। এছাড়া সমস্যার সমাধান উপস্থাপন এবং এটা নিয়ে তৈরি ভিডিওটি উপস্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসা এবার বাংলাদেশের মূল্যায়ন করার পদ্ধতি অনুসরণ করবে। এবার সবকিছু মূল্যায়ন করা হবে ভার্চুয়ালি। এর জন্য একটি প্লাটফর্ম থাকেবে যার নাম হচ্ছে “স্লাক”। এই প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে প্রতিযোগীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। নির্বাচিত দলগুলোকে সহায়তা করার জন্য পরামর্শদাতা নিযুক্ত করা হবে। এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অন্যান্য দেশের সাথে একি কাতারে নিয়ে যাওয়া।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালঞ্জ ২০২০-এ অংশগ্রহণের জন্যে রেজিষ্ট্রশন চলছে। রেজিষ্ট্রেশনের জন্যে ভিজিট করুন এই লিঙ্কে http://bsf.basis.org.bd/NASA-2020
(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/এজেড)

মন্তব্য করুন